কোচ সর্দার দলিপকে হত্যা করে শেরপুরের গড়দলিপা দখলের ভিতর দিয়ে ১৪৯১ খ্রীষ্টাব্দে ফিরোজ শাহের সময় বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে মুসলিম রাজত্ব্যের শুরু হলেও কিশোরগঞ্জের মুসলিম শাসনের বিস্তার আরো পরে। ইলিয়াস শাহী বংশ বৃহত্তর ময়মনসিংহে দীর্ঘকাল তাদের শাসন বজায় রাখে। অবশ্য এই সময়ের মধ্যে রাজা গণেশের অস্তিত্বের সুস্পষ্ট প্রমান পাওয়া যায়। মুলতঃ সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহের আমলেই (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রীঃ) বৃহত্তর ময়মনসিংহে মুসলিম শাসন সুবিস্তৃত হয়। তবু আদিবাসী অধ্যুষিত স্বাধীন জনপদ গুলোর অস্থিত্ব টিকে ছিল আরো বহুদিন। বিশেষ করে কোচ অধ্যুষিত জঙ্গল বাড়ী সহ সমগ্র কিশোরগঞ্জ অঞ্চল মুসলিম শাসনের অধীনতায় আসে সম্রাট আকবরের সময়। এই শাসন বিস্তৃতির সূচনা পর্বে যার নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত তিনি হলেন বিখ্যাত বারভূঞার অন্যতম ঈশাখাঁ। মোগলদের সাথে দেওয়ান ঈশাখাঁর যুদ্ধের আগে জঙ্গলবাড়ী, এগারসিন্দুর সহ অন্যান্য স্থানের কোচ অহমসহ আদিম সম্প্রদায়ের শক্তিশালী নৃপতিদের অস্থিত্ত ছিল। দেওয়ান ঈশাখাঁ সাথে তাদের যুদ্ধের মাধ্যমে মুসলিম শাসন পর্ব আদিম জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বের সুস্পষ্ট প্রমান পাওয়া যায়।
ইতিহাসের পাতা থেকে যতটুকু এর সময় কাল জানা যায়, তা হল সম্ভবতঃ ১৫৮০ খ্রীষ্টাব্দে ঈশাখাঁর নিকট জঙ্গলবাড়ীর কোচ সর্দারের পরাজয় এবং মোগল সেনাবাহিনীর নিকট ১৫৩৮ খ্রীষ্টাব্দে এগারসিন্দুরে অহমরাজের পরাজয়। তবে কিশোরগঞ্জের ইতিহাসের পাতায় যে ঘটনা সবচেয়ে আলোচিত তা হচ্ছে মোগলদের সাথে দেওয়ান ঈশাখাঁ ও ততপুত্র মুসা খাঁর দীর্ঘ সময়ের সশস্ত্র সংগ্রাম। ১৫৯৯ খৃষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে দেওয়ান ঈশাখাঁর মৃত্যুর আগেও পরে এই যুদ্ধের ঘনঘটার ধারবাহিক ও সুস্পষ্ট বিবরন পাওয়া না গেলেও সে সম্পর্কে আলোচনাও কম হয়নি, যা চতুর্থ অধ্যায়ে কিছুটা বিস্তৃত আকারে বর্ণিত হয়েছে। যা হোক,এ কথা স্পষ্ট যে, মোগল আমলের তথা মুসলিম শাসনের সমাপ্তির সাথে সাথে অবসান ঘটেছে মধ্যযুগের ইতিহাসের এবং ইতিহাসেরই গতিধারায় অনিবার্যভাবে এসে পড়েছে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী তথা ইংরেজ আমল। শুরু হয় আধুনিক যুগের কিশোরগঞ্জের পথ পরিক্রমন।