সাধারণত আলংকারিক গাছ হিসেবেই বাগানে রোপণ করা হয়। আমাদের দেশে গাছটি শিমুল আলু নামে বেশি পরিচিত। কাসাভা পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম শর্করা উৎপাদনকারী ফসল এবং আফ্রিকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ৫০ কোটি মানুষের প্রধান খাদ্য। এ কারণে আফ্রিকায় খাদ্য হিসেবেও জনপ্রিয়। তবে বর্তমানে সারা পৃথিবীর উষ্ণ ও উপ-উষ্ণ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে কাসাভার চাষ হচ্ছে। কাসাভা উৎপাদনে প্রথম স্থানে রয়েছে নাইজেরিয়া।

আমাদের দেশে বিচ্ছিন্নভাবে বৃহত্তর ময়মনসিংহের গারো পাহাড়, হালুয়াঘাট, মধুপুর, নেত্রকোনা, সিলেট, লালমাই পাহাড় ও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা স্থানীয়ভাবে স্বল্প পরিমাণে কাসাভার চাষ করে। দেশের কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা এসব কাসাভা সংগ্রহ করে বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে সরবরাহ করছে। মূলত খ্রিষ্টান মিশনারিদের মাধ্যমে ১৯৪০ সালের দিকে কাসাভা আমাদের দেশে আসে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছোলায়মান আলী ফকির ২০০০ সালের দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাসাভা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তিনি এবং তাঁর পিএইচডি গবেষণা ফেলো মো. গোলাম মোস্তফা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা কাসাভার জাত সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন এক একর আয়তনের এ বাগানে। এখানে প্রায় ১১ জাতের কাসাভা (Manihot esculenta) সংরক্ষণ করা হয়েছে। কাসাভা হচ্ছে গাছের শিকড়জাত একধরনের আলু, জন্মে মাটির নিচে। নানাভাবে এ আলু খাওয়া যায়। প্রচলিত অন্যান্য নাম হচ্ছে Yuca, Mogo, Manioc, Mandioca ইত্যাদি।

কাসাভা বহুবর্ষজীবী গুল্ম শ্রেণীর গাছ। কাণ্ড গিঁটযুক্ত, আগা ছড়ান, পাতা যৌগিক, গড়ন শিমুল পাতার মতো, করতলাকৃতি, লাল রঙের দীর্ঘ বৃন্তের মাথায় লম্বাটে ছয় থেকে সাতটি পত্রিকা থাকে। আমাদের দেশে গাছ রোপণ এবং ফসল তোলার উপযুক্ত সময় ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ এবং অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। গাছ লাগানোর সাত মাস পর শিকড়ের আলু খাওয়ার উপযোগী হয়। কাসাভা চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা—এ গাছ পতিত জমি, খেতের আল এবং অনুর্বর মাটিতেও ভালো জন্মে। তা ছাড়া মাটির উর্বরতাও নষ্ট করে না।

কাসাভার মূল বা শিকড় পুড়ে মিষ্টি আলুর মতো খাওয়া যায়। আলু সিদ্ধ করে বিভিন্ন তরকারির সঙ্গে রান্না করে খাওয়া যায়। কাসাভা আলু থেকে তৈরি আটা ১০ থেকে ৩০ ভাগ গম-আটার সঙ্গে মিশিয়ে রুটি, কেক, বিস্কুট, স্যুপ, রসগোল্লা ইত্যাদি তৈরি করা সম্ভব। তা ছাড়া, কাগজ ও ওষুধের কাঁচামাল হিসেবেও কাসাভা ব্যবহূত হয়। তবে সব জাতের কাসাভা খাওয়ার উপযোগী নয়। দেশের পতিত স্থানগুলোতে কাসাভা চাষ করলে আমাদের খাদ্যের বাড়তি চাহিদা কিছুটা হলেও মেটানো সম্ভব।

-prothom alo