আধ্যাত্মিকতা বা স্পিরিচ্যুয়ালিজমের বিষয়টি ও তার গুরুত্বকে এড়িয়ে চলবার উপায় নেই। কিন্তু ঈশ্বরবাদিতা, পরকালমুখীনতা ও নিয়তি নির্ভরতার বিভ্রান্তিকে ভর করেই কি গড়ে উঠেছে আধ্যাত্মিকতার ধারণা? আধ্যাত্মিকতার সাথে কি সত্যিই সংযোগ আছে আত্মার ধারণা ও তার পরিশুদ্ধির? আধ্যাত্মিকতা বলতে কি শুধুমাত্রই ঈশ্বরবোধ বা ঈশ্বরচেতনাই বোঝায়?
প্রকৃত অর্থে আধ্যাত্মিকতা বা স্পিরিচ্যুয়ালিজম হল “উপলব্ধিকে অনুধাবনের দক্ষতা”; যে উপলব্ধির সাথে যোগ আছে মেধা, কৌতুহল, তথ্য, প্রজ্ঞা ও বিচারশক্তির। অনুধাবনের এই দক্ষতা কল্পনা-সায়রে ভেসে বেড়ানো নয়, বরং বাস্তবতাকে বিভিন্ন মাত্রায় ব্যাখ্যা ও সেই ব্যাখ্যার সংযোগকে বর্ণনের যোগ্যতা অর্জন; কারন কল্পনা এবং বাস্তবের পার্থক্য করার ক্ষমতা অধিকাংশ মানুষেরই আছে।
এই যে উপন্যাস আর চলচ্চিত্রে থাকা চরিত্রগুলোকে ব্যক্তিগতভাবে না চিনেও কোনটি কল্পনা প্রসূত আর কোনটি বাস্তব চরিত্র সেটা আমরা খুব সহজেই অনুধাবন করতে পারি, তার মুল কারন হল উপলব্ধি করতে পারার ক্ষমতা।
এক বাক্যে, উপলব্ধিই নির্ধারণ করে বাস্তবতা। মস্তিস্ক সংক্রান্ত সাম্প্রতিক গবেষণাগুলিও এই সত্যিই তুলে ধরে। আমাদের মস্তিস্কে বিমূর্তন (abstraction) এর ক্ষমতা আমাদের ক্ষমতাবান করেছে বিমূর্তকে অনুধাবনের, যার সরাসরি দৃস্টান্ত হল আজকের তত্ত্বীয় (বিশুদ্ধ) গণিত, যার মুল ভিত্তি, উপলব্ধি; এবং অনুশীলনের ফল, ফলিত গণিত।
তীক্ষ্ণ উপলব্ধির সাবলীল নিয়ন্ত্রন বাস্তবতার ভিন্ন ভিন্ন মাত্রাকে অনুধাবন ও সেই ভিন্ন মাত্রাগুলোর মধ্যে সংযোগ বর্ণনের একমাত্র উপায়। পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের পাশাপাশি আমাদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় হল মস্তিস্ক বা ব্রেন; যার সাহায্যে বিমূর্ত (abstract) এই সংযোগকে অনুধাবন করতে এবং বস্তুজগতে তার প্রভাব অনুভব করতে পারি। আধ্যাত্মিকতার চর্চা সেই মূলত সেই ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। আধ্যাত্মিকতার এই অভিজ্ঞতাকে প্রবল ধর্মমোহে আমরা সংযুক্ত করেছি ঈশ্বরবোধ ও ঈশ্বরচেতনার সাথে; ফলে নৈতিকতার ধারণার মতই আধ্যাত্মিকতার ধারণাটিকেও ধর্মগুরুরা ছিনতাই করেছে যুগে যুগে। আধ্যাত্মিকতার চমৎকার ধারনাটিকে করে তুলেছে একপেশে, খেলো ধারনাতে। প্রয়োজন উপলব্ধিকে অনুধাবনের দক্ষতা বৃদ্ধির।