কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছেন। যৌতুক না পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থী আয়েশা আক্তারকে স্বামী মুক্তার কুড়াল দিয়ে কুপিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভালোবেসে মুক্তারের হাত ধরে বাড়ি ছাড়ার তিন মাসের মাথায় আয়েশা এ নির্যাতনের শিকার হলেন। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার পুলিশ মুক্তার মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
আয়েশার (২২) বাবার বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চরমসলন্দ গ্রামে। তিনি ভৈরব রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন। তবে শারীরিক ও মানসিক আঘাতের কারণে এখন তাঁর পরীক্ষা দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

আয়েশার পারিবারিক সূত্রের বিবরণ অনুযায়ী, আয়েশা ভৈরব রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের ছাত্রীনিবাসে থেকে পড়াশোনা করতেন। ছাত্রীনিবাসে থাকাকালে পশ্চিম গোবরিয়া গ্রামের মুক্তার মিয়ার (২৬) সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ১ ডিসেম্বর তাঁরা পালিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন পর মুক্তার যৌতুক দাবি করেন। এ কারণে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। আয়েশা কয়েকবার বাবার বাড়ি থেকে মুক্তারকে টাকা এনে দেন। আবারও মুক্তার গত শনিবার রাতে আয়েশাকে যৌতুক হিসেবে কয়েক লাখ টাকা এনে দিতে বলেন। আয়েশা সাফ জানিয়ে দেন, বাবার বাড়ি থেকে আর টাকা আনা সম্ভব নয়। এরপর মুক্তার কুড়াল দিয়ে আয়েশাকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। এতে তিনি গুরুতর জখম হন। লোহা গরম করেও আয়েশার শরীরে ছ্যাঁকা দেন পাষণ্ড মুক্তার। প্রতিবেশীরা আয়েশাকে উদ্ধার করে বাজিতপুরে জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, আয়েশাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে। তাঁর শরীরে ২৪টি সেলাই দিতে হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আয়েশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেকার ছেলেকে কোনোভাবেই মেয়ের স্বামী হিসেবে মেনে নিতে রাজি হননি বাবা। ভালোবেসেছি, তাই পালিয়ে মুক্তারকে বিয়ে করেছি। বিয়ের কয়েক মাস পর তার আসল চেহারা প্রকাশ পায়। যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে। এনে দিতে পারলে খুশি, না পারলে নির্যাতন। এবার এনে দিতে রাজি হইনি, তাই কুড়াল দিয়ে কুপিয়েছে। গরম লোহার ছ্যাঁকা দিয়েছে। অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। আমার মনে হয় আর পরীক্ষা দেওয়া হবে না।’

আয়েশার বাবা আতাউর রহমান বলেন, ‘বিয়ের পর এক দিনের জন্য সুখ পায়নি আমার মেয়ে। মুক্তার শুধু টাকা এনে দিতে বলত।’ কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, মেয়েটির বাবা মামলা করেছেন। মুক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যৌতুক দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে মুক্তার মিয়া থানা হেফাজতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যৌতুকের জন্য আমি কখনোই আয়েশাকে মারধর করিনি। মূলত কথা-কাটাকাটির জের ধরে আমি তাকে মারধর করেছি।’