আমরার তো ঘর থাকি পা রাখলেই হাওর। হাওর রক্ষা না অইলে বাঁচমু কেমনে? হাওর বাঁচাইয়া নিজে বাঁচব।’ কথাগুলো বলছিলেন হাকালুকি হাওরপারের ভুকশিমইল গ্রামের বাসিন্দা জমসেদ আলী (৩২)। হাওরের পরিবেশ-প্রতিবেশের গুরুত্ব সম্পর্কে কিছুদিন আগেও যাঁর তেমন ধারণা ছিল না, এখন তিনি বুঝতে পারছেন—বেঁচে থাকার জন্য খাওয়া-পরার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষাও জরুরি। জমসেদ আলীর মতো অভিমত হাকালুকি হাওরপারের আরও অনেকের। তাঁরা বলেন, হাকালুকি বাঁচাতে কোনো প্রকল্প নয়, ‘গ্রাম সংরক্ষণ দল’-ই এখন থেকে হাওর বাঁচাবে। হাকালুকি রক্ষায় গ্রামবাসীকে নিয়ে গঠিত ২৮টি গ্রাম সংরক্ষণ দলের এক সমাবেশে তাঁরা এসব কথা বলেন। সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে গতকাল সোমবার এ সমাবেশ হয়।

সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার এন এম জিয়াউল আলম, সিলেটের জেলা প্রশাসক আবু সৈয়দ মোহাম্মদ হাশিম ও মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়াছিন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক আবদুস সোবহান।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সিলেট ও মৌলভীবাজারের পাঁচটি উপজেলা নিয়ে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর আয়তনের হাকালুকি হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় হাওর। এখানে ৫২৬ প্রজাতির গাছ, ১০৭ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ ও ৫৫৮ প্রজাতির বন্য প্রাণী রয়েছে। কিন্তু প্রচলিত জলমহাল নীতিমালায় ইজারা পদ্ধতির কারণে নির্বিচারে গাছ কর্তন ও মাছ শিকারের ফলে হাওরের পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ১৯৯৯ সালে পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে হাকালুকিকে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করে পরিবেশ সংরক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। উপকূলীয় ও জলাভূমি জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের (সিডব্লিউবিএমপি) আওতায় এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। চলতি মাসে শেষ হচ্ছে এ প্রকল্পের মেয়াদ।

সমাবেশে উপস্থাপিত প্রকল্পের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাওরের প্রতিকূল পরিবেশ অনুকূলে আনতে সিডব্লিউবিএমপির মাধ্যমে গত এক দশকের চেষ্টায় হাওরপারের মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়েছে। হাকালুকি বাঁচাতে এখন আর কোনো প্রকল্পের দরকার নেই, গ্রাম সংরক্ষণ দলগুলোই এ হাওর বাঁচাবে। হাওরপারের ২৮ গ্রামভিত্তিক ২৮টি গ্রাম সংরক্ষণ দল এবং পরিবেশ সচেতনতায় ১১টি ইউনিয়ন, পাঁচটি উপজেলা ও দুটি জেলা কমিটি হাওরের সার্বিক পরিবেশ রক্ষায় নজরদারি করবে এবং তাদের সহায়তা করবে স্থানীয় প্রশাসন।প্রকল্প পরিচালক জাফর সিদ্দিক বলেন, ‘সংকটাপন্ন কোনো এলাকাকে এই প্রথম সাধারণ মানুষের হাতে ছেড়ে দেওয়া হলো। আশা করছি, সাধারণ মানুষের সচেতনতায় ধীরে ধীরে হাকালুকি আগের অবস্থানে ফিরে যাবে।’

-Prothom Alo