শিবনাথ সাহা কটিয়াদীর ও বাজিতপুর অঞ্চলের একটি পরিচিত নাম। ১২৫৫ সালের ১৭ আষাঢ় জোয়ারিয়া কুড়িখাই গ্রামে শিবনাথ সাহা জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম কার্তিক চন্দ্র সাহা, দাদা যাত্রাবর সাহা। শিবনাথ সাহারা ছিলেন দুই ভাই শম্ভুনাথ সাহা ও শিবনাথ সাহা। শিবনাথ সাহার বাবা ও ঠাকুরদার আমলে অর্থনৈতি
শিবনাথ সাহা কটিয়াদী ও বাজিতপুর উপজেলার একটি অতি পরিচিত নাম। জোয়ারিয়া কুড়িখাই গ্রামে সাধারন একটি সনাতন পরিবারে ১২৫৫ বঙ্গাব্দের ১৭ আষাঢ় ও ১ জুলাই ১৮৪৮ খ্রীস্টাব্দে জন্ম গ্রহন করেন, গত ১ জুলাই ২০২৩ তাঁর ১৭৫ তম জন্মবার্ষিকী অতিবাহিত হয়েছে। তাঁর পিতার নাম কার্তিক চন্দ্র সাহা, দাদা- যাত্রাবর সাহা। শিবনাথ সাহার ১ ভাই ছিলেন – শম্ভুনাথ সাহা ।
শিবনাথ সাহা ছিলেন একজন উদার ও দানশীল ব্যক্তি। তিনি শিক্ষা, ধর্ম ও সমাজসেবায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে শিক্ষাই মানুষের মুক্তির পথ। তিনি শিক্ষার বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, এবং তিনি তার জীবনদশায় প্রতিষ্ঠা করেন –
– স্ত্রীর নামে বাজিতপুরে কালিতারা পাঠশালা
– বনগ্রামে পিতার নামে কার্তিক চন্দ্র সাহা লাইব্রেরী
– ধুলদিয়ায় “শিবনগর”
– কামালপুরে পূজামন্ডপ এবং
– ১৯১৮ খ্রীষ্টাব্দে “সরারচর শিবনাথ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়”
শিবনাথ সাহার বাবা ও ঠাকুরদার আমলে অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভাল ছিলনা। তার সময়ই অর্থনৈতিক প্রসার ঘটে এবং তিনি তালুকদার হন। বাজিতপুরের আলিয়াবাদের ”কালীসন্দুরী সাহা”কে তিনি বিয়ে করেন।
তার পারিবারিক উত্তরসূরীগণ বর্তমানে কটিয়াদী বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বাবু দিলীপ কুমার সাহা, রতন কুমার সাহা, উত্তম সাহা , বিশ্বনাথ সাহা, কৃষ্ণ পদ সাহা প্রমুখ।
বাবু শিবনাথ সাহা ও কালি সুন্দরীর ঘরে তিন কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহন করেন। তাদের নাম বিদ্যাসুন্দরী সাহা, জগৎতারা সাহা ও জয়াদূর্গা সাহা। পুত্র সন্তানের জন্য হয়তো এই দম্পতির অন্তরে একটু দীর্ঘশ্বাস লুকানো ছিল, তাই শিবনাথ সাহা তার অগ্রজ শম্ভুনাথ সাহার ৪র্থ ছেলে সুরেন্দ্রনাথ সাহাকে দত্তক আনেন।
তিনি ১৯২০ সনের ২০শে সেপ্টেম্বর একটি ট্রাষ্ট গঠন করেন। এই শিক্ষানুরাগী শিবনাথ সাহা বাংলা ১৩৩১ সনের ১৭ই আষাঢ় বঙ্গাব্দ /১ জুলাই ১৯২৪ সালে, আজ থেকে ৯৯ বছর আগে, ৭২ বছর বয়সে নিজ বাসভবনে মৃত্যু বরণ করেন।
কটিয়াদী উপজেলার কুড়িখাই গ্রামে শিবনাথ সাহা বাজারটি তারই প্রতিষ্ঠা করা। বাবু শিবনাথ সাহার বাড়ির কারুকাজপূর্ণ বাড়ির দালানের ধ্বংসাবশেষ এখনো রয়েছে।
লোকমুখে প্রচলিত আছে শিবনাথ সাহা, এই স্কুলটি কটিয়াদী করতে চেয়েছিলেন, জায়গাও কিনেছিলেন কিন্তু ঐ সময় সমাজপতিরা শিবনাথ সাহাকে তার ব্যক্তি নামে স্কুলটি করতে তীব্রভাবে ভাবে বাধাঁ দেন।
পরবর্তীতে সরারচর গোবিন্দপুর নিবাসী প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব – প্রয়াত ডাঃ তারক বাবুর দাদা “শ্রী রাম নারায়ন সাহার” পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত এবং ১৯০৮ সালের প্রতিষ্ঠিত “গোবিন্দপুর জুনিয়র হাই স্কুলটি” কে উচ্চ বিদ্যালয়ের রুপ দিতে শিবনাথ সাহাকে অনুরোধ করলে – তিনি এক বাক্যে রাজি হন। “শ্রী রাম নারায়ন সাহা নাম মাত্র মূল্য বর্তমান স্কুলের এই জায়গাটি হস্তান্তর করেন, স্কুলের দক্ষিন পাশের জোড়া মঠটি ডাঃ তারক বাবুর দাদা “শ্রী রাম নারায়ন সাহা” ও তার পত্নী দূর্গা রানী সাহার স্মৃতি এখনো ধারন করছে।
সরারচর শিবনাথ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি লাখো মানুষকে আলোকিত করেছেন। তাঁর কর্ম ও আদর্শ আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে। আমরা তাঁর স্মৃতিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।