লুই সুয়ারেজের জোড়া গোলে প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের শেষ আটে উঠেছে উরুগুয়ে।
শনিবারের প্রথম খেলায় তারা ২-১ গোলে হারায় এশিয়ার পরাশক্তি দক্ষিণ কোরিয়াকে। দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে একমাত্র গোলটি করেন লি চুং ইয়ং, খেলার ৬৭ মিনিটে।
গোটা ম্যাচে কোরিয়ানদের প্রাধান্য নিয়ে কারো দ্বিমত ছিল না। কিন্তু আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের ব্যর্থতার মাশুল দিতে হয় তাদের। বিপরীতে সুয়ারেজ এবং ডিয়েগো ফোরলানের কাছেই মূলত হেরে যায় কোরিয়ানরা। উরুগুয়ের এই দুই তারকা খেলোয়াড়ই ছিলেন জয়ের আসল কারিগর। আক্রমণ গড়েছেন ফোরলান আর গোল করেছেন সুয়ারেজ।
তবে নেলসন ম্যান্ডেলা বে স্টেডিয়ামে বেশ দারুণভাবেই খেলা শুরু করেছিল দক্ষিণ কোরিয়া। উরুগুয়ের গোলমুখে কয়েকটি আক্রমণও করেছিল। তা থেকেই ৪ মিনিটের মাথায় ডি-বক্সের বাইরে ফ্রি-কিক পায় তারা। কিন্তু দুর্ভাগ্য কোরিয়ানদের গোল থেকে বঞ্চিত করে। পার্ক চু ইয়ংয়ের ডান পায়ের জোরালো রঙধনু শট উরুগুয়ের গোলরক্ষক মাসলেরাকে পরাস্ত করলেও বারে লেগে বাইরে চলে যায়।
পরের মিনিটেই পাল্টা আক্রমণ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার গোলমুখে জটলা তৈরি হয়েছিল। তার ভেতর থেকে মাটি কামড়ানো শট নিয়েছিলেন উরুগুয়ের আক্রমণভাগের সেরা তারকা ডিয়েগো ফোরলান। তবে তার সে শট ধরে নেন কোরিয়ার গোলরক্ষক জুং সুং-রিয়ং।
তবে ৮ মিনিটের মাথায় দক্ষিণ কোরিয়া যে গোলটি হজম করে, তার জন্য গোলরক্ষকের পাশাপাশি গোটা রক্ষণভাগের দায় কম নয়।
বাঁ প্রান্ত থেকে গোলমুখে নিচু ক্রস করেছিলেন ফোরলান। সেই ক্রস ধরার জন্য গোলরক্ষক জুং সং পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে ডাইভ দেন। বল তার নাগালের বাইরে দিয়ে জমা পড়ে উরুগুয়ের লুইস সুয়ারেজের পায়ে। ফাঁকা পোস্টে সহজতম গোলটি করে যান তিনি। রক্ষণভাগের চার কোরীয় খেলোয়াড় তা কেবল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছেন।
গোল খেয়ে দক্ষিণ কোরিয়া নতুন উদ্যমে খেলার চেষ্টা করলেও তাদের অধিকাংশ আক্রমণই উরুগুয়ের রক্ষণ দেয়ালে বাধা পেয়ে ফিরে গেছে। বল দখলেও কোরিয়ানরা পিছিয়ে ছিল না। কিন্তু উরুগুয়ের রক্ষণভাগে তারা ফাটল ধরাতে পারছিল না।
তাই এক সময় দূরপাল্লার শটে গোল করার চেষ্টা করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রা। ৩১ মিনিটে পার্কের শট উরুগুয়ের পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। ৪০ মিনিটে আরেকটি দূরপাল্লার শট নিয়েছিলেন চা দু-রাই। সেটিও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। বিরতির আগে পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়া বেশ চাপিয়ে খেললেও গোল শোধ করতে পারেনি তারা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে খেলায় কোরিয়া একচেটিয়া আক্রমণ করে খেলতে থাকে। টানা আক্রমণে প্রায় কোণঠাঁসা করে ফেলে উরুগুয়েকে।
তাতে অন্তত দুটি সুযোগ নষ্ট করেন পার্ক চু। প্রথমবার লি ইয়ং পিওর নিচু ক্রসে পা ছোঁয়াতে পারেননি তিনি। দ্বিতীয়বার বক্সের ভেতর থেকে পোস্টের ওপর দিয়ে বল মারেন। ৫৮ মিনিটে অধিনায়ক পার্ক জি সুং যে হেড করেন তা লুফে নেন উরুগুয়ের গোলরক্ষক মাসলেরা।
শেষ পর্যন্ত ৬৭ মিনিটে কাক্সিক্ষত গোলটি পেয়ে যায় দক্ষিণ কোরিয়া। ফ্রি-কিক থেকে হেডে গোল করেন লি চুং ইয়ং। খেলায় সমতা ফিরে।
তবে তার দুমিনিট পরেই এগিয়ে যাওয়ার সহজ একটি সুযোগ নষ্ট করেন তিনি। গোলরক্ষককে একা পেয়েও তার হাতে বল তুলে দেন তিনি।
টানা ব্যর্থতার মাশুল গুনে দক্ষিণ কোরিয়া খেলার ৮১ মিনিটে। কর্নার কিক নিয়েছিলেন ফোরলান। সেটি পড়ে নিকোলাস লোদেরিওর পায়ে। তিনি সেটি বাড়ান সুয়ারেজের কাছে। চকিতে দু’জন খেলোয়াড়কে ডজ দিয়ে তিনি যে বাঁকানো শটটি নেন তা পোস্টে লেগে জাল স্পর্শ করে।
ব্যর্থতা অব্যাহত রেখে ৮৬ মিনিটে গোলের সহজতম সুযোগটি নষ্ট করেন দক্ষিণ কোরিয়ার লি ডং গুক। ফাঁকা পোস্টে তার দুর্বল শট গোলে ঢোকার আগ মুহূর্তে রক্ষা করেন উরুগুয়ের অধিনায়ক লুগানো। কোরিয়ানদের সব আশা শেষ হয়ে যায় তখনই।