চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মহিউদ্দিনের চেয়ে ৮৮ হাজার ২০১ ভোটে এগিয়ে আছেন বিএনপি সমর্থিত মনজুর আলম।

এ পর্যন্ত ৬৭৩ কেন্দ্রের মধ্যে ৫৮০টির বেসরকারি ফলাফলে মনজুর পেয়েছেন চার লাখ ৬ হাজার ৫২০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী পেয়েছেন তিন লাখ ১৮ হাজার ৩১৯ ভোট।

মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী মহিউদ্দিন লড়ছেন জাহাজ প্রতীকে। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থক চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের প্রার্থী মনজুরের প্রতীক আনারস।

বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা জেসমিন টুলী ফলাফল ঘোষণা শুরু করেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তার অস্থায়ী কার্যালয় চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মিলনায়তনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টদের উপস্থিতিতে এ ফলাফল ঘোষণা করা হচ্ছে।

মহিউদ্দিনের পক্ষে নির্বাচনী ফলাফল নিতে সেখানে উপস্থিত আছেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা এসহাক মিয়া। মনজুরের পক্ষে আছেন তার প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়। নির্বাচনে সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। সময় বাড়ার সঙ্গে ভোট কেন্দ্রগুলোয় ভোটার সংখ্যা বাড়তে থাকে। এদের মধ্যে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো।

এই নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে দেশে প্রথমবারের মতো ই-ভোট চালু হয়েছে।

মহানগরীর জামালখান রোড এলাকার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটাররা পছন্দের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীকে ব্যালট পেপারে নয়; ইলেকট্রনিক মেশিনে সাটানো প্রতীকের পাশে বোতাম টিপে ভোট দিয়েছেন।

নির্বাচনে মেয়র পদে আটজন, ৪১টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৯ জন এবং ১৪টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৫৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মেয়র পদের অপর পাঁচ প্রার্থী হলেন- সৈয়দ সাজ্জাদ জোহা, মোহাম্মদ ইব্রাহীম, জানে আলম, মোফাজ্জল হোসেন ভূইয়া ও রফিকুল আলম। মহাজোটের অন্যতম শরীক জাতীয় পার্টির (এরশাদ) মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিনের পক্ষে সমর্থন ঘোষণা করলেও প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করায় ব্যালটে রয়ে গেছে সোলায়মান আলম শেঠ-এর নাম।

সিসিসির সর্বশেষ তালিকায় মোট ভোটার সংখ্যা ১৬ লাখ ৯৪ হাজার ৯৫৫।

সকালে ভোট দেওয়ার পর সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “আশা করছি, নগরবাসী আগের নির্বাচনের চেয়েও অনেক বেশি ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করে চট্টগ্রামকে একটি উন্নয়ন মডেল ও উন্নত নগরী হিসেবে গড়ে তোলায় সুযোগ করে দেবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ভোটের ফলাফল যাই হোক তা মেনে নেব।”

সকালে ভোট দেওয়ার পর সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র মনজুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আপাতত শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হচ্ছে। তেমন কোনো অভিযোগ পাইনি।”

তিনি আরও বলেন, “আমি আমার জয়ের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত।”

এক প্রশ্নের জবাবে মনজুর বলেন, “নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে ভোটের ফলাফল মেনে নেব।”

নির্বাচন উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগরীতে বৃহস্পতিবার ছিলো সরকারি ছুটি। ভোটকেন্দ্রসহ নির্বাচনী এলাকায় সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ২০ হাজার সদস্য নিয়োজিত আছে।

১৫ জুন মধ্যরাতে এ নির্বাচনের প্রচারণা শেষ হয়। ১৬ জুন মধ্যরাত থেকে অনুমোদিত ছাড়া সব ধরনের যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর আগে ১৪ জুন থেকে মটরসাইকেল চলাচলেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়।

নির্বাচনে একটি অস্থায়ী কেন্দ্রসহ মোট ভোট কেন্দ্র ৬৭৪টি; ভোট কক্ষ ৪ হাজার ৭৪৮টি। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ১৪ হাজার ৯১৮ জন। এর মধ্যে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ৬৭৪ জন, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ৪৭৪৮ জন এবং পোলিং কর্মকর্তা ৯৪৯৬ জন।

২০০৫ সালের ৯ মে সর্বশেষ সিসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী বিএনপি নেতা মীর মোহাম্মদ নাছিরউদ্দিনকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন।