‘মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা আমার সঙ্গী ছিলেন, তাঁদের অনেকে কষ্ট করতে করতে মারা গেছেন। ঠিকমতো খেতে-পরতে পাননি। আমরা ভেবেছিলাম, যুদ্ধের পর দেশপ্রেমিক সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন করবে। কিন্তু তা হয়নি। আমার দুর্ভাগ্য, জীবিত থাকতেই মুক্তিযোদ্ধাদের করুণ পরিণতি দেখে যেতে হলো।’ _আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন মুক্তিযোদ্ধা এবং কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ইয়াকুব মিয়া। তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসরদের সঙ্গে বাজিতপুর-নিকলীর মুক্তাঞ্চলসহ হাওরের বিভিন্ন স্থানে অগণিত সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। সহযোগীদের নিয়ে মুক্ত করেন বাজিতপুর, অষ্টগ্রাম, নিকলী, কটিয়াদী ও কিশোরগঞ্জ থানা। কিশোরগঞ্জ মুক্ত করতে গিয়ে শহরের গাইটালে সেই সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন ‘ইয়াকুব প্রফেসর’ হিসেবে খ্যাত এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ।
অধ্যাপক ইয়াকুব মিয়া ৩৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে সমাজ বদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি ১৯৮০ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত অবিভক্ত সাম্যবাদী দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে এখনো রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন। ১৯৮৫ সালে বাজিতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। উন্নয়ন-ভাবনার কথা বলতে গিয়ে অধ্যাপক ইয়াকুব মিয়া জানান, ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাজিতপুরের রাস্তাঘাটের যতদূর উন্নয়ন হয়েছিল, এরপর গত ২০ বছরেও প্রত্যাশিত উন্নয়ন হয়নি। প্রত্যাশা ছিল, বাজিতপুরকে জেলা ঘোষণা করা হবে। এতে বাজিতপুরসহ আশপাশের উপজেলাগুলোও উন্নয়নের আওতায় আসবে। এ অঞ্চলের অবহেলিত মানুষের জীবনমানের উন্নতি ঘটবে। কিন্তু কিছুই হয়নি।
অধ্যাপক ইয়াকুব মিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালে ১৯৮৬ সালের দিকে বাজিতপুর ডাকবাংলো মাঠের উত্তর পাশে জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে স্মৃতিসৌধ গড়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। প্রায় আট লাখ টাকা খরচ করে সেই সময় সৌধের মূল ভিত্তিসহ প্রায় অর্ধেক কাজ সম্পন্নও হয়েছিল। গত ২৪ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও সেই স্মৃতির মিনারটি আর পূর্ণতা পায়নি। জাতীয় দিবসগুলোতে বাজিতপুরবাসী এই অসমাপ্ত স্মৃতিসৌধেই এখন ফুল দেয়। ইয়াকুব স্যার বলেন, ‘দুই যুগ পরও স্মৃতিসৌধটি অসমাপ্ত রয়ে গেল। উন্নয়নবঞ্চনা আর কাকে বলে’!
লিখেছেনঃ নাসরুল আনোয়ার