কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার পিটুয়া গ্রামের ইসলাম মিয়ার স্ত্রী রীনা আক্তার নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাঁর অবস্থা হঠাৎ খারাপ হয়ে যাওয়ায় দ্রুত তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় করিমগঞ্জ মডেল হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে গিয়ে ইসলাম মিয়া জানতে পারেন হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ বন্ধ। পরে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে যান কিশোরগঞ্জ সদর ২৫০ শয্যার হাসপাতালে।

করিমগঞ্জ মডেল হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ বন্ধ থাকায় রীনা আক্তারের মতো করিমগঞ্জ ও আশপাশের এলাকার অনেক প্রসূতিকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। অথচ ৫০ শয্যার এই হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে রয়েছে আধুনিক অস্ত্রোপচার কক্ষ ও প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি। প্রায় তিন বছর ধরে শল্যচিকিৎসক ও লোকবলের অভাবে বন্ধ হয়ে আছে হাসপাতালের প্রসূতিসেবা কার্যক্রম ও সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে প্রায় সোয়া এক কোটি টাকা ব্যয় করে প্রসূতি বিভাগে আধুনিক একটি অস্ত্রোপচার কক্ষ ও যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা হয়। শল্যবিদ (সার্জন) ও অবেদনবিদসহ জনবল নিয়োগ দেওয়ার পর ২০০৭ সালের শেষ দিক থেকে হাসপাতালে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার চালু হয়। এতে হাওরাঞ্চলসহ বৃহৎ এলাকার প্রসূতি স্বাস্থ্যসেবা অনেকাংশে নিশ্চিত হয়। কিন্তু নয় মাসের মাথায় ২০০৮ সালের জুন মাসে গাইনি শল্যবিদ আমিনুর রহমান বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। এর পর থেকে হাসপাতালে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর অন্য চিকিৎসক ও কর্মচারীরাও বদলি হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে প্রসূতি চিকিৎসা পুরোপুরি বন্ধ। এতে কোটি টাকায় নির্মিত অস্ত্রোপচার কক্ষ ও যন্ত্রপাতি দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
করিমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জনাব আলী বলেন, অস্ত্রোপচার কক্ষ ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও শুধু শল্যবিদ না থাকায় সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে। প্রতিদিন অনেক প্রসূতিকে মুমূর্ষু অবস্থায় নিতে হচ্ছে জেলা সদরে। এটা উপজেলাবাসীর জন্য দুর্ভাগ্যজনক।

হাসপাতালের স্বাস্থ্য প্রশাসক আবদুল হামিদ বলেন, শল্যবিদসহ প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দেওয়ার জন্য জেলা সিভিল সার্জনকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন দীন মোহাম্মদ জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছে। শিগগির হয়তো প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। এরপর হাসপাতালের প্রসূতি চিকিৎসা ও সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার চালু করা যাবে।

– সাইফুল হক মোল্লা