‘আগে আছিলাম মৎস্যজীবী। বাপ-দাদারাও ছিল। হেই মাছ আর নাই, চলমু কেমনে? মাছের খোঁইজে গিয়া কুইচ্চা ধরি, জিউল দেই (জিইয়ে রাখা), পরে বেচি। মাইনষে আমরারে মৎস্যজীবী না, কুইচ্চাজীবী বইলাই জানে।’ জলাশয়ের কোমরসমান পানিতে ডোবানো একটি একটি করে চাঁই তোলা আর কুঁচিয়া বের করে হাঁড়িতে জিইয়ে রাখার ফাঁকে কথাগুলো বলছিলেন মইনউদ্দিন (৫৫)।
বংশপরম্পরায় জীবিকার পেশা মাছ ধরা ছেড়ে দিয়ে মইনউদ্দিনের মতো আরও ছয়টি পরিবারের একমাত্র পেশা কুঁচিয়া শিকার। দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় সিলেট অঞ্চলে কুঁচিয়া বেশি মেলায় মাছের ভান্ডারখ্যাত হাওরাঞ্চলের জেলা কিশোরগঞ্জ ছেড়ে সাত পরিবারের বসত সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার চণ্ডীপুলে। মৎস্যজীবী থেকে ‘কুইচ্চাজীবী’ ওই সাত পরিবারের ২৪ সদস্যের জীবিকা এখন মাছ নয়, কুঁচিয়া শিকার।
কুঁচিয়া হচ্ছে সর্পাকৃতির মাছবিশেষ। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. সোহেল মিঞা জানান, কুঁচিয়া বাইন মাছ আকৃতির। খেতে অন্যান্য মাছের মতো সুস্বাদু। আকৃতিতে একেকটি কুঁচিয়া সর্বোচ্চ ৭০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির সিলেট জেলা সভাপতি সুশেন্দ্র চন্দ্র নমঃ বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে, শুধু খেতে অভ্যস্ত না হওয়ায় কুঁচিয়াকে ভিন্নদৃষ্টিতে দেখা হয় এবং এই নিয়ে নানা অপপ্রচার রটানো হয়। শহরের চায়নিজ ও রেস্তোরাঁগুলোতে চাহিদা বেশি থাকায় মাছের বিকল্প এখন কুঁচিয়া শিকার চলে। সিলেটের কুঁচিয়া বিদেশ রপ্তানিরও সম্ভাবনা রয়েছে।
You must log in to post a comment.