পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের বর্ষপঞ্জি। সময়-গণনার এই বিশেষ পদ্ধতিটি সুপ্রাচীন, একই সঙ্গে সমস্যাসঙ্কুলও বটে। ওইসব সমস্যা এখনও আছে, পাশাপাশি আছে সমাধানেরও চিরন্তন প্রয়াস। বহমান সময়ের হিসাব সংরক্ষণের এই পদ্ধতির নাম ‘বর্ষপঞ্জি’ (‘পঞ্জিকা’) বা ‘ক্যালিনডার’।
প্রাচীনকালে মানুষ যখন বুঝতে পারে প্রকৃতি মূলত নিয়মশাসিত, আর প্রকৃতির নিয়মে ঋতুর যে পরিবর্তন ঘটে তা-ই নিয়ন্ত্রণ করে তাদের জীবন, চাহিদা ও খোরাক—তখন তাদের জন্য দরকারি হয়ে ওঠে বর্ষপঞ্জি। কবে শীত নামবে, বর্ষা শুরু হবে (তা জানতে হবে আগেভাগে, নইলে ওই বিপদকালের জন্য প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব কীভাবে!) ঘড়ি আবিষ্কারের আগে মানুষ সময়ের হিসাব রেখেছে সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজির মাধ্যমে। সূর্যের উদয় ও অস্তের মাধ্যমে সে পেয়েছে সবচেয়ে সহজ ও স্বাভাবিক এক একক—সৌর দিন। ঋতুগুলোর মাধ্যমে মোটামুটিভাবে পাওয়া গেছে আরও একটি সহজ একক—সৌর বর্ষ।
সেকালের মানুষ অবশ্য জানত না ঋতু পরিবর্তনের কারণ। সূর্যকে ঘিরে পৃথিবী যে ঘোরে সে সত্য অজ্ঞাত ছিল তাদের কাছে। তবে চাঁদের আকার ও অবস্থানের পরিবর্তন তো চোখে পড়ে সহজেই। ফলে প্রাচীনতম বর্ষপঞ্জিতে এক পূর্ণিমা থেকে আরেক পূর্ণিমা পর্যন্ত সময়ের হিসাব থেকে চান্দ্র মাস নির্ণয়ের ব্যাপারটি ঘটে। সৌরদিনের সঙ্গে সৌরবর্ষের হিসাব মেলাতে যুক্ত হয় এই মাসের হিসাব।
চান্দ্র মাসের হিসাব আমাদের সবারই জানা—গড়ে ২৯.৫৩০৫৮৯ দিনে হয় এক চান্দ্র মাস। এ রকম ১২টি মাস মিলে হয় প্রায় ৩৪৫ দিন। ফলে সৌরবর্ষ থেকে তা হয়ে পড়ে ১১ দিন কম। এক সৌরবর্ষ হতে সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড। এই অসঙ্গতি চলছে হাজার হাজার বছর ধরে। চান্দ্র ও সৌর বর্ষপঞ্জিতে সাযুজ্য বিধান করা সম্ভব হয়নি এখনও।
প্রাচীনকালের বর্ষপঞ্জিতে চালু হয়েছিল সৌর ও চান্দ্র বর্ষে সমতা বজায় রাখার জন্য কোনও বছর ১২ মাসে, কোনও বছর ১৩ মাসে গণনা করার নিয়ম। তাই গ্রিস ও ইউফ্রেতিস নদীর দক্ষিণ উপত্যকায় অবস্থিত বেবিলন-এর জ্যোতিষীরা যে বর্ষপঞ্জি ব্যবহার করতেন, তাতে অনেক আদিম বৈশিষ্ট্য ছিল। অনিয়মিতভাবে কোনো কোনো বছরের শেষে তারা জুড়ে দিতেন একটি অতিরিক্ত মাস। রাজজ্যোতিষীরা যখন বুঝতেন বর্ষপঞ্জির হিসাব অনুযায়ী আর কাজ চলছে না, তখন একমত হয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা ঘোষণা করতেন তারা। এ রকম ঘোষণা তিনবারও করতে হতো তাদের। কিন্তু এতে হিসাবের ভুল ও অন্যান্য বিভ্রান্তি এড়ানো যেত না কোনওভাবে। সম্ভবত মিসরের জ্যোতিষীরাই প্রথম ব্যবহার করেন একটি পূর্ণাঙ্গ সৌর বর্ষপঞ্জি। তারা খেয়াল করেছিলেন কয়েক মাস অদৃশ্য থাকার পর সূর্যোদয়ের ঠিক আগে আকাশে দেখা দেয় লুব্ধক নক্ষত্র। তারা আরও খেয়াল করেছিলেন, লুব্ধক-এর পুনরুদয়ের পরপরই নীলনদে আসে বাত্সরিক বন্যা।
এই ঘটনাকে নির্দেশিকা হিসেবে রেখে ৩৬৫ দিনের এক সৌরবর্ষ নির্ণয় করেন তারা। ওই বর্ষ হতো ১২ মাসে, আর প্রতিটি মাস হতো ৩০ দিনে। বছর শেষে যুক্ত হতো অতিরিক্ত পাঁচ দিন। দিনের অতিরিক্ত চতুর্থাংশ হিসেবে না রাখায় তাদের বর্ষপঞ্জিতে গরমিল দেখা দেয় নিয়মিত। মিসরের এই বর্ষপঞ্জি নিয়ে গবেষণা হয়েছে অনেক। গবেষকরা ধারণা করেন, অন্তত ৪২৩৬ পূর্বাব্দে প্রচলিত ছিল মিসরীয় বর্ষপঞ্জিটি। রোম-এর জ্যোতিষীরা বর্ষপঞ্জির ধারণা পেয়েছিলেন গ্রিক জ্যোতিষীদের গণনা থেকে। তাঁদের পঞ্জিতে ছিল ১০ মাস, আর ৩০৪ দিনে এক বছর। বাকি ৬০ দিন তাঁরা হিসাবে রাখতেন না, ওই দিনগুলো ছিল শীতকালের মধ্যভাগে। রোম নগরীর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উপকথায় বর্ণিত রোমালাস (আ. ৭৭১-৭১৮ পূর্বাব্দ) ৭৩৮ পূর্বাব্দে ওই বর্ষপঞ্জি প্রবর্তন করেন বলে কথিত আছে।
রোমালাস-এর উত্তরাধিকারী নুমা পমপিলিয়াস (৭১৫-৬৭৩ পূর্বাব্দ) ওই পঞ্জির শুরুতে একটি এবং শেষে আরও একটি মাস গণনার নির্দেশ দেন। এছাড়া সৌরবর্ষের সঙ্গে হিসাব মিলাতে তিনি ২২ ও ২৩ দিনের আরও একটি মাস নির্ধারণ করেন। ওই মাসটি এক বছর পর পর যুক্ত হতো বছরের শেষ মাসটির ২২, ২৩ তারিখের মধ্যে। ওই বর্ষপঞ্জির হিসাব বদলানো হয় ৪৫২ পূর্বাব্দে।
জুলিয়াস সিজার (১০০-৪৪ পূর্বাব্দ) রোম সাম্রাজ্যের অধিপতি হয়ে লক্ষ্য করেন বিদ্যমান বর্ষপঞ্জির হিসাব তিন মাস আগে চলছে প্রত্যেক ঋতুর। তিনি তখন জ্যোতিষী সোসিনিজিনিসকে নির্দেশ দেন পঞ্জিকা সংস্কারের। ওই সংস্কারের ফলে ৩১ ও ৩০ দিনের পর্যায়ক্রমিক ১২টি মাস নিয়ে গণনা করা হয় একটি বছর, তবে দ্বিতীয় মাসের জন্য নির্ধারিত হয় ২৯ দিন। চার বছর পর পর ওই মাসটি গণনা করা হতো ৩০ দিন হিসাবে। একই সঙ্গে ৪৬ পূর্বাব্দে, অন্য এক নির্দেশে ৪৪৫ দিনে গণনার ঘোষণা দেয়া হয়। পরে সম্রাট অগসতাস (৬৩ পূর্বাব্দ-১৪ অব্দ) দ্বিতীয় মাসের একটি দিন সরিয়ে নিয়ে যান অষ্টম মাসে (যাতে সপ্তম মাসের সমানসংখ্যক দিন থাকে ওই মাসেও।
‘জুলিয়ান’ নামে খ্যাত এই বর্ষপঞ্জি ১৫০০শ’র বেশি বছর ধরে চালু ছিল। এই পঞ্জি অনুযায়ী প্রতিটি বছর ছিল ৩৬৫.২৫ দিন। অর্থাত্ প্রতিটি সৌরবর্ষ থেকে ১১ মিনিট ১৪ সেকেন্ড দীর্ঘ। ফলে ঋতুভিত্তিক তারিখে গরমিল দেখা দিতে থাকে। ১৫৮০ সালে মহাবিষুবের তারিখ দেখা দেয় ১১ই মার্চ হিসেবে অর্থাত্ ১০ দিন আগে চলে আসে তারিখটি (২০শে মার্চ)।
এরপর জুলিয়ান বর্ষপঞ্জি সংস্কারের উদযোগ নেন জ্যোতিষীরা। তাদের পরামর্শে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি (১৫০২-৮৫) ১০ দিন বাতিল করেন দশম মাস থেকে। ফলে ১৫৮২ সালের ৫ই অক্টোবর পরিণত হয় ১৫ই অক্টোবর। এছাড়া দ্বিতীয় মাসে একটি অতিরিক্ত দিন সংযোজনের নির্দেশ দেন ৪০০ দ্বারা বিভাজ্য শতবর্ষে। এ হিসাবে ১৬০০ সালে যুক্ত হয়েছে একটি অতিরিক্ত দিন, ২০০০ সালেও যুক্ত হয়েছে আরও একটি দিন।
এই বর্ষপঞ্জি ‘গ্রেগরিয়ান’ নামে খ্যাত। সৌরবর্ষের সঙ্গে এর ব্যবধান মাত্র ২৬ সেকেন্ড। প্রতি ১০০ বছরে এই ব্যবধান বাড়বে .৫৩ সেকেন্ড হারে। কারণ, সৌরবর্ষ ছোট হয়ে আসছে ক্রমশ। ইউরোপের বিভিন্ন রোমান ক্যাথলিক অধ্যুষিত দেশ ‘গ্রেগরিয়ান’ বর্ষপঞ্জি গ্রহণ করে সঙ্গে সঙ্গে। জার্মানির কয়েকটি রাজ্য ‘জুলিয়ান’ বর্ষপঞ্জি বহাল রাখে ১৭০০ সাল পর্যন্ত। গ্রেট ব্রিটেন ও আমেরিকান উপনিবেশগুলিতে ‘গ্রেগরিয়ান’ চালু হয় ১৭৫২ সালে। এই বর্ষপঞ্জি রাশিয়ায় ১৯১৮ সালে, গ্রিসে ১৯২৩ সালে ও তুরস্কে ১৯২৭ সালে গ্রহণ করা হয়। জাপান, কোরিয়া ও চীন গ্রহণ করে যথাক্রমে ১৮৭৩, ১৮৯৫ ও ১৯১২ সালে। চীনে অবশ্য সার্বিকভাবে চালু হয় ১৯২৯ সাল থেকে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, অঞ্চলে বা প্রতিষ্ঠানে এখনও রয়েছে নানা ধরনের বর্ষপঞ্জি। ‘গ্রেগরিয়ান’ ছাড়াও আছে চার্চ, হিবরু, হিজরি, চীনা প্রভৃতি বর্ষপঞ্জি। উপমহাদেশে আছে শকাব্দ, বঙ্গাব্দ ও অন্যান্য আঞ্চলিক পঞ্জি। আমাদের বঙ্গাব্দের সঙ্গে সাদৃশ্য মেলে চাকমাদের ‘বিজু’, ত্রিপুরাদের ‘বৈসুক’, মারমাদের ‘সাংগ্রাই’, অসম-এর ‘বিহু’, পূর্ব পাঞ্জাব-এর শিখদের ‘বৈশাখী’ প্রভৃতি পর্ব-পার্বণের। উপমহাদেশের বাইরে শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া প্রভৃতি দেশে রয়েছে প্রায় একই রকমের বর্ষপঞ্জি।
বঙ্গাব্দ প্রবর্তনের নেপথ্যে রয়েছে বাংলায় ১৫৭৬ অব্দ থেকে মুগল শাসন। খাজনা আদায়ের সুবিধা হবে (এই চিন্তা থেকে হিজরি সনের পরিবর্তে এ সন চালু করা হয় তখন ফসলের মওসুমের দিকে লক্ষ্য রেখে। সম্রাট আকবর (১৫৪২- ১৬০৫)-এর এ সংক্রান্ত নির্দেশ জারি করা হয়েছিল ১৫৮৫ অব্দের ১০ই মার্চ, তবে তা কার্যকর হয় সম্রাটের সিংহাসন আরোহণের স্মারক বর্ষ ১৫৫৬ অব্দ মোতাবেক হিজরি ৯৬৩ চান্দ্র সনকে ৯৬৩ সৌর সনে রূপান্তরের মাধ্যমে। এ রূপান্তরে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন শাহী দরবারের জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমির ফতেহ সিরাজি। এজন্য বঙ্গাব্দ মুগলি বা ফসলি সন হিসেবেও পরিচিত।
উপমহাদেশে পঞ্জিকা ‘পঞ্চাঙ্গ’ নামেও পরিচিত। কারণ, এতে থাকে পাঁচটি অঙ্গ (বার, তিথি, নক্ষত্র, যোগ ও করণ। এই পঞ্জিকা গণনা পদ্ধতি রচিত হয়েছিল আনুমানিক ১৫০০ পূর্বাব্দে। তখন বছরকে ভাগ করা হয়েছিল ১২ মাসে। সেই মাসগুলোর নাম ছিল (তপঃ, তপস্যা, মধু, মাধব, শুক্র, শুচি, নভস্, নভস্য, ইষ, উর্জ, সহস্, সহস্য। বর্তমান ১২ মাসের নাম রাখা হয়েছে ওই সময়ে উদিত নক্ষত্রগুলোর নাম অনুসারে। যেমন : বিশাখা—বৈশাখ; জ্যেষ্ঠা—জ্যৈষ্ঠ; আষাঢ়া—আষাঢ়; শ্রবণা—শ্রাবণ; ভাদ্রপদা—ভাদ্র; অশ্বিনী—আশ্বিন; কৃত্তিকা—কার্ত্তিক; পুষ্যা—পৌষ (পউষ); মঘা—মাঘ; ফল্গুনী—ফাল্গুন; চিত্রা—চৈত্র। অগ্রহায়ণ ছিল সেকালে পঞ্জির প্রথম মাস, এজন্য তার নামে রয়ে গেছে সেই পরিচয়।
বছরের শেষদিন, চৈত্রসংক্রান্তির সূর্য পশ্চিমাকাশে ডুব দেবার আগেই পুরাতন অর্থবছরের সকল হিসাব চুকিয়ে ফেলার নিয়ম। বছরের প্রথম দিন মহাজন, ব্যবসায়ীরা তাদের ক্রেতা বন্ধুদের নিমন্ত্রন করে মিস্টিমুখ করানোর মাধ্যমে সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবসায়ীক লেনদেনের পুনঃসূচনা করতেন “হালখাতা” বা হিসাবের নতুন খাতা খোলে। হালখাতার লুপ্তপ্রায় এই ধারাটা সোনা-ব্যবসায়ীরা আজও ধরে রেখেছে।
সম্রাট আকবরের আমলে সর্বভারতে খাজনা আদায়ের নতুন বছরের সূচনা হলেও, পুরনো দিনের সকল হিসাব পেছনে ফেলে আনন্দের নতুন বছরে পদার্পন বাঙালীদের মাঝে ঐতিহ্য হিসেবে টিকে গেছে ‘পহেলা বৈশাখ’ হিসেবে। সবচেয়ে বর্ণাঢ্য বৈশাখ উদযাপন হয় ঢাকা শহরকে ঘিরে। বছরের প্রথম সূর্যের আলোকে বরণ করে নিতে দলে দলে লোক সমবেত হয় রমনার বটবৃক্ষের তলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের তত্ত্বাবধানে বের করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, যা সারা বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বর প্রদক্ষিণ করে। পাঞ্জাবী পরিহিত ছেলেদের পাশে খোঁপায় বেলী ফুলের মালায় সজ্জ্বিত হয়ে, লাল পেড়ে সাদা শাড়ীর তরুণীরা মেতে ওঠে “ইলিশ-পান্তা” উৎসবে।
গ্রামাঞ্চলও কোনদিক দিয়ে পিছিয়ে নেই “পহেলা বৈশাখ” উদযাপনে। জায়গায় জায়গায় বসে মেলা হরেক রকম জিনিষের পসরা সাজিয়ে। বাড়ি বাড়ি বিলানো হয় ঘরে তৈরী মিষ্টি, নতুন চালের পায়েস ইত্যাদি। আর সবকিছু ছাপিয়ে এ প্রজন্মের একজন বাঙালীকে বৈশাখ যা শেখায় তা হলো সংগ্রাম করার সংকল্প। বাংলা সংস্কৃতির ওপর কালো থাবা বিস্তারে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পূর্বপাকিস্তানে রবীন্দ্রসংগীতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে। পাকিস্তান সরকারের এই অন্যায় আচরণের জবাব দিতেই “ছায়ানট” ১৯৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল (১লা বৈশাখ, বাংলা ১৩৭২ সন) রমনার বটমূলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “এসো হে বৈশাখ এসো এসো” গানটি দিয়ে সর্বপ্রথম যাত্রা শুরু করে। বস্তুত এই দিনটি থেকেই “পহেলা বৈশাখ” বাঙালী সংস্কৃতির অন্যতম এক পরিচায়ক রূপ ধারণ করে। ১৯৭২ সালে (বাংলা ১৩৭৯ সন) ‘পহেলা বৈশাখ’ বাংলাদেশের জাতীয় পার্বন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবার আগ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার ২১এ ফেব্রুয়ারীর মতোই থামিয়ে দিতে চেয়েছে বৈশাখের উদযাপন। সেই সূত্র ধরেই ২০০১ (বাংলা ১৪০৮ সন) সালের বোমা-গ্রেনেড হামলা।
কিন্ত অজেয় বাঙালীর সামনে মাথা তুলে কোনদিনই দাঁড়াতে পারেনি কোন সাম্প্রদায়িক শক্তি। পহেলা বৈশাখের আবেদনও শেষ হয়ে যায়নি শত বাঁধার মুখেও। ঢাকার রমনা কিংবা গাঁয়ের সবচেয়ে প্রাচীন বটগাছটির গন্ডি পেরিয়ে বৈশাখ আজ পালিত হয় বিশ্বের প্রায় প্রতিটি শহরে যেখানে ন্যূনতম সংখ্যক বাঙালীও বিদ্যমান। এইতো আমাদের বাঙালী ঐতিহ্য, এইতো আমাদের বৈশাখের ঐতিহ্য, যেকোনো বাধা বিপত্তি পেরিয়ে, সহস্র প্রতিকূলতা ছাড়িয়ে, রাস্ট্রীয় অস্থিতিশীলতার মাঝেও আমাদেরকে মাতিয়ে তোলে বর্ষবরণ উদযাপনে।
শুভ নববর্ষ ১৪১৮