ঝিন্টি, ঝাটি, জান্তি, ঝুটি বা বনপাথালি। ইংরেজি নাম Philippine Violet, Crested Philippine Violet. আমাদের বুনো ফুল। একসময় ঢাকাসহ প্রায় সারা দেশেই অঢেল ছিল। জন্মাত প্রাকৃতিকভাবে। রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল ও ঢাকার কোথাও কোথাও হলুদ রঙের ফুল (স্বর্ণঝিন্টি) দেখা গেলেও সাদা, লাল ও নীল রঙের ফুল অনেকটাই দুষপ্রাপ্য।
বলধা গার্ডেনের সিবিলিতে নীলচে বেগুনি ও বোটানিক গার্ডেনে হলুদ রঙের ফুল দেখা যায়। এদের লাল রঙের ফুলের নাম কুরুবক (B. repens)। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন:
‘কর্ণমূলে কুন্দকলি, কুরুবক মাথে।’ অন্যত্র আছে
‘কুরুবকের পরত চূড়া
কালো কেশের মাঝে।’
সাদা ঝিন্টি খাড়া, কাঁটাহীন, প্রায় এক মিটার উঁচু উপগুল্ম। শাখা রোমশ। গাছ ঝোপাল, অনেকগুলো ডালপালা, কাণ্ড কৌনিক, রোমশ ও সবুজ। পাতা ডিম্ব-লম্বাকৃতি, অখণ্ড, চার থেকে সাত সেন্টিমিটার লম্বা, ওপরে সবুজ, নিচ হালকা রোমশ, বিন্যাস বিপ্রতীপ। পাতা সরল, প্রতিমুখ, সবৃন্তক; পত্রবৃন্ত এক থেকে আড়াই সেন্টিমিটার লম্বা, পত্রফলক উপবৃত্তাকার-দীর্ঘায়ত থেকে বল্লমাকৃতির ও অখণ্ড। স্পাইক যৌগিক, ঘন; ফুল চার থেকে সাত সেন্টিমিটার লম্বা। মঞ্জরিপত্র অনুপস্থিত, মঞ্জরিপত্রিকা পাঁচ মি.মি. লম্বা, কিনারা ঈষৎ দাঁতানো। বৃতি গভীরভাবে চার খণ্ডিত, পেছনের বৃত্যাংশ বৃহত্তর এবং প্রায় দেড় সেন্টিমিটার, ডিম্বাকৃতি-বল্লমাকার ও স্পষ্টভাবে জালিকাকার।
ফুল একক বা গুচ্ছবদ্ধ। দলনল ফানেল আকৃতির, দলমণ্ডল প্রায় পাঁচ সেন্টিমিটার লম্বা, বাইরে গ্রন্থিল-রোমশ, ধুতুরাকৃতি এবং পাঁচ লতিযুক্ত। পুংকেশর চারটি, অসমান; অবিকশিত পুংকেশরগুলো পাঁচ মি.মি. লম্বা হতে পারে। পরাগধানী দীর্ঘায়িত ও দুই কোষবিশিষ্ট। রেশমি-বাদামি রঙের বীজগুলো গোলাকার। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ফুল ফোটার মৌসুম। আমাদের দেশে আগে সাধারণত সাদা, হলুদ, লালচে ও বেগুনি রঙের ফুল দেখা যেত। ভারত, পাকিস্তান,মিয়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ঝিন্টির (Barleria cristata. Syn: Barleria ciliata) বিস্তৃতি লক্ষ করা যায়।
গাছের বিভিন্ন অংশ সর্পদংশনের প্রতিষেধক, তা ছাড়া কাশি ও শরীরের ফোলা কমাতে পাতার নির্যাস ব্যবহার্য। ভারতের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ এই গাছের মূল ও পাতার নির্যাস রক্তস্বল্পতা, কাশি ও প্রদাহ রোগে কাজে লাগায়। উদ্যানসজ্জায় এদের বর্ণবৈচিত্র্য কাজে লাগানো যেতে পারে। সাধারণত বেড়ার ধারেই এরা মানানসই।
-মোকারম হোসেন