বৈঠক ডেকে নিজেই অনুপস্থিত থাকায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কঠোর সমালোচনা করলেন সহযোগী সংগঠনের নেতানেত্রীরা। এবার আর আকার-ইঙ্গিতে নয়, সরাসরি সৈয়দ আশরাফের বিরুদ্ধে দল পরিচালনায় ব্যর্থতার অভিযোগ আনেন তারা। গতকাল সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর যৌথসভায় উপস্থিত নেতানেত্রীরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে সৈয়দ আশরাফের দুই বছরের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন। তারা বলেন, সৈয়দ আশরাফ বৈঠক ডেকে নিজেই উপস্থিত না হয়ে তাদের সঙ্গে তামাশা করেছেন। তাকে ফোন করলে ধরেন না। তার দায়িত্বে অবহেলার কারণে দল আজ সরকারের পেটের ভেতরে ঢুকে গেছে।

স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি সফল করতে সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করেন খোদ সৈয়দ আশরাফ। নেতানেত্রীরা যথাসময়ে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এলেও উপস্থিত হননি সৈয়দ আশরাফ। ফলে তাকে ছাড়াই বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে প্রায় সব নেতানেত্রী অভিন্ন অভিযোগের সুরে বলেন, সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর প্রায় দুই বছরে সৈয়দ আশরাফ দলকে কী দিয়েছেন, তা হিসাব-নিকাশের সময় এসে গেছে। সরকারের সঙ্গে দলের সমন্বয় নেই, এ অভিযোগ তুলে সবাই একবাক্যে এ জন্য সৈয়দ আশরাফকে দায়ী করেন। তারা মন্তব্য করেন, সৈয়দ আশরাফের দায়িত্বহীন বক্তব্য ও আলস্যের কারণেই দলকে খেসারত দিতে হচ্ছে। দল সাংগঠনিকভাবে দিন দিন দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে। কেউ কেউ বলেন, এখন সময় এসেছে সভানেত্রীকে বলার। ভালোকে ভালো আর মন্দকে মন্দ বলার সময় এসেছে। সভানেত্রীর কাছে প্রকৃত চিত্র তুলে না ধরলে দলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

বৈঠক সূত্র জানায়, সৈয়দ আশরাফের সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু এমপি, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ, যুব মহিলা লীগ সভানেত্রী নাজমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদ হোসেন রিপন, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন প্রমুখ। সমালোচনার ঝাঁপি খোলে সভা ডেকে সৈয়দ আশরাফ নিজেই উপস্থিত না হওয়ায়। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা শেষে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ আনুষ্ঠানিকভাবে সভা শুরু করা মাত্রই ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন যুব মহিলা লীগ সভানেত্রী নাজমা আক্তার। তিনি বলেন, সৈয়দ আশরাফ গত দুই বছরে সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রতি যে উদাসীনতা দেখিয়েছেন সেজন্য তার ডাকে কোনো সভায় যোগদান করতে মন সায় দেয় না। তার পরও জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমরা মুখ বুজে সবকিছু সহ্য করে যাচ্ছি। কিন্তু এভাবে দল আর বেশিদিন চলতে পারে না। আবদুল মতিন খসরু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগে নতুনের চেয়ে পুরনোদের চেহারা অনেক উজ্জ্বল। নতুনরা আমরা কী করছি, সেটার হিসাব-নিকাশ হওয়া উচিত। সিনিয়র নেতাদের সাইড লাইনে বসিয়ে দলের সর্বনাশ করা হচ্ছে। আলোচনা সভায়, টকশোতে নতুনরা কে কী বলেন আমি বুঝি না। তারা বলবে কী করে, তাদের কি ইতিহাস জানা আছে? এতে প্রতিপক্ষ লাভবান হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমরা বন্ধুর পথ পাড়ি দেব কী করে? সৈয়দ আশরাফের দায়িত্বহীনতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। অপু উকিল বলেন, সাধারণ সম্পাদকের খোঁজে গেলে তাকে পাওয়া যায় না। আমরা তাকে চাই না, চাই সংগঠন। চাই সংগঠনের কাজ। পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের তিনি সাক্ষাৎ পর্যন্ত দেন না। কোনো চাকরি-বাকরির জন্য বলা হলে তিনি মুখ ঘুরিয়ে থাকেন।

এভাবে আর কত দিন? প্রশ্ন অপু উকিলের। পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, সহযোগী সংগঠনগুলোর যারা নেতৃত্বে আছি, তারাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সাক্ষাৎ পাই না, সেখানে কী করে সাধারণ নেতা-কর্মীরা তার সাক্ষাৎ আশা করেন। দুই বছরে তিনি আওয়ামী লীগকেই বা কী দিয়েছেন? বেশির ভাগ সময় কাটান বিদেশে। এত বড় একটা দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাকে সবাই মান্য করে চলছি, কিন্তু তিনি আমাদের কোনো কাজেই আসেন না। মাহমুদ হোসেন রিপন বলেন, ছাত্রলীগের ব্যাপারে তিনি যেসব দায়সারা মন্তব্য করে চলেছেন এতে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা কীভাবে ছাত্ররাজনীতিতে অংশ নেবে? তিনি আওয়ামী লীগের মতো একটা বিশাল দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন কীভাবে? মূল দলের জন্যই তো কিছু করতে পারেননি সেখানে সহযোগীদের জন্য কী করবেন। বৈঠকে মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আশরাফুন্নেছা মোশারফ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদিকা পিনু খান, যুবলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য হারুনুর রশীদ, মুজিবুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। যৌথসভায় স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২২ মার্চ থেকে ১০ দিনব্যাপী সভা-সমাবেশ পালনের সিদ্ধান্ত হয়।

বাংলাদেশ প্রতিদিন