ভাত-মাছ ছাড়া বাঙালি, এ এক অবিশ্বাস্য উপাখ্যান। চাই বা না চাই মাছে-ভাতে বাঙালির খাতি বয়ে বেড়াতেই হয়। নিখাঁদ বাঙালি, জন্ম কৃষকের ঘরে, অথচ জীবনে ছুঁয়ে দেখেনি ভাত-মাছ, এমন খবরে বিস্ময়ে হতবাক হতেই হয়। এমন বিরল একজন মানিকগঞ্জের চর গড়পাড়া গ্রামের দেলোয়ার। তিনি পেশায় চা বিক্রেতা। কৃষক রহম আলী বেপারীর ৩৬ বছর বয়সী সন্তান দেলোয়ার জন্মের পর থেকে আজ অব্দি শখ করে একমুঠো ভাতও মুখে তোলেননি। ভাত খাবার কথা ভুলেও মাথায় আনেননি। ইচ্ছেও হয়নি। দেলোয়ার আজও জানেন না ভাত-মাছের স্বাদ কেমন। শুধু ভাত আর মাছই নয়, চাল দিয়ে তৈরি কোনও খাবারই খান না তিনি।

মা টগরজান বেগম জানান, দেলোয়ার জন্মের পর থেকে ৯-১০ মাস বুকের দুধ খেয়েছে। ভাত খাওয়ানোর অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু কোনওভাবেই খাওয়াতে পারিনি। সে ভাত মুখেই নিত না। জোর করে দিলেও বমি করে ফেলে দিত। এভাবে দু বছর চেষ্টা করেছি। পারিনি। কিন্তু একদিন রুটি দিয়েছিলাম, সেটা সে অনায়াসে খেয়ে নিয়েছিল। যখন দেখলাম ভাত খায় না তখন তাকে আর জোর না করে রুটিই খেতে দিতাম।

বাড়ির সবাই ভেবেছিলেন বিয়েশাদি করলে হয়তো দেলোয়ারের এই অভ্যাস পাল্টে যাবে। শাশুড়ি যখন মেয়ের জামাইকে আদর করে খেতে দেবেন, তখন হয়তো না খেয়ে পারবে না। কিন্তু বিয়ের অনুষ্ঠানে দেলোয়ার ঠিকই জানিয়ে দিল সে ভাত খাবে না। তার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করতে হবে। সবার চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে দেলোয়ারের জয় হলো।

জন্ম থেকেই ভাত-মাছের সাথে যার আড়ি সেই দেলোয়ার জানান, ভাত-মাছ খাওয়ার কথা স্বপ্নেও কখনো ভাবি না। ভাতের কথা শুনলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। শুধু ভাত না, চালের তৈরি কোনও খাবারও আজ অব্দি খাইনি।

কেন তিনি ভাত-মাছ খান না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, কেন যে খেতে ইচ্ছে করে না আসলে এর কারণ আমি জানি না। তবে খেতে ইচ্ছে করে না। রুটি খেতে ভালো লাগে। তিনবেলাই রুটি খাই।

দেলোয়ার কেন ভাত-মাছ খেতে পারেন না, এর সঠিক কারণ চিকিৎসকরাও কিছু জানাতে পারেননি।

আশরাফুল আলম লিটন
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি