কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজে ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মাত্র ৬৪ জন শিক্ষক। শিক্ষক-সংকটের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন সমস্যার কথা বলতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হবে, হয়ে যাচ্ছে—এভাবেই বর্তমান সরকারের তিন বছর চলছে; কিন্তু কলেজের সমস্যার সমাধান হয়নি।কলেজ সূত্র জানায়, বর্তমানে কলেজে ১৬টি বিভাগে স্নাতক (সম্মান), ছয়টি বিভাগে স্নাতকোত্তর, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক (পাস) পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে ১৪ হাজার। এনাম কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী মোট শিক্ষক থাকার কথা ১৭১ জন, কিন্তু রয়েছেন মাত্র ৬৪ জন।

শিক্ষক-সংকটে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে কলেজের অধ্যক্ষ মো. আরজ আলী জানান, শিক্ষক-সংকটের পত্রসহ শিক্ষক নিয়োগের তালিকা একাধিকবার ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

কলেজে স্নাতক ও উচ্চমাধ্যমিক বাদ দিয়ে সম্মান ও মাস্টার্সে সমাজকর্ম বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক হাজার ২০০, কিন্তু শিক্ষক মাত্র চারজন। আর এ বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে পাঠদানের জন্য বরাদ্দ আছে মাত্র দুটি কক্ষ। দর্শন, ইতিহাস ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের কোনো শ্রেণীকক্ষ নেই।সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ থেকে শুরু করে অসংখ্য কৃতী শিক্ষার্থীর প্রতিষ্ঠান গুরুদয়াল সরকারি কলেজটি ১৯৪৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮০ সালে এটিকে সরকারীকরণ করা হয়।

কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. ফজলুল হক জানান, সমাজকর্ম বিভাগে নিয়ম অনুযায়ী ১২ জন শিক্ষক থাকার কথা, কিন্তু এখনো প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষকের পদই সৃষ্টি করা হয়নি। এক হাজার ২০০ জন শিক্ষার্থীর জন্য দুটি ছোট্ট কক্ষ বরাদ্দ আছে। ফলে স্নাতক (পাস) ও উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কোনো শ্রেণীকক্ষ নেই।

উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রামচন্দ্র রায় জানান, সেই আশির দশকের উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক (পাস) শ্রেণীর বিজ্ঞানাগার দিয়ে কলেজের ব্যবহারিক ক্লাস চলছে। সম্মান ও স্নাতকোত্তর চালু হলেও বিজ্ঞানাগারের কোনো উন্নতি হয়নি।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুপাতে শতাধিক শ্রেণীকক্ষের প্রয়োজন হলেও আছে মাত্র ৩০টি। এগুলোর কোনো কোনোটির অবস্থা অত্যন্ত করুণ। কলেজে অন্তত আরও চারটি একাডেমিক ভবন ও একটি গ্রন্থাগার জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন।কলেজে কর্মরত প্রধান সহকারী মো. আবদুল হাই ও হিসাব সহকারী নিরঞ্জন চন্দ্র শীল জানান, স্বল্পসংখ্যক এ কর্মচারী দিয়ে কীভাবে যে কলেজের কাজকর্ম চলছে, সেটা আশ্চর্যের বিষয়। ভর্তি ও পরীক্ষার সময় দিন-রাত পরিশ্রম করেও তাঁরা কাজ সামলাতে পারছেন না।

কলেজের অধ্যক্ষ জানান, শিক্ষকের চেয়েও শ্রেণীকক্ষের সংকট তীব্রতর। ছাত্র বেশি হলে সে ক্ষেত্রে কক্ষ থাকলে একজন শিক্ষক একাধিক ক্লাস নিতে পারেন। তিনটি নতুন একাডেমিক ভবন ও একটি গ্রন্থাগার নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে পত্র পাঠানো হয়েছে।

-Prothom alo