কিশোরগঞ্জের নতুন জেলা প্রশাসক এস এম আলমের মতবিনিময় সভায় বাজিতপুরের ইউএনও এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন পাকিস্তানের গভর্নর এবং ২৫ মার্চের কালরাতে ঢাকায় ব্যাপক গণহত্যা চালানোর মুখ্য পরিকল্পনাকারীদের একজন মোনায়েম খানের গুণকীর্তন করেছেন। সভায় ইউএনও বাজিতপুরের ‘কৃতী সন্তান’ হিসেবে মোনায়েম খানের নাম বললেও শহীদ বা খেতাব পাওয়া স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম উচ্চারণ করেননি। উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই সভায়ই মুক্তিযোদ্ধারা ইউএনওর এ বিতর্কিত ভূমিকার প্রতিবাদ ও বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। মুক্তিযোদ্ধারা জানান, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে ইউএনও এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন মুক্তিযুদ্ধকালীন ধিকৃত গভর্নরের নাম উচ্চারণ করে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির পক্ষাবলম্বন করেছেন।
প্রশাসন সূত্র জানায়, গতকাল বাজিতপুর উপজেলা প্রশাসন কিশোরগঞ্জের নতুন জেলা প্রশাসকের সঙ্গে স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরিচিতি ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সভার সভাপতি ও ইউএনও এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন স্বাগত বক্তব্যের শুরুতেই বাজিতপুরের কৃতী সন্তান হিসেবে সাবেক গভর্নর মোনায়েম খানের নাম উচ্চারণ করেন। সঙ্গে সঙ্গে সভায় উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. নূরুল হক ও মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহান ইউএনওর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একই সঙ্গে তাঁরা এ বক্তব্য প্রত্যাহারেরও দাবি জানান। সভা সূত্রে জানা গেছে, ইউএনও তাঁর বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেননি এবং বক্তব্য প্রত্যাহারও করেননি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. নূরুল হক জানান, স্বাধীন বাংলাদেশের একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও ইউএনও কেন এ ধরনের বক্তব্য দিলেন, তা খতিয়ে দেখা দরকার। মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহান জানান, মোনায়েম খান গভর্নর থাকাকালে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগেই বাজিতপুরের ছাত্রজনতা মোনায়েমবিরোধী আন্দোলনে নামে। ওই সময়েই বাজিতপুরে প্রতিষ্ঠিত মোনায়েম খান কলেজের নাম পাল্টে বাজিতপুর কলেজ রাখা হয়। তিনি বলেন, ‘ইউএনও ঘৃণিত ওই ব্যক্তির নাম উচ্চারণ করে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির পক্ষাবলম্বন এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে দেশদ্রোহীর ভূমিকা পালন করেছেন।’
তবে বাজিতপুরে ইউএনও এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন এ বক্তব্যের কথা বেমালুম অস্বীকার করেছেন। ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি জানান, কৃতী সন্তান হিসেবে নয়, বিতর্কিত ব্যক্তিদের নাম বলতে গিয়ে নাকি তিনি মোনায়েম খানের নাম উচ্চারণ করেন। তিনি দাবি করেন, তাঁর বক্তব্য নিয়ে কোনো বিতর্ক বা প্রতিবাদ হয়নি। যুদ্ধ চলাকালেই এক মুক্তিযোদ্ধা মোনায়েম খানকে তাঁর ঢাকার বনানীর বাসায় গুলি করে হত্যা করেন।
লিখেছেনঃ নাসরুল আনোয়ার, হাওরাঞ্চল