আবারও নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে নিষ্পাপ এক শিশু তানহা। মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়স ওর। মানুষের নিষ্ঠুরতা বোঝার বয়স হয়নি ওর। মানুষরূপী হায়েনা কেড়ে নিল তার জীবন। গতকাল বুধবার সকালে খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগের একটি বাসার কার্নিশ থেকে তার গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কয়েকদিন আগে তাকে গলা কেটে হত্যা করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। শিশুটির মা হালিমা ইয়াসমীন ও তার দ্বিতীয় স্বামী রেজাউল করিম রাজীব এ হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে মনে করছে পুলিশ। হত্যায় জড়িত সন্দেহে গতকালই মা হালিমাকে গ্রেফতার করা হয়। রাজীব পলাতক।
খিলগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজিম উদ্দিন সমকালকে জানান, পরকীয়া প্রেমিক রেজাউল করিম রাজীবের হাত ধরে গত ২৭ জুলাই রাতে মিরপুরের বাসা ছাড়েন হালিমা ইয়াসমীন। সঙ্গে নিয়ে যান শিশু তানহাকেও। এরপর হালিমা রাজীবকে বিয়ে করে তার সিপাহীবাগের বাসায় নতুন
সংসার শুরু করেন। বিষয়টি জানতেন
না হালিমার প্রথম স্বামী ফারুক হোসেন। স্ত্রী-সন্তানের নিখোঁজের ব্যাপারে তিনি ২৮ জুলাই পল্লবী থানায় একটি জিডি করেন।
খিলগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক জাকির হোসেন সমকালকে জানান, গতকাল সকাল ১১টার দিকে স্থানীয় লোকজনের খবরের ভিত্তিতে পুলিশ সিপাহীবাগের ২৬৯ নম্বর ভবনের চারতলার জানালার কার্নিশের ওপর থেকে শিশু তানহার গলিত লাশ উদ্ধার করে। এ সময় পাঁচতলার একটি কক্ষ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত একটি রক্তাক্ত বঁটি ও একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়। পরে ওই কক্ষ থেকেই গ্রেফতার করা হয় তানহার মা হালিমা ইয়াসমীনকে। হালিমা ইয়াসমীন সন্তান হত্যার ব্যাপারে পুলিশকে এলোমেলো তথ্য দিয়েছেন। হালিমা জানান, স্বামী ফারুক হোসেন আর একমাত্র মেয়ে তানহাকে নিয়ে মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বরে ভাড়া বাসায় থাকতেন। সেখানে থাকতেই দেড় বছর আগে সিপাহীবাগের রেজাউল করিম রাজীবের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর বিভিন্ন সময় রাজীবের সঙ্গে তার সরাসরি এবং মোবাইল ফোনে কথা হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমের টানে গত ২৭ জুলাই শবেবরাতের রাতে স্বামী ফারুককে ফেলে তিনি রাজীবের হাত ধরে তার সিপাহীবাগের ভাড়া বাসায় গিয়ে ওঠেন। ওই বাসায়ই রাজীবের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
হালিমা জানান, রাজীবের সংসারে সব ঠিক থাকলেও তানহাকে নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। রাজীব তানহাকে মেনে নিতে পারে না। একপর্যায়ে হালিমারও মনে হয়, তানহাই তার সুখের পথে বাধা। অতঃপর দু’জনে তানহাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন।
খিলগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজিম উদ্দিন সমকালকে বলেন, শিশু তানহার হত্যার ব্যাপারে হালিমা ইয়াসমীন একেকবার একেক কথা বলছেন। তিনি পুলিশকে জানান, শবেবরাতের দু’দিন পর রাজীব তাকে (হালিমাকে) কৌশলে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে। এরপর তানহাকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করে লাশ জানালা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। ঘুম থেকে জেগে তিনি দেখেন, তানহা নেই। আবার হালিমা কখনও বলছেন, শবেবরাতের রাতেই দু’জনে মিলে তানহাকে বঁটি দিয়ে গলা কেটে হত্যার পর লাশ জানালা দিয়ে ফেলে দেন।
ওসি বলেন, তানহার গলিত লাশ পাঁচতলা ভবনের চারতলার একটি জানালার কার্নিশ থেকে উদ্ধার করা হয়। যেভাবেই হত্যা করা হোক, লাশ জানালা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় বলে তার ধারণা। ৬-৭ দিন আগেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে তিনি জানান।
হালিমার প্রথম স্বামী ও তানহার বাবা মুদি দোকানি ফারুক হোসেন সমকালকে বলেন, ২৭ জুলাই সকাল থেকে তার স্ত্রী ও সন্তান নিখোঁজ ছিল। পরে তিনি দেখেন, বাসায় সাত ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও জমানো ১ লাখ টাকা নেই। এ ব্যাপারে পরদিন তিনি পল্লবী থানায় একটি জিডি করেন। গতকাল পুলিশের কাছ থেকে তিনি সন্তানের লাশ উদ্ধার ও স্ত্রী হালিমাকে গ্রেফতারের কথা জানতে পেরে খিলগাঁও থানায় যান। সেখানে তিনি তানহার লাশ শনাক্ত করেন। তিনি দাবি করেন, পরকীয়ার বিষয়টি তিনি জানতেন না।
খিলগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক শাহিন সমকালকে বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তানহার বাবা ফারুক হোসেন বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় হালিমা ইয়াসমীন এবং তার দ্বিতীয় স্বামী রেজাউল করিম রাজীবকে আসামি করা হয়েছে। রাজীব এখনও পলাতক।

সমকাল –