উড়োজাহাজে ভ্রমন শুরু করেছিলাম বাল্য কালে ৮০র দশকের গোড়ার দিকে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের উড়োজাহাজের ভ্রমন করার সুযোগ আমার হয়েছে কখনো উড়োজাহাজে সম্মুখ ভাগে কখনো পেছনের অংশের, কখনো বা ঠিক মধ্যখানে জানালার পার্শে ডানার ঠিক মধ্যভাগে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন কালে এবং অবতরন কালে উড়োজাহাজের বিস্তৃত ডানার কারসাজিতে মুগ্ধ হয়েছি এক সময় বিমান প্রকৌশলী বন্ধুদের কাছে জানতে পেরেছি মূলত বিমান উড্ডয়নে ডানার ভূমিকা ইঞ্জিন গুলোর চেয়ে কোন অংশে কম নয়। পরে অবশ্য যখন নিজে জ্যোৎনা ১-২ তে পাইলট প্রশিক্ষনরত ছিলাম তখন বিমানের ডানা (ফ্ল্যাপ, ফুল ফ্ল্যাপ, হাফ ফ্ল্যাপ সমন্ধে জেনেছিলাম, যাক বিমান ভ্রমনে জানালার ধারে ডানার উপরের সিট টি আমার সবচেয়ে প্রিয় (অনেকের মতে বিমানের সবচেয়ে নিরাপদ আসন )ভর পূ্র্নিমার জ্যোৎনা রাতে বিমান ভ্রমন আমার অনেক দিনের বাসনা, কিন্তু ব্যাটে বলে কখনো মেলেনি তাই এবার অনেকটা পূ্র্ব পরিকল্পিত ভাবেই টিকেট টা কিনেছিলাম। জৈষ্ঠের ভর পূ্র্নিমায় রাত ৮:২০ মিঃ ঢাকা-বাহরাইন ফ্লাইট জানালার ধারে পাখার উপরে, পূ্র্নিমার চাদের সাথে উড়ছি, লেভেল ফ্লাইট চাঁদটা বিমানের পাশাপাশি যাচ্ছি আর চাঁদের স্বচ্ছ প্রতিবিম্বটা আস্ত কাসার থালার মতো বিমানের সু প্রসস্থ ডানায় আটকে আছে কি যে অপরুপ দৃশ্য !
এ নৈঃর্স্বগিক দৃশ্য দেখতে দেখতে চলে গিয়েছিলাম আমার শৈশবে নিজেকে স্বাধীন ভাবে ভাসিয়ে দিয়েছিলাম জোসনা রাতে দাদির কোলে চাদের বুড়ী, নীল আমস্ট্রং এর চন্দ্রযান, জ়ু্লভানের কিচ্ছা কাহিনী বাই সাইকেলের মেশিনে রাইট ব্রাদার্স, মাত্র ১১০ বছরের বিমান প্রযুক্তির এত উন্নতি আমরা এখন মহাশূ্ন্যে বসবাসের চিন্তা করছি ।পাঁচ ঘন্টা কিভাবে কেটেছে জানিনা ফিরে পেলাম বাহরাইন অবতরনের ঘোষনা মধ্য প্রাচ্য, ইউরোপ হয়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আকাশ ভ্রমন শেষে এবার স্হলপথে ভ্রমন ও কলাহোসা রাজ্যের ছোট্ট একটি শহর টালসা (Tulsa) যাত্রা বিরতি। অনিচ্ছাকৃত ভাবেই “The Newyork Times” ছোট্ট একটি খবর-
পল রোজেল গ্যারাবিডিয়ান ১৯২৭ সাল ওহাইও অংগরাজ্যের সিনসিনাটিতে জন্ম গ্রহন করেন, বাড়ীতে পিতামাতার অধীনে পড়াশুনা শেষে মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিখ্যাত হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করে নাকচ হন । পরে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে হার্ভাড থেকে যথাক্রমে মাস্টারর্স এবং গনিত শাস্ত্রে ১৯৪৮ সালে পি,এইচ,ডি ডিগ্রি লাভ করেন । যদিও পল গ্যারাবিডিয়ান একজন গানিতিক হিসাবে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় নিয়োজিত ছিলেন,পাশাপাশি পল এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্নাট ইন্সটিটিউশনের “কম্পিউটশনাল ফ্লুয়িড (তরল)ডাইনামিক্সের পরিচালক হিসাবেও কাজ করেছিলেন । ৬০ এবং ৭০ দশকে আকাশ ভ্রমন যখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে তখনই বিমান প্রকৌশলী সারা বিশ্বময় পরেন এক বিপাকে যাত্রীবাহী বিমানের গতি প্রায় শব্দের গতির কাছাকাছি পৌছায় যার ফলে বিমান ডানার নকশা হয় হুমকীর সস্মুখীন কারন বক্র পৃষ্ঠাকৃতির বিমান ডানার উপর দিয়ে দ্রুতবায়ু প্রবাহিত হলে অল্প সময়ের জন্য বিমান Super Sonic গতিতে পৌছুলে বিমানের গতি পথে এক প্রকার শক তরঙ্গের দেয়াল তৈ্রি হয় যা বায়ু গতি রোধক বৃদ্ধি করে ভিষন ভাবে । যার প্রভাবে বিমানের গতি এবং উচ্চতা বজায় রাখতে বেশী পরিমান জ্বালানী্র প্রয়োজন হয় ।সারা বিশ্বের দূ্রপাল্লার বিমান সংস্হাগুলো যখন এ সমস্যায়, সম্মুখীন, তখন গানিতিক পল D:of: Equahan (parhal) নিয়ে ব্যস্ত, সর্বপ্রথম অনুধাবন করেন তার কম্পিউটার উদ্ভাবিত গানিতিক ফর্মূলায় যা দিয়ে এমন বিমান ডানা তৈ্রী করা সম্ভব যা কোন প্রকার শব্দ প্রকম্পন দেয়াল তৈ্রী করবেনা এবং গতিরোধক হ্রাস হওয়ায় জ্বলানী সাশ্রয়ী হবে ।
আধুনিক বিশ্বের জেট লাইনারের (বিমানের) জ্বালানী সাশ্রয়ী বিমান ডানায় আবিষ্কারক ডঃ পল যদিও কম্পিউটার ক্যালকুলেশনের জন্য বিখ্যাত ছিলেন, কিন্তু জীবনে কোনদিন এক লাইনও কম্পিউটার প্রোগ্রাম লিখেননি। তার সহকারী ডঃহ্যামিসন বলেন,এই বিখ্যাত বিজ্ঞানী তার নিউইয়র্কস্হ কায্যালয়ের বিশাল ডেস্কের পিছনে বসতেন,যার সবটাই থাকতো ফাকা লিখতেন মাত্র ৪ইঞ্চি-৬ইঞ্চি নোটবুকে -যা কেউ দেখতে পারতো না ।
বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ন খবর হেডলাইন হয় না। এই গানিতিক/বৈজ্ঞানিক ৮২ বছর বয়সে ১৩ই মে ২০১০ সালে নিউইয়র্কে তার নিজ বাসভবনে দেহত্যাগ করেন ।মাত্র ১২ দিন পরে, জৈষ্ঠের ভর পূ্নিমার চাঁদ হয়ে হয়তো বা ডঃ পল গ্যারাবিডিয়ান কিছু ক্ষনের জন্য জায়গা করে নিয়েছিলেন তার আবিষ্কৃত জ্বালানী সাশ্রয়ী আধুনিক বিমানের ডানায় কে জানে ?