কিশোরগঞ্জ: ইভটিজিঙের অভিশাপ থেকে রার জন্য বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ঈদুল আজহার ঐতিহাসিক ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়।

বুধবার সকাল ৯টায় উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় এখানে। এ ঈদ জামাতে ইমামতি করেন ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (একাংশের) মহাসচিব মাওলানা মোঃ ফরিদউদ্দিন মাসউদ।

মহিলাদের জন্য পৃথক একটি বিরাট জামাতও অনুষ্ঠিত হয় কিশোরগঞ্জ এসভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। এতে ইমামতি করেন মাওলানা মোহাম্মদ ছানাউল্লাহ।

এদিকে, শোলাকিয়ার ঈদ জামাতে আসা মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বুধবার কিশোরগঞ্জ-ভৈরব ও কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে ২টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়।

ঈদ জামাতের পাশাপাশি শোলাকিয়ার ঈদগাহ মাঠের পার্শ্ববর্তী এলাকায় আয়োজন করা হয় ঈদমেলার। স্থানে স্থানে নির্মিত হয় তোরণ, রাস্তার দু’পাশে টাঙানো হয় রঙবেরঙের পতাকা ও ব্যানার।

বিশ্ব মানবতার শান্তি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং ইভটিজিঙের অভিশাপ থেকে রার জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয় ঈদের নামাজ শেষে। এছাড়াও দেশ-জাতির উন্নতি, সমৃদ্ধি এবং মুসলিম উম্মাহর সংহতি ও ঐক্য কামনা করে দোয়া করা হয়।

পাকিস্তানের মোঃ ইছহাক (৬০), ময়মনসিংহের গৌরিপুর উপজেলার রফিকুল ইসলাম (৫৫), নেত্রকোনার মদন উপজেলার হারেছ (৪৫),  টাঙ্গাইল থেকে আসা অধ্যাপক মফিজুর রহমানের (৫০) সঙ্গে কথা হয় এখানে। এমন আরও অনেক লোকের দেখা মেলে যারা দীর্ঘদিন থেকে এখানে নামাজ পড়তে আসেন।

এছাড়া জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিক, এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ অসংখ্য মুসল্লি শোলাকিয়া মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেন।

স্থানীয় ও মুসল্লিদের অভিযোগ, শোলাকিয়া ঈদগাহটি ঐতিহ্যের তুলনায় উন্নয়ন ও সংস্কারের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। শোলাকিয়া ঈদগাহকে শোলাকিয়া আন্তর্জাতিক ঈদগাহ নামকরণ ও মুসল্লিদের সুবিধার্থে মাঠের পরিসর বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবি দীর্ঘদিনের।

জনশ্রুতি আছে, এ মাঠে পরপর তিনটি ঈদের জামাত আদায় করলে এক কবুল হজ্বের সওয়াব পাওয়া যায়। সে জন্য শোলাকিয়া মাঠ গরিবের মক্কা নামে পরিচিত। মাঠের সুনাম ও জনশ্র“তির কারণে বাংলাদেশের দূর-দূরান্তের জেলা, এমনকি বিদেশ থেকেও অনেকে আসেন এখানে ঈদের নামাজ আদায় করতে। প্রতি বছরই এ সংখ্যা বাড়ছে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ৬ষ্ঠ বংশধর দেওয়ান মান্নান দাদ খান কিশোরগঞ্জের জমিদারি প্রতিষ্ঠার পর ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় ৭ একর জমির ওপর এ ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। এ হিসাবে এবারের ঈদ-উল-আজহার জামাতটি ১৮৩তম ঈদ জামাত। প্রথম অনুষ্ঠিত জামাতে সোয়া লাখ মুসুল্লি অংশ নেওয়ায় মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখি মাঠ’। তারপর উচ্চারণের বিবর্তনে এ মাঠের নাম হয়েছে শোলাকিয়া। বিশাল এ মাঠে রয়েছে ২৬৫টি কাতার। প্রতি কাতারে ৫ শতাধিক মুসুল্লি নামাজে দাঁড়াতে পারেন।

শোলাকিয়ায় এবার লাধিক মুসল্লি ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন। তবে কোরবানি দেওয়ার ব্যস্ততার কারণে ঈদুল আজহায় মুসল্লি সংখ্যা ঈদুল ফিতরের তুলনায় অর্ধেক কম হয় বলে জানান স্থানীয়রা।

মুনিরুজ্জামান খান চৌধুরী সোহেল, জেলা প্রতিনিধি
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি