কিশোরগঞ্জ শহরের বাসিন্দা সদ্য এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থী আবিদ হাসান তাঁর বন্ধু সিরাজুল ইসলামসহ পাঁচজন ঢাকায় যাবেন ভর্তি কোচিংয়ের খবর নিতে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশনে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা পর আসন-নম্বরহীন পাঁচটি টিকিট পেলেন। দুর্ঘটনার কথা ভেবে বাবা-মা তাঁদের বাসে যেতে নিষেধ করেছেন। বাধ্য হয়ে তাঁদের ট্রেনে কিশোরগঞ্জ থেকে ১৩৫ কিলোমিটার দাঁড়িয়ে ঢাকায় যেতে হবে।
এভাবে প্রতিদিন গড়ে ছয় শতাধিক ট্রেনযাত্রী দাঁড়িয়ে থেকে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকা যাচ্ছেন। কিশোরগঞ্জ-ঢাকার রাস্তায় চলাচলকারী ট্রেনযাত্রীদের একমাত্র ভরসা এগারসিন্দুর আন্তনগর এক্সপ্রেস ট্রেন। প্রতিদিন টিকিট করেও শত শত যাত্রীকে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে ঢাকায় যেতে হচ্ছে। আসন পাওয়া যাত্রীরাও প্রচণ্ড ভিড়ে স্বস্তিতে ট্রেনে চড়তে পারছেন না। দিন দিন বাড়ছে যাত্রীর সংখ্যা। প্রতি মাসে প্রায় ১৮ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এগারসিন্দুর আন্তনগর এক্সপ্রেস ট্রেনে যাত্রীসেবা ও আসনসংকট দূরীকরণে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না রেল কর্তৃপক্ষ। এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকা যেতে ৬৫ টাকায় শোভন শ্রেণীর ১৬২টি, ৮৫ টাকায় চেয়ারকোচ ৭২টি এবং ১২৫ টাকায় প্রথম শ্রেণীর ২৭টিসহ মোট ২৬১টি টিকিট বরাদ্দ রয়েছে। কিশোরগঞ্জ স্টেশনের প্রধান হিসাবরক্ষক ও বুকিং মাস্টার মো. জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘চারটি বিভিন্ন শ্রেণীর টিকিট বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর ঢাকায় যাওয়ার জন্য সুলভ শ্রেণীতে কিশোরগঞ্জ স্টেশন থেকে গড়ে ৪৫০টি আসনহীন (স্ট্যান্ডিং) টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া গচিহাটা, মানিকখালী, সরারচর, বাজিতপুর, কুলিয়ারচর থেকে আরও দুই শতাধিক বাড়তি টিকিট বিক্রি হচ্ছে। নম্বরহীন টিকিট নেওয়া যাত্রীরা বাধ্য হয়ে ১৩৫ কিলোমিটার পথ দাঁড়িয়ে ঢাকা যাচ্ছেন।’
তা ছাড়া ট্রেনটিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বলে কিছু নেই। ভিক্ষুক ও হকারদের উৎপাতে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। ট্রেনটি সকাল সাড়ে ছয়টা ও দুপুর একটায় কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যথাক্রমে ঢাকায় বেলা ১১টা ১০ ও পাঁচটা ২৫ মিনিটে পৌঁছানোর কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের দেড়-দুই ঘণ্টা পর ঢাকায় পৌঁছায়। ফলে ট্রেনটির যাত্রীরা এর নাম দিয়েছেন ‘ভোগান্তির এগারসিন্দুর’।
রেলওয়ের একটি সূত্র জানায়, ট্রেনটি তৃতীয় শ্রেণীর আন্তনগর হওয়ায় ভৈরব জংশনে ইঞ্জিন বদলাতে ৩০ মিনিট সময় নেয়। অন্য আন্তনগরকে সাইড দিতে বিভিন্ন স্টেশনে অযথা দাঁড় করিয়ে রাখার কারণে নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। গত শুক্রবার ঢাকা থেকে এসেছেন যাত্রী হেলাল উদ্দিন (৫০)। পাঁচ ঘণ্টা ভ্রমণের পর কিশোরগঞ্জ স্টেশনে নামলে তাঁর শরীর থেকে ঘাম ঝরছিল। তিনি বললেন, ‘নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর এসে পৌঁছালাম। ট্রেনের ভেতর ঠেলাঠেলি-ধাক্কাধাক্কি করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।’
কিশোরগঞ্জ শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি আবদুস সহীদ বলেন, এগারসিন্দুর আন্তনগর প্রায় ২০ বছর আগে চালু হয়েছে। আগে সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছে যেত। এটিকে দ্বিতীয় মানের আন্তনগরে উন্নীত করা হলে অযথা বিরতিতে পড়তে হতো না। ট্রেনটিতে পাঁচটি নতুন বগি সংযোজন করা দরকার বলে মনে করেন তিনি। কিশোরগঞ্জ স্টেশনের মাস্টার অমিতলাল সরকার বগিস্বল্পতার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বয়স্ক যাত্রীদের দাঁড়িয়ে এত দূর যেতে হচ্ছে—এটা অমানবিক। ট্রেনটি লাভজনক, কাজেই বগি বাড়ানো দরকার। রেলওয়ের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, ট্রেনটিতে বগি সংযোজন করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। সুযোগ এলেই তা করা হবে।
লিখেছেনঃ সাইফুল হক মোল্লা