শ্বেতাক্ষী তিশাবাজ (White-eyed Buzzard)। বাজপাখির বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে এরা বিরল। সাদা চোখের কারণে সহজেই অন্যান্য বাজ থেকে আলাদা করা যায়। এরা সাদা চোখ তিশাবাজ বা তিশাবাজ নামেও পরিচিত। তিশাবাজ নামটির উৎপত্তি হিন্দি শব্দ থেকে। ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের পাতাঝরা বনে এদের দেখা মেলে। বৈজ্ঞানিক নাম Butastur teesa।
শ্বেতাক্ষি তিশাবাজ মাঝারি আকারের পাখি। লম্বা ৪৩ সেন্টিমিটার; মেলা অবস্থায় ডানা লম্বা ৩০ সেন্টিমিটার। দেহের ওপরের পালকের রং ধূসর-বাদামি। নিচের পালকে সাদা ও বাদামি দাগ দেখা যায়। ঘাড়ে একটুকরো সাদা পোচ রয়েছে। গলার নিচটা সাদা ও এর কেন্দ্রস্থলে গাঢ় দাগ রয়েছে, যা অনেকটা গোঁফের মতো দেখায়। কোমর ও লেজ লালচে। ঠোঁটের আগা কালো ও গোড়া হলুদ। পা কমলা-হলুদ, নখর কালো। স্ত্রী ও পুরুষ দেখতে একই রকম। বাচ্চাদের মাথা ও বুক হলুদ ও তাতে বাদামি দাগ থাকে।
তিশাবাজ উন্মুক্ত পাতাঝরা বন, ঝোপঝাড়পূর্ণ জঙ্গল, গাছগাছরাবেষ্টিত স্থান ও কৃষিজমির আশপাশে থাকতে পছন্দ করে। এরা প্রধানত ঘাসফড়িং, পাখাওয়ালা উইপোকা, বড় বড় কীটপতঙ্গ, নেংটি ইঁদুর, ইঁদুর, ছোট সাপ, ব্যাঙ, শামুক ইত্যাদি খায়। নাগালের মধ্যে পেলে এমনকি খরগোশও শিকার করতে পারে। ফসলের জন্য ক্ষতিকারক পোকামাকড় ও ইঁদুর খেয়ে কৃষকের অনেক উপকার করে। খাবারের সন্ধানে গাছের ডাল, খুঁটি বা তারের ওপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকে। একাকী বা জোড়ায় থাকে। এরা সাধারণত ‘কি-উইর’ স্বরে ডাকে। তবে প্রজননের সময় ‘পিট-উইর, পিট-উইর’ স্বরে বারবার ডাকতে থাকে।
ফেব্রুয়ারি থেকে মে প্রজননকাল। মাটি থেকে ৯-১২ মিটার উঁচুতে আম, নিম প্রভৃতি গাছের ঘন পাতাওয়ালা দো বা তে-ডালায় বাসা বাঁধে। পুরুষ ও স্ত্রী তিশাবাজ মিলেমিশে কাঠিকুটি দিয়ে ঢিলেঢালা বা নড়বড়ে বাসা বানায়। স্ত্রী তিশাবাজ তাতে তিনটি সাদা বা সবুজাভ-সাদা ডিম পাড়ে। স্ত্রী তিশাবাজ একাই ডিমে তা দেয়। ডিম ফোটে ১৯ দিনে। বাবা-মা দুজনে মিলে বাচ্চাদের যত্ন নেয় ও খাইয়েদাইয়ে বড় করে তোলে। এরপর একদিন নীল আকাশে ডানা মেলে। এমনিতেই এরা বিরল, তারপর নানা কারণে দিন দিন সংখ্যা কমে যাচ্ছে। উপকারী এই পাখিটি রক্ষার জন্য এখন থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সুত্র ও ছবিঃ আ ন ম আমিনুর রহমান
You must log in to post a comment.