প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে উঠেই শিরোপা জয়ের আনন্দে এখন ভাসছে গোটা স্পেন। অন্যপ্রান্তে তিনবার ফাইনালে উঠেও শিরোপা জিততে না পারার হতাশায় মুহ্যমান নেদারল্যান্ডস। জোহানেসবার্গের সকার সিটি স্টেডিয়ামে রোববার রাতে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার সেই বিশ্বকাপ জেতানো গোলের পর থেকেই উৎসব চলছে মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, মায়োরকাসহ পুরো স্পেনে। এই উৎসব যেন শেষ হওয়ার নয়।

রাজধানী মাদ্রিদে দেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে উল্লাস করতে থাকা এক তরুণ বলছিলেন, ”এটা স্পেনের সময়। দুই বছর আগে আমরা ইউরোপ সেরা হয়েছিলাম। এখন ফুটবল বিশ্বের রাজা আমরা।”  ২০০৮ সালে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এবার ফেবারিট হয়ে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল স্পেন। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো তারা উঠে যায় বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ও ফাইনালে। এরপর তারা ১-০ গোলে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে জিতে শিরোপা।

রোববার ফাইনাল শেষেই উল্লাস করতে করতে রাস্তায় নেমে আসে স্প্যানিশরা। তিন লক্ষেরও বেশি ফুটবলপ্রেমী নেমে আসেন মাদ্রিদের মহাসড়কগুলোতে। শহরের একটি দোকানের মালিক মারিসা ড্যালন বলছিলেন, ”এটা অবিস্মরণীয় একটা দিন। একজন স্প্যানিশ হিসেবে আমি গর্বিত।”

নিরাপত্তা রক্ষী ফ্রান্সেস্কো ডেলগাদো সমালোচনা করলেন নেদারল্যান্ডসের, ”ওরা ভয়ঙ্কর ফুটবল খেলেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের বার বার আঘাত করেছে। কিন্তু আমাদের ছেলেরা খেলে গেছে সুন্দর ফুটবল। যদি খেলায় স্পেন হেরেও যেতো তাহলেও আমি পতাকা নিয়ে এভাবে উল্লাস করতাম। ইকের ক্যাসিয়াসরা জাতীয় বীর।”

স্পেনের সংবাদ মাধ্যমেও চলছে ফুটবলারদের বন্দনা। বহুল প্রচারিত পত্রিকা ‘এল পাইস’ এর শিরোনাম ”বিশ্বচ্যাম্পিয়ন”। প্রথম পাতার পুরোটা জুড়েই আছে ফুটবলারদের নিয়ে প্রতিবেদন।

অন্যদিকে নেদারল্যান্ডসের প্রতিটি শহর যেন এখন শোকের নগরী। ৩২ বছর পর তাদের দল আবারো উঠে এসেছিল বিশ্বকাপের ফাইনালে। কিন্তু ১৯৭৪ ও ‘৭৮ সালের পর এবারো শিরোপা অধরা হয়েই থাকলো। রাজধানী হেগের ৩৮ বছর বয়সী বিক্রয় কর্মকর্তা ক্রিস নিয়েলসন বলেন, ”৭৪ ও ৭৮ সালে যখন নেদারল্যান্ডস ফাইনালে খেলেছিল তখন আমি ছোট। এরপর ৩২ বছরের প্রতীক্ষা। আরেকটা ফাইনাল খেললো ওরা। শিরোপা অধরাই থাকলো। তাহলে কী আরেকটি ফাইনালের জন্য আরো ৩২ বছর প্রতীক্ষা করতে হবে?”

জেসে ফন স্ট্রাটেন নামের আরেক তরুণ বলছিলেন, ”যদি আবেগ সরিয়ে রেখে সত্য কথা বলি, তবে স্পেন আসলে যোগ্য দল হিসেবেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।” উৎসব করার জন্য কমলা রঙের জার্সি গায়ে ফাইনাল দেখতে বসেছিলেন ওলন্দাজরা। রাজধানীর মিউজিয়াম স্কয়ারের সামনে বড় পর্দায় খেলা দেখেছেন প্রায় এক লক্ষ ফুটবল ভক্ত। ফাইনালের শেষ বাঁশি বাজতেই তারা মাথা নিচু করে ঘরমুখী হয়েছেন।

একইভাবে ডাচ পত্রিকায়ও ছিল শোকগাঁথা। শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা অ্যালজেমান ডাগব্লাড যা শিরোনাম করেছে তার বাংলা অর্থ দাড়ায় ”কমলা বাহিনী কাঁদছে”। এক লাইনেই তারা বুঝিয়ে দিয়েছে পুরো দেশের চিত্র। এই আক্ষেপ নেদারল্যান্ডসের বয়ে বেড়াতে হবে আরো চার বছর। অন্যদিকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত স্পেনই ফুটবল দুনিয়ার রাজা।