ভাষা সৈনিক, শিক্ষাবিদ বিশিষ্ট কলামিস্ট, রাজনীতিবিদ ও সাংস্কৃতিক কর্মী সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন ১৯২৩ সালের ১১ এপ্রিল কিশোরগঞ্জের জঙ্গলবাড়ী জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহন করেন । ১৯৪৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এম,এ পাশ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন । কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর তিনি কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজে যোগদান করেন ।

পরবর্তীতে তিনি ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন । ১৯৫২ সালের মহান মাতৃভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহন করেন ও কারা বরণ করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে “ইন্সপেক্টর অফ কলেজ” পদে যোগদান করেন ও পরবর্তীতে রেজিষ্ট্রার পদে দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৮৭ সালে তিনি অবসর গ্রহন করেন ।

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর এই রাজনীতিবিদ স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ে অমূল্য অবদান রাখেন । ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতির সাথে জড়িত এই ব্যক্তিত্ব একজন সংস্কৃতিমনা মানুষ ও সাংস্কৃতিক কর্মী ছিলেন । শিক্ষকতা জীবন ও রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন কালেও তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন দেশের নাট্য আন্দোলনের সাথে । ভাষা সৈনিক রুপে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন ।

পঞ্চাশের দশকের বিশিষ্ট নাট্যকারদের সঙ্গে তিনি যেমন কাজ করেছেন, তেমনি স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে গ্রুপ থিয়েটারের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন । মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন দেশের অন্যতম নাট্যদল পদতিক নাট্য সংসদের সভাপতি ছিলেন । প্রায় তিন দশক ধরে তিনি পদাতিক –কে নেতৃত্ব দিয়েছেন । তিনি নাটককে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার বলে মনে করতেন । তাই পদাতিক ছিল তাঁর ধ্যান ও প্রাণের স্পন্ধন। বয়োবৃদ্ধ কালেও তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ নাট্য কর্মী । সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন ভালবাসতেন বাংলার মাটি ও মানুষকে । অবসর জীবনে দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কলাম লিখে তিনি জাতির জন্য অনেক দিক নির্দেশনা দিয়েছেন । রাজনীতির ক্ষেত্রে তার ছিল মননশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত । তিনি ছিলেন গনতন্ত্রী পার্টির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ।

বহুমুখী গুনের অধিকারী সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন ২০০৯ সালের ২৪ শে মার্চ প্রয়াত হন । তাঁর জীবনের আদর্শ ও শিক্ষা তার কর্ম ও চিন্তা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দীপশিখা হয়ে জ্বলতে থাকবে এই বিশ্বাস তার অনুসারী ছাত্র ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের । সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্টায় তার সারা জীবন ব্যয় করেছেন । এই মহান ব্যক্তিত্ব ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সংগ্রামের এক অনন্য দৃষ্টান্ত রুপে সমুজ্জ্বল থাকবেন চিরদিন ।