সুরমার যমজ বোন কুশিয়ারার তীরে আমার জন্ম। ছোটবেলায় নদী-খাল-বিল-ডহর আমাকে টানত। নদীর ওপারে ছিল আমাদের স্কুল। বর্ষায় ডিঙি বেয়ে স্কুলে যেতাম। শুকনো মৌসুমে নদীর তীর ধরে হেঁটে হেঁটে খেয়া নৌকায় নদী পার হতাম। বর্ষায় দেখতাম অসংখ্য মাছধরা নৌকা রংবেরঙের পাল উড়িয়ে উজানে যাচ্ছে। সিলেটের দুই প্রধান নদী সুরমা ও কুশিয়ারার জন্ম পুরাণ-বর্ণিত বরবক্র বা বরাক থেকে। সুরমা সিলেট ও গোলাপগঞ্জের মধ্যবর্তী স্থান হেতিমগঞ্জ থেকে আবার উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে সিলেট-গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক স্পর্শ করে সুনামগঞ্জ পৌঁছে।
সুনামগঞ্জ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমের ১১ কি.মি. দূরে পাইন্দা নামক স্থানে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে দক্ষিণ দিকে চাঁদপুর-দিরাই হয়ে মার্কুলিতে কুশিয়ারার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এটি ছিল সুরমার মূল খাত। বর্তমানে তা মৃতপ্রায়। দ্বিতীয় শাখাটি পাইন্দা থেকে পশ্চিম দিকে ‘নোয়া নদী’ নাম ধারণ করে সুরমার মূল প্রবাহ রূপে পরিচিত হয়।
বাংলাদেশের ইতিহাসের অনেক পটপরিবর্তনের সাক্ষী সুরমা নদী। হজরত শাহজালালের সুরমা নদী পেরোনো, তাঁর সঙ্গে পর্যটক ইবনে বতুতার সাক্ষাৎকার আজ ইতিহাসের অংশ। সুরমাকে ইবনে বতুতা বলেছিলেন ‘নহর-উল-আজরফ’ বা নীলচক্ষু নদী। তাঁর স্মৃতিকথায় সুরমার স্বচ্ছ জলরাশি এবং দুই পাশে শস্যশ্যামলা কোলাহলমুখর বাংলাদেশের ছবি আজও জীবন্ত হয়ে ধরা দেয়।
ইতিহাস, ভ্রমণকথা, কবিতা কিংবা আমাদের বাল্যস্মৃতিতে সুরমাকে ভরাযৌবনা প্রমত্তা স্রোতস্বিনী হিসেবে পেলেও আজ আমরা দেখি বিপরীত চিত্র। বর্ষায় সুরমা নদীতে কানায় কানায় পূর্ণ জল ও প্রখর স্রোত থাকলেও শীত ও খরা মৌসুমে কোথাও কোথাও একেবারে শুকিয়ে যায়। কোনো কোনো জায়গায় থাকে ‘হাঁটু জল’। কোথাও কোথাও নদীর বুকে বালু আর বালু। একরত্তি পানি নেই।
লিখেছেন-শুভেন্দ্র ইমাম