ধান কাটার শ্রমিকের অভাব, উতপাদন খরচের উর্ধগতি এবং বিক্রিত দামের নিম্নগতিতে হাওর কষকের ‘সর্বনাশ’ আর ‘দা-ওয়াল’ দের ‘পৌষ মাস’ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে । এ বছর ধান কাটার শ্রমিক-‘দা-ওয়াল’রা অধিক উপার্জনে আনন্দে দল বেধেঁ গরু জবাই করে ভূড়িভোজের মাধ্যমে উল্লাশ প্রকাশ করছে । অপর পক্ষে কৃষকদের মাঝে চরম হতাশা ও নিরব কান্নার বিষন্নতায় দিন কাটছে ‘হিদল শুটকি’ খেয়ে ।
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার লাইম পাশা পশ্চিম পাড়ার বড় হাটির মাঝারি কৃষক আলমাস উদ্দিন জানান, তিনি এ বছর চার (০৪)‘কের’ (৪০ শতাংশে এক ‘কের’) জমিতে ধান চাষে নগদ খরচ করেছেন ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা । তিনি জমিটি ১৫ হাজার নগদ টাকায় বর্গা নিয়েছেন । তাঁর নগদ মোট খরচ ৫১ হাজার ৫ শত টাকা । অধিকাংশ কৃষক এ টাকার পরো বা আংশিক (৫০% লাভে) দাদন হিসাবে ঋন নিয়ে থাকেন । সব কাজই তিনি শ্রমিক দিয়ে করিয়েছেন । তিনি ধান পেয়েছেন ৭০ মন (ব্রি ধান২৯, চিটার কারনে ফলন কম হয়েছে, হওয়ার কথা প্রায় ৮০-১০০ মন)। কিন্ত তাঁকে ধান কাটার জন্য ‘দাওয়ালদের ৮ মন (দূরবর্তি হলে ৯-১৬ মন), জমি থেকে পরিহণে ৬ মন (দূরবর্তি ও কাচাঁ রাস্তা হলে ১০-১২ মন), মাড়াই করতে ৪ মন, সেচ কর ৭.৫ মন; মোট ২৫.৫ মন দিতে হয়েছে । ফলন কম বা বেশী হলেও এ পরিমাণ ধান থাকে দিতেই হবে । কৃষক আলমাস উদ্দিনের ঘরে উঠেছে মাত্র (৭০-২৫.৫) ৪৪.৫ মন ধান । উঠতো (১০০-২৫.৫)=৭০ মন । এ সময়ে (১২/৬/১৫) ধান ৫৫০ টাকা মন দরে মোট (৪৪.৫ মন x ৫৫০)= ২৪,৪৭৫ টাকা পাবেন । পাওয়ার কথা (৭০ মন x৫৫০)= ৩৮, ৫০০ টাকা । তার ক্ষতি হয়েছে (৫১,০০০-২৪,৪৭৫-)=২৬,৫২৫ টাকা । পুরো ফলন হলেও (৫১৫০০-৩৮৫০০)= ১৩,০০০ টাকা মাত্র ক্ষতি হতো ।
অপর পক্ষে একই গ্রাম লাইম পাশা পশ্চিম পাড়ার ধান কাটার শ্রমিক ‘দা-ওয়াল’র ৪টি দল বৈশাখ মাসে মাত্র ২০-২২ দিন ধান কেটে মুজুরি হিসাবে প্রত্যেকে পেয়েছেন ২০-২১ মন ধান । তাঁদের দলে ১৫ থেকে ২৫ জন করে ‘দা-ওয়াল’ ছিল । শেষের উপার্জনের টাকায় শামছু সর্দারের দল ১৮ হাজার ১০০ টাকায় ১টি গরু, শওকত আলী সর্দারের দল ২৭ হাজার ৫০০ টাকায় ১টি গরু, হাছুন আলী সর্দারের দল ১০ হাজার টাকায় ১টি খাসি আর তোফাজ্জল সর্দাররের দল ২৮ হাজার টাকায় ১টি গরু কিনে মহা উল্লাসে জবাই করে মাংশ বন্টন করে নিয়ে ভূড়িভোজ করেছেন । কৃষক আলমাস উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের দিন কাটে ‘শাক-হিদল শুটকি’ খেয়ে ।
আমাদের বাপ-দাদাদের দেখেছি, ধান কাটার শেষে, ‘বনের গোলা’ (খড়ের স্তুপ) তোলার দিন গরু/খাসি জবাই করে ‘দা-ওয়াল’দের ভূড়ি ভোজ করাতো বা তাঁদের ধান বোঝাই নৌকার গলুই এ গরু, ছাগল, রাজহাঁস উপহার দিতো; ‘দা-ওয়াল’রা মহাজনের জয়গান গেয়ে বিজয় উল্লাসের সাথে ফিরে যতো । আর এখন হয়েছে উলটো অবস্থা !!!