আমি বিভিন্ন কারনে ঢাকা আর ঢাকার বাইরের বেশ কিছু বাসায় থেকেছি। সে সব বাসায় নানান ধরনের সমস্যা বের হতো। বাড়িওয়ালাদের বললে কিছু ঠিক করে দিতো; আর কিছু সমস্যা থেকেই যেতো। নির্মানের সময় কোনটা কিভাবে করলে, সমস্যা হতো না; তা নিয়ে ভাবতাম। নিজেরা বাড়ি করার সময় কিভাবে করলে ভালো হবে, তাও ভাবতাম। এটা আমার একটা হবি হয়ে গেলো। অল্প সময়ের জন্য কোন বাসা বা অফিসে গেলেও ফিক্চার-ফিচারগুলো খেয়াল করতাম। টিভি-ইন্টার্নেট থেকেও পেলাম কিছু বেসিকস। এভাবেই ধিরে ধিরে ইন্টেরিয়র-এক্সটেরিয়রের অপ্রাতিষ্ঠানিক কিছু জ্ঞান অর্জন করে ফেললাম।
আমি দেখেছি, বাড়িওয়ালারা কিছু টেকনিক খাটিয়ে একই নির্মান ব্যায়ে বেশ কিছু সমস্যা এড়াতে পারেন। আর ব্যায় সামান্য বাড়িয়ে, আরাম বা স্বাচ্ছন্দ বাড়াতে পারতেন অনেকটা। অনেক অভিজাত বাড়িও তারা এসব ছাড়াই তৈরি করছেন। আবার অনেকে নিজের ফ্ল্যাটেও সেগুলো এপ্লাই করেন না। আসলে অধিকাংশই বিষয়গুলো জানেন না-বোঝেন না বা আর্কিটেক্ট- ইন্জিনিয়ারদের ফি বেশি গুনতে চান না। আমি আবশ্য নামকরা কিছু বিল্ডারের এপার্টমেন্টেও ঐসব টেকনিক অনুপস্থিত দেখেছি।
নির্মান ব্যায় কমাতে চাইলে, ছাদের উচ্চতা কমিয়ে ৯’ এমনকি ৮’ ও করা যেতে পারে। আর ঐ টেকনিক গুলো খাটালে উচ্চতা কমালেও বাসার কম্ফোর্ট বাড়বে। যে ভাবে ওয়েল ডেকোরেটেড অফিসগুলোর ফল্স সিলিঙ ৮’ হাইটের হয়।
১) প্ল্যান & ডিজাইন : বিল্ডিঙের প্ল্যান আর প্লেসিং সঠিক ভাবে করতে পারলে, ফ্ল্যাট গুলো কম্ফোর্টেবল করা সহজ হয়।
ক/ বিল্ডিঙের প্লেসিং : সাধারন বিল্ডিং গুলো ২ ইউনিটে ভাগ করা হয়। চেষ্টা করতে হবে দক্ষিন-পশ্চিম দিকটা যেনো ২টি ইউনিটে সমান ভাবে ভাগ হয়ে যায়। কারন এই দিকটাই গরম কালে সবচেয়ে উত্তপ্ত হয়। এতে করে কোন ১ দিকের ইউনিট গুলো একক ভাবে গরমে এ্যাফেক্টেড হবে না।
খ/ ঘরগুলোর অবস্থান : অনেকে ঘরে আলো-বাতাস বেশি ঢোকার জন্য দক্ষিন দিকে বেডরুম, লিভিংরুম গুলো করেন। কিন্তু জলবায়ুগত পরিবর্তন আর বিদ্যুত বিভ্রাটের জন্য এখন এই ধারনা গ্রহনযোগ্য নয়। রোদ সবচেয়ে বেশি পরে বাসার দক্ষিন-পশ্চিম দিকে। গরম হওয়া সেই দেয়াল রাত পর্যন্ত ঘর গরম রাখে। তাই দক্ষিন-পশ্চিম দিকে কিচেন, টয়লেট আর ড্রয়িংরুম করতে হবে। পক্ষান্তরে গ্রিষ্মকালে বাসার উত্তর-পুর্ব দিকে শুধু দুপুর পর্যন্ত মৃদু রোদ লাগে। বেডরুম বা লিভিংরুমের মতো দির্ঘ সময় কাটাবার ঘর গুলো রাখতে হবে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা সেই দিকে।
গ/ বারান্দা : সম্ভব হলে ফ্ল্যাটের দক্ষিন-পশ্চিম দিকে শুধু গ্রিল ঘেরা টানা বারান্দা দিতে হবে। কিন্তু সেই গ্রিলে আবশ্যই বাশ বা পাটের পর্দা দিতে হব। বিশেষ ঐ পর্দা দেয়া বারান্দা তখন এর লাগোয়া ঘরের জন্য একটা হিট রেজিস্টরের মত কাজ করবে।*
ঘ/ দক্ষিন-পশ্চিম সাইড: এই দিকটায় রোদ পরে পুরো বিল্ডিঙ গরম হয়। এজন্য এই সাইডে ইউক্যালিপ্টাস ধরনের উচু গাছ রাখতে হবে। *
ঙ) রুফ টপ গার্ডেন: টপ ফ্লোরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনের জন্য ছাদে আম জাতিয় ছোট গাছ থাকতে হবে। লাউ-কুমড়ার সব্জি মাচাও খুব কাজে দেবে। লতানো গাছ বিল্ডিঙের চতুর্দিকে নামিয়ে দিতে হবে। এতে পাশের দেয়াল গুলোও ঠান্ডা থাকবে ।
চ) গ্রিন হাউজ: পাতলা কলাম বা স্টিল এঙ্গেল বা বাশের খুটি মজবুত করে দিয়ে তাতে পলিথিন আর বাশের বেড়া দিয়ে কম খরচে ছাদকে একটা গ্রিন হাউজ বানিয়ে ফেললে সবচেয়ে ভালো। উপরে কয়েকটা ছিদ্র পাইপ ফিট করে কৃত্তিম বৃষ্টি দিয়ে তাতে বাগান করতে পারবেন, আবার বিল্ডিঙের তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রনে থাকবে। *
ছ) সাইড গার্ডেনিং : বোগেনভিলিয়া জাতের লতানো গাছের জন্য বিল্ডিঙের যে দিকে রোদ বেশি পরে, সেদিকের দেয়ালে টব আটকে রাখার কিছু বিশেষ ব্যাবস্থা করতে হবে। সেই লতা আবার দেয়াল গুলোতে ড্রিল করে ছরিয়ে-ছিটিয়ে আটকিয়ে দিতে হবে। বট গাছ হলে ভালো হবে; কারন এ গাছ কোন প্রকার যত্ন ছাড়াই টিকে থাকবে। এক ধরনের গুল্ম লতা আছে যা দেয়ালে উঠিয়ে দিলে, পুরো দেয়াল ছড়িয়ে যায় । অনেকেরই ধারনা এসব দেয়ালের ক্ষতি করে । কিন্তু শুধু প্লাস্টারের ক্ষতি করলেও তা কমপক্ষে ১৫/২০ বছর থাকার পরে। কাজেই এর অপকারিতার চেয়ে উপকারিতাই বেশি।*
জ/ ইউটিলিটিজ:
ইলেক্ট্রিসিটি: সিড়ি বা গ্যারেজেরা বাতিগুলো যদি ট্রেসপাস-সেন্সর সম্বলিত হয়; তাহলে বাড়ির মালিকের কমন ইলেক্ট্রিসিটি কন্জাম্পশন কমে যাবে। মানে এগুলোর কাছে কেউ এলে জলবে, আবার চলে গেলে নিভে যাবে। আর ফ্ল্যাট গুলোতেও এই সিস্টেম থাকলে ভারাটিয়ারাও তাদের বিল কমাবার জন্য এসব ব্যাবহার করবেন।
ওয়াটার: আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন, হাত-মুখ ধোয়া বা গোসলের সময় প্রচুর পানি অপচয় হয়। এখন সেন্সরযুক্ত ইলেক্ট্রনিক পানির কল/শাওয়ার পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোর নিচে হাত/শরির নিলে পানি পরে, সরলে অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায়। দাম একটু বেশি; কিন্তু পানির অপচয় কমিয়ে বাড়িওয়ালাদের পানির ঝক্কিও কমাবে
২) তাপমাত্রা : ঢাকা এক প্রকার ইট-কংক্রিটের মরুভুমি হয়ে গেছে। গ্রাম-মফস্বলের খোলা-মেলা বাসা গুলোতে গরমে মানুষ চাইলেই বাইরে বেড়িয়ে হাওয়া-বাতাস খেতে পারে। কিন্তু শহরের বহু তল বদ্ধ ফ্ল্যাটগুলোয় সে সুযোগ নেই। আর এসি না থাকায় লোড শেডিঙে অধিকাংশেরই প্রান ওষ্ঠাগত হয়।
টিভিতে রঙের কোন এ্যাডে যেনো দেখেছিলাম ওয়েদার কোট রঙ দেয়ালের তাপমাত্রা ২-৫ ডিগ্রি কমিয়ে রাখে। এটা নিশ্চই ওদের পরিক্ষিত বিষয়। এমনই কিছু বিষয়কে গুরুত্ব দিলে আপনি লোড শেডিঙের সময়ও এসি বা ফ্যান ছাড়াই বাসায় থাকতে পারবেন স্বাচ্ছন্দে।
ক/ ভেন্টিলেটিং শ্যাফ্ট: আগে সব দালানেই ঘুলঘুলি থাকতো; প্রয়োজন বাড়লেও এখন বাড়িওয়ালারা তা দেন না। সাধারনত গরম বাতাসটা ঘরের সিলিঙের কাছ দিয়ে মুভ করে। এ জন্য প্রত্যেক ঘরের দরজার উপরে বা অন্য কোন সুবিধাজনক জায়গায় বন্ধ করা যায়, এমন ভেন্টিলেটিং শ্যাফ্ট লাগবে। তাতে গরম বাতাসটা দ্রুত উপর দিয়ে পাস করে চলে যাবে এবং ঘরের নিচের যে লেভেলে আমরা থাকি, সেটুকু ঠান্ডা থাকবে। এ গুলো অফিস স্পেসের ফল্স সিলিঙে থাকা এসি শ্যাফ্টের মত কাজ করবে।*
খ/ সিড়ির ভেন্টিলেশন : সিড়ির ভেন্টিলেশনটা খুবই চমকপ্রদ। আমার বর্তমান আবাসে এর কার্যকারিতা দেখে আর ইন্টার্নেট ঘেটে এর সপক্ষে তথ্যাদিও পেয়েছি। প্রথমে যখন রোদ থেকে বাতাসটা গ্রাউন্ড ফ্লোরের ছায়ায় ঢোকে তখনই এক প্রস্থ ঠান্ডা হয়। নিচ তলার যে দিক দিয়ে ঠান্ডা বাতাস ঢোকে সেদিকে খোলা রাখলে ভালো। ফ্লোরগুলোর সিড়িতে ছাদ না থাকায় আর তলাগুলোর একেকটা প্যাচের জন্য গরম বাতাসটা মতো ঘুরতে ঘুরতে ঠান্ডা হয়ে দ্রুত চিলেকোঠায় উঠে যায়। আর নিচের দিকে থাকে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা বাতাস। মানে সিড়িটা একটা কুলিং সিস্টেমের কাজ করে।তাই ফ্ল্যাটের মেইন দরজার উপরে ভেন্টিলেশন জানালা রাখুন। তবে সিড়ির ল্যান্ডিঙ গুলোর জানালা দিয়ে গরম বাতাস ঢুকলে এ সিস্টেমের কার্যকারিতা কমে যাবে। ছাদের সিড়িকোঠায় গরম বাতাসটা বেড়িয়ে যাবারও ব্যাবস্থা করুন। ব্যাস আপনার বিল্ডিঙের তাপমাত্রা অনেক কমিয়ে রাখতে পারবেন।*
গ/ টাইম & টেকনিক অব ভেন্টিলেশন : সাধারনত দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত বাইরের তাপমাত্রা বেশি থাকে, তাই জানালা দরজা এই সময়টা বন্ধ রাখলে ঘর ঠান্ডা থাকবে। শুধু জানালা আটকালে হবেনা, দিনের বেলায় আপনাকে এমন পর্দা দিতে হবে যাতে বাইরের আলোও ঢুকতে না পারে। শুধু সিড়ির দরজার উপরের ভেন্টিলেশন শ্যাফ্ট এবং বিপরিত প্রান্তের একটি জানালা বা এগ্জস্ট ফ্যান খোলা রাখুন। তাতে ঠান্ডা বাতাসটা সিড়ি দিয়ে ঢুকে পুরো বাসাটাকে ঠান্ডা করে অপর প্রান্ত দিয়ে বেড়িয়ে যাবে। তবে রান্না ঘরের চুলার গরমটা যাতে ঘরে না আসে, সেটাও খেয়াল করতে হবে।
ঘ/ জানালা : এসি নেই এমন ফ্ল্যাটের যে সাইডে রোদ পরে, সেদিকের জানালা হতে হবে সম্পুর্ন আলো নিরোধি কাচের । ব্যায় কমাতে কাঠ, প্লাস্টিক বা স্টিলের পাতলা প্লেইন শিটের দেয়া যেতে পারে। অনেকে মনে করেন, পর্দা হেভি হলে রোদ ঘরে ঢুকবে না। কিন্তু খেয়াল করুন, পর্দা টা থাকে ঘরের ভেতরে। রোদ জানাল দিয়ে ঘরে ঢুকে এর রেডিয়েটিং হিটটা পর্দায় ডিসচার্জ করে। পর্দা সেই হিটটা আবার ঘরে ছরিয়ে দেয়। রাজেন্দ্র পুরের এক বাসায় প্লেইন শিটের জানালা দেখে আমার খুব নাপছন্দ হয়েছিলো। কিন্তু গরমে যখন জানালা বন্ধ করে ঘরে বসতাম, তখন ঘরের ঠান্ডায় উল্টো নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করতাম।
ঙ/ হিটিং ইকুইপমেন্ট : ঘরের কম্পিউটার, টিভি, ফ্রিজ, ওভেন, চুলা প্রচুর হিট ডিসচার্জ করে ঘর গরম করে ফেলে। খুব গরমের সময় সম্ভব হলে বন্ধ করে রাখুন। আর গরমের সময় চুলাও যত কম জালাবেন ঘর তত ঠান্ডা থাকবে।
ফ্রিজ : ফ্রিজের কুলিং কয়েল ঘরের তাপ যথেষ্ট বাড়ায়। এ জন্য এসির অউট ইউনিটের মতো ফ্ল্যাটের বাইরের দেয়ালে ফিক্স করা কম্প্রেশার আর কুলিং কয়েল সম্বলিত ফ্রিজ রাখতে হবে। এমন ফ্রিজ আছে কিনা, তা আমি জানি না। কিন্তু ম্যানুফ্যাক্চারারদের তৈরি করা উচিত।*
টিভি-কম্পিউটার: এগুলো ঘরকে ধিরে ধিরে বেশ গরম করে ফেলে। এসব জানালার কাছে বা ঘরের বাতাসের প্যাসেজের মধ্যে বা এগ্জস্ট ফ্যানের নিচে রাখুন।
চ/ থার্মোমিটার: তাপমাত্রার ব্যাপারে সচেতন থাকাটা অভ্যাসের ব্যাপার; এজন্য চোখের সামনে থার্মোমিটার রাখতে হবে। রান্নাঘর আর বারান্দা সহ পারলে সব ঘরে ডিজিটালটা থার্মোমিটার রাখুন।
ছ/ ওয়াল / এগ্জস্ট ফ্যান : সিলিং ফ্যান ছাড়াও ঘরে ওয়াল / এগ্জস্ট ফ্যান রাখুন। সিলিং ফ্যান একই বাতাস বার বার ঘোরায়। আর ওয়াল চারপাশের বাতাসও টেনে আনে। একেক সময় একেকটা ব্যাবহার করলে, ফ্যান গুলো দির্ঘস্থায়ি হবে।
জ/ জানালার উচ্চতা: আমাদের চেয়ার, সোফা আর খাটের চেয়ে জানালার উচ্চতা বেশি থাকে। আমরা বাসায় দাড়িয়ে কম থাকি। বসে থাকলে জানালার বাতাস কিছুটা শরিরে লাগে, কিন্তু ফ্লোরে বা খাটে শুলে, তা শরিরের উপর দিয়ে চলে যায়। আর ঘরের ফ্যান গুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বার বার একই বাতাস দেয়; সেটা স্বাস্থকর নয়। এই অসামঞ্জস্যতা লোড শেডিঙের সময় আমাদের বেশ ভোগায়। এ জন্য জানালার নিচের প্রান্ত থাকতে হবে খাট-চেয়ারের লেভেলে; যাতে জানালার বাতাসটা আমাদের গায়ে লাগে। আর জানালা ফ্লোর থেকে হলে আরও ভালো; ফ্লোরে শোয়া-বসাও আরামের হবে।*
৩) টয়লেট :
ক/ কাপড় ধোয়ার বেসিন : বাসায় টয়লেট যে ক’টাই হোক, ১টায় অন্তত মুখ ধোয়ার বেসিন না দিয়ে তাতে ইট-কঙ্ক্রিটের তাকের ফ্ল্যাট বেসিন দেয়া উচিত। সাইড গুলো একটু উচু করে সিঙ্কের মতো করে, এর পাশে একটু অংশ ফ্ল্যাট করে দিতে হবে। সিঙ্কটায় কাপড় ভিজিয়ে ফ্ল্যাট অংশে কাপড়টা কাচা সহজ হবে; আবার বেসিন হিসেবেও ব্যাবহার করা যাবে। অনেকেই ফ্লোরে বসে কাপড় কাচতে পারেন না; এই ফ্ল্যাট বেসিনে তারাও পারবেন। এটা সেকেলে মনে হতে পারে, কিন্তু সুন্দর টাইল্স দিয়ে করলে দেখতে বরং একটু ডিফরেন্ট লাগে। আমি রাজেন্দ্রপুরের সেই বাসায় এমন বেসিন দেখে প্রথমে বিরক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু একা থাকার জন্য ওখানে আমার নিজের কাপড় নিজের ধুতে হতো। তখন বুঝেছি দাড়িয়ে কাপড় ধোয়া কত আরামের; দাড়িয়ে রান্না করার মতোই অনায়াস।*
খ/ জেন্টস পি প্যান : কমোড না থাকলে টয়লেটে দাড়িয়ে পেশাব করার প্যান রাখা দরকার। খরচ বাচাতে প্লাস্টিকের বা টাইল্স দিয়ে বানিয়ে দেয়া উচিত। বাসায় প্রতিবার পেশাব করার জন্য টয়লেটে বসতে গিয়ে খুব বিরক্ত হয়ে এর প্রয়োজনিয়তা ফিল করি।*
গ/ কমোড : কমদামি হলেও টয়লেটে কমোড রাখা উচিত। খরচ বাচাতে প্লাস্টিকের বা টাইল্স দিয়ে বানিয়ে দেয়া উচিত। এটা কারো কারো পছন্দ নাও হতে পারে। কিন্তু কমোডের মতো বসার ব্যাবস্থা না থাকলে, টয়লেট আরামদায়ক হয় না। নিচু প্যান গর্ভাবস্থা, হাড় বা হাটুর সমস্যার জন্য আসুবিধার । আর প্রত্যেক পরিবারেই এ ধরনের মানুষ থাকে।
ঘ/ সিস্টার্ন : কমোড বা প্যানের জন্য কোন সিস্টার্ন দরকার নেই; জাস্ট একটা পাইপের কানেকশন দেয়া উচিত। সিস্টার্ন পানির অপচয় তো করেই, বাথরুমের জায়গাও নষ্ট করে।
ঙ/ তাক : বাথরুমে তাক দেয়া উচিত। তাতে ভেজা পরিবেশে নষ্ট হবেনা এমন জিনিষ পত্র আর টয়লেট্রিজ, পারফিউমারিজ রাখা যাবে। ছোট বাসায় ঐ সব ছোট-খাটো জিনিস রাখার জায়গাও বের করা মুশকিল হয়ে যায়।
৪) কিচেন : ছোট ফ্ল্যাট হলে ডাইনিং রুম, ড্রয়িংরুম এমনকি লিভিং বা গেস্ট রুমের সাথেও এটাচ্ড-ওপেন কিচেন করা যেতে পারে।
ক/ প্ল্যান : ছোট হলে ১ জন, আর বড় হলে ২ জনের মুভ করার জায়গা রেখে বাকিটা চুলার স্পেস, তাক, বেসিন আর সিঙ্ক দেয়া উচিত।
খ/ কিচেন হুড /এগ্জস্ট ফ্যান: চুলার হিটটা দ্রুত উপরে উঠে সিলিং তক পৌছে যায়। আর সেই তাপ পুরো বাসায় ছরিয়ে পরে। এ জন্য চুলার উপরে কুকার বা চিমনি হুড দিতে হবে। এতে হিটটা না ছরিয়ে, হুড দিয়ে সোজা বাইরে বের হয়ে যায়। এছাড়া হুড থাকলে কিচেনের দেয়াল বা জিনসপত্র তেলচিটচিটে হয়না; যেটা এগ্জস্ট ফ্যানে এড়ানো যায় না। বাজারে প্রচলিত বিদেশি গুলো খানিকটা দামি; তাই সাধারন গুলো বানিয়ে নেয়া যেতে পারে। আর হুড না থাকলে অবশ্যই একটা স্পিডি এগ্জস্ট ফ্যান থাকতে হবে।
গ/ পর্যাপ্ত তাক : কিচেন ছোট হলে, তাকগুলো খুব কাজে দেয়। তবে তাক গুলো দিতে হবে কমপক্ষে মানুষের কাধের উচ্চতার উপরে। ধাক্কা খেয়ে মাথায় আঘাত পাবার মত হলে সেটারও ব্যাবস্থা আছে। সেজন্য ড্রিল করে তাকের নিচের দিকটায় ফোম আর রেস্কিন লাগিয়ে দিতে হবে; তাহলে ধাক্কা লাগলেও কেউ ব্যাথা পাবে না। *
ঘ/ চুলার প্লেসিং: এ কাজটায় অলমোস্ট সবাই ভুল করে; প্রায় বাসায়ই জানালার সাথে চুলা দেয়। এতে বাতাস চুলার ফ্লেমটা এলো-মেলো করে দেয় আর হিটটাও গায়ে এসে পরে। আবার জানালা বন্ধ করলে কিচেন গরম হয়ে যায়। এগ্জস্ট ফ্যান থাকলেও লোড শেডিঙের সময় রান্না-বান্না অসহনিয় হয়ে যায়। কিন্তু জানালার সাথে দাড়াবার জায়গা রেখে সাইডের দেয়ালের সাথে চুলা দিতে হবে। তাহলে জানালার পাশে দাড়িয়ে বাতাসও খাওয়া যাবে; আবার চুলার ফ্লেমটাও পাতিলের তলায় ঠিক মতো লাগবে।
৫) বেড রুম:
ক/ তাক : ঘরে সিলিঙের ১ থেকে ৩ ফিট নিচ পর্যন্ত তাক দেয়া যায়। সেকেলে বলে ঘরের দেয়ালে তাক অনেকেই পছন্দ করেন না। কিন্তু টাইল্স আর কাঠ-কাচ দিয়ে করলে ওগুলো বরং লুক্রেটিভ ফার্নিচারের মত লাগবে। ঐ তাকগুলো তখন শোকেস, বুক শেল্ফ, চেস্ট অব ড্রয়ারের মতো ফার্নিচার হয়ে যায়। ঘরে খাট ছাড়া আলাদা কোন ফার্নিচার দরকার হবে না।*
খ/ টয়লেট: বেডরুমের সাথে এটাচ্ড টয়লেটই সবার পছন্দ। কিন্তু টয়লেটের হিউমিডিটি বেডরুমে ঢুকে পরে; আর এই হিমিডিটি বাতজ্বর সহ ঠান্ডার অনেক রোগের কারন। অনেকে মনে করবেন, টয়লেটের দরজাটা সবসময় বন্ধ রাখলেই তো হবে। কিন্তু টয়লেটে যাওয়া-আসার সময় ঢোকা হিউমিডিও ক্ষতিকর।*
গ/ বেড: বেডগুলো জানালার লেভেলের হতে হবে। তাতে খাট একটু বিসদৃশ রকমের উচু হয়ে যাবে ঠিকই, কিন্তু শুয়ে থাকলে জানালার বাতাস গায়ে লাগবে। আর উচু খাটের নিচে খাটো ওয়ার্ড রোব, শোকেস, শেল্ফ রাখতে পারবেন অনায়াসে। এতে খাটটুকু ছাড়া পুরো ঘরটা খালি পাওয়া যায়।*
৬) ডাইনিং রুম :
ক/ ফল্স সিলিং : তৈরির সময় মালিকেরা যদি টয়লেট-কিচেনের ফল্স সিলিং গুলো ডাইনিঙ বা ঘরের দিকে খোলা রাখেন, তাহলে অনায়াসে সেগুলো কাবার্ড হিসেবে ব্যাবহার করা যায়। একটু খরচ করে তাতে টাইল্স বসিয়ে গ্লাস বা কাঠের পাল্লা দিলে সিলিং গুলো ফ্লোরের অনেকটা জায়গা খালি করে দেবে।*
খ/ তাকের টেবিল: যে কোন একটি দেয়ালের সাথে ২/৩ ফিট চওড়া তাক দিয়ে চমতকার খাবার টেবিল বানিয়ে ফেলতে পারেন । এই টেবিলের শুধু এক সাইডে বসা গেলেও ছোট পরিবারের জন্য তা যথেষ্ট। চাইলে এই টেবিলের উপরেই আরেকটি তাক দিয়ে তাতে আপনি ওভেন সহ অনেক জিনিষ রাখতে পারবেন।*
৭) বারান্দা : বারান্দা সাথে ঘরের পার্টিশনটা স্লাইডিং হলে স্লাইড সরিয়ে বারান্দার সাথে ঘরকে এটাচ্ড করা যাবে।
ক/ কমোড / পি প্যান : এখনকার ছোট ফ্ল্যাট গুলোতে টয়লেট ১ টাই থাকে। এ জন্য বারান্দায় একটু দেয়াল ঘিরে একটা কমোড বা পি প্যান রাখা যেতে পারে। জরুরি সময়ে তা ব্যাবহার করা যাবে। টাইল্স আর ঢাকনা দিয়ে বেঞ্চের মত করলে, ওতে বসে সময়ও কাটানো যাবে।*
খ/ বেসিন : মুখ ধোবার জন্য বারান্দায় ১টা বেসিনও দেয়া যেতে পারে।
* চিন্হিত আইডিয়া গুলো নিতান্তই আমার উদ্ভাবন। হয়তো বেসিকটা শেখা, কিন্তু এপ্লাইড ফর্মগুলো অভিনব। আমি সাধারন একটা বাড়ির অলমোস্ট সব বিষয়ই ডায়গোনোসিস করেছি। ছোট-খাটো ব্যাপারগুলোর জন্য ভাড়াটিয়ারা তো বটেই বাড়ির মালিকেরাও ভোগেন। আমার এই নন-প্রফেশনাল আর্টিকেলটি পড়ে কেউ যদি এগুলোর কোনটি পছন্দ করেন, তবে আর্কিটেক্ট-ইন্জিনিয়ার দিয়ে ভেরিফাই করে এপ্লাই করবেন, তাতে পুর্ন সুফল পাবেন।