তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারি উদ্যোগের পরামর্শ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। দেশে ফিরে তারা মুক্ত মনে ব্যবসা করতে পারবেন, জেলে যেতে হবে না- এ অভয় দেয়া গেলে পালিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীরা দেশে ফিরবেন বলে মনে করছে অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটি। গতকাল সংসদ সচিবালয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠকে এ সুপারিশ করেছে কমিটি।
তবে বৈঠকে চলমান বিদ্যুৎ সঙ্কট প নিয়ে ব্যবসায়ীরা চরম হতাশা প্রকাশ করেন। বিদ্যুতের কারণে উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে বলে ড়্গোভ প্রকাশ করেন তারা। এদিকে বৈঠকে বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানে ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল ভিত্তিক জেনারেটর স্থাপনে প্রয়োজনীয় শুল্ক প্রত্যাহার এবং উৎপাদিত বিদ্যুতের উদ্বৃত্ত অংশ সরকারের কাছে বিক্রির সুযোগ দেয়া হবে বলে জানিয়েছে কমিটি। আসন্ন ২০১০-২০১১ বাজেটের রূপরেখা উপলড়্গে ধারাবাহিক বৈঠকের তৃতীয় দিনে কমিটি বৈঠক করে এফবিসিসিআই, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, বাংলাদেশ ফরেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব পাবলিক লিস্টেড কোম্পানিজ-এর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি আ হ ম মুসত্মফা কামাল। বৈঠকে কমিটির সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ, তাজুল ইসলাম, এমএ মান্নান, গোলাম দসত্মগীর গাজী ও ফরিদা রহমান এবং সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন প্রসত্মাব ও সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয় এবং জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেশীয় শিল্পের বিকাশে প্রয়োজনীয় পদড়্গেপ নেয়ার সিদ্ধানত্ম হয়। বৈঠক শেষে কমিটি সভাপতি বলেন, সরকার বিদ্যুৎ সঙ্কট মোকাবিলায় মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পদড়্গেপ নিয়েছে। এর সুফল পেতে দুই-আড়াই বছর সময় লাগবে। তবে মধ্যবর্তী এ সময়ে কিভাবে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া যায় সেটি নিয়েই আলোচনা হয়েছে বেশি। ব্যবসায়ীরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎপাদন ধরে রাখতে নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা গ্রহণে সম্মতি দিয়েছে। তবে সে ব্যবস্থা চালু করার ড়্গেত্রে তারা কিছু সুবিধাও দাবি করেছেন। কমিটি তাদের আশ্বসত্ম করেছে, গ্যাস সঙ্কটের কারণে ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল ভিত্তিক জেনারেটর স্থাপন করলে আমদানিকৃত যন্ত্রপাতি ও ডিজেলের ওপর শুল্ক প্রত্যাহারের সুযোগ দেয়ার সুপারিশ করা হবে। এছাড়া তাদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মেটানোর পর উদ্বৃত্ত অংশ তারা সরকারের কাছে বিক্রি করারও সুযোগ পাবেন। এক প্রশ্ন্নের জবাবে সভাপতি বলেন, সরকার ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। ১১ই জানুয়ারি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশে অনেক দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ড়্গতিগ্রসত্ম হয়েছেন। ব্যাপক ধরপাকড়ের মুখে অনেক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার এড়াতে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। তরা দেশে ব্যবসা করলে অর্থনীতিতে আরও চাঙ্গাভাব আসতো। পালিয়ে থাকা এ ব্যবসায়ীদের অভয় দিলে তারা দেশে ফিরে এসে আবারও ব্যবসা করবেন বলে মনে করে কমিটি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সমালোচনা করে লোটাস কামাল বলেন, ওই সরকারের উদ্দেশ্য কি ছিল জানি না। তবে দুই বছরে তারা বাংলাদেশকে অনেক পিছিয়ে দিয়ে গেছে। অনেক বিনিয়োগকারী হয়রানির ভয়ে দেশ ছেড়েছেন। তিনি দাবি করেন, সে সময়ে দুদকের মামলায় অভিযুক্ত অনেক ব্যবসায়ীকে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগেই জেল খাটতে হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে নিজের কাহিনী উপস্থাপন করে তিনি বলেন, দুদকের যে মামলায় আমাকে দুই বছর কারাগারে থাকতে হয়েছিল, সে মামলা পরে খারিজ হয়ে যায়। কিন্তু আমার জীবনে সে দু’টি বছর তো আর ফিরে পাবো না। বিদেশে আত্মগোপনকারী ব্যবসায়ীদের প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, যারা পালিয়েছে, তারা টাকা নিয়েই পালিয়েছে। আর টাকার কোন বর্ডার নেই। তাদের যে টাকা আগে এখানে বিনিয়োগ হতো, সেই টাকাই তারা এখন অন্য কোন দেশে বিনিয়োগ করছেন। তাতে আমাদের কোন লাভ হচ্ছে না। এ কারণেই আমরা তাদের ফেরানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার কথা বলছি। বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর সমপ্রতি ভারত সফরকালে ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বাসত্মবায়নে দ্রম্নত পদড়্গেপ নেয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া দেশীয় শিল্পের বিকাশ বাধাগ্রসত্ম না করে বিনিয়োগের ড়্গেত্র চিহ্নিত করে সরাসরি বিনিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ, স্থানীয় শিল্পের বিকাশ নিশ্চিত করতে কর বৈষম্য দূরীকরণ, দেশে রেলওয়ের ব্যবস্থার উন্নয়ন, যানজট নিরসনে কার্যকরী পদড়্গেপ গ্রহণ, আয়করের নিয়ম-কানুন সহজকরণ, ট্যাক্স কার্ড চালু এবং ট্যাক্স প্রশাসন থেকে দুর্নীতি রোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।