চিরন্তন ফেভারিট ব্রাজিলের বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে আজ। জোহানেসবার্গের এলিস পার্কে ‘জি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ডুঙ্গা বাহিনীর প্রতিপক্ষ ফুটবলের অচেনা শক্তি উত্তর কোরিয়া। পাঁচবারের বিশ্বজয়ীরা আজ মাঠে নামার আগে সামনে দাঁড়িয়েছে অনেক বিষয়। এই ব্রাজিল আসল ব্রাজিল নয়, এটা ডুঙ্গার ব্রাজিল_ এমন বিতর্কের ঢেউ ফুটবল দুনিয়াজুড়ে। মাত্র ক’দিন আগেও ফুটবল নান্দনিকতার শেষ কথা ছিল ব্রাজিল। কিন্তু খারাপ খেলে হলেও আমরা বিশ্বকাপ জিততে চাই_ ডুঙ্গাসহ তাদের বিশ্বকাপ সেনানীদের এমন কথায় আঁতকে উঠেছেন ব্রাজিলের বনেদি ভক্তরা। ডুঙ্গার হাতে পড়ে ব্রাজিল ফুটবলের তাল-লয়-সুর কতটা কেটেছে কিংবা জয়ের সর্বগ্রাসী নেশায় সুন্দরকে
শাশ্বত ফেভারিটরা কতটা বিসর্জন দিয়েছে, তারই অগি্নপরীক্ষা শুরু হচ্ছে আজ রাতেই। রাত সাড়ে ১২টায় খেলাটি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন। শুধু ব্রাজিলিয়ানরাই নয়, বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী ব্রাজিলভক্তের সঙ্গে বাংলাদেশের ভক্তদের শুভ কামনা নিয়ে ডুঙ্গাবাহিনী আজ মাঠে নামছে।
আজকের ম্যাচে ডুঙ্গার সামনে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ। এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে কঠিন গ্রুপে ব্রাজিল। ‘গ্রুপ অব ডেথ’-এ আরও আছে পর্তুগাল, আইভরি কোস্টের মতো দল। যে কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলার সামর্থ্য আছে এ দুটি দলের। আর হিসাবের বাইরে রাখার কোনো সুযোগ নেই উত্তর কোরিয়াকেও। যদিও ১৯৬৬ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে এশিয়ার এ দেশটি। অবিশ্বাস্য কিছু করে দেখানোর ঐতিহ্য আছে উত্তর কোরিয়ার। যদিও ৪৪ বছর পর বিশ্বকাপে খেলতে এসেছে। ১৯৬৬-এর বিশ্বকাপে ফুটবল পরাশক্তি ইতালিকে হারায় তারা। এশিয়ান দলগুলোর মধ্যে সবার আগে কোয়ার্টার ফাইনালে উন্নীত হওয়ার কৃতিত্বও তাদের। আর বিশ্বকাপে অঘটনগুলোর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে অচেনা শক্তিগুলোই। ১৯৯০-এর বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে দিয়েছিল ক্যামেরুন। ২০০২ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়েই আগেরবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে হারের লজ্জায় ডোবায় সেনেগাল।
৪৪ বছর নিভৃতে থাকার পর কোরিয়ানদের ক্ষুধা যে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে, তা বলাবাহুল্য। উত্তর কোরিয়া যে তাদের কাছে পুরোপুরি অচেনা, এটা স্বীকার করেছেন ব্রাজিলিয়ান শিবিরের প্রায় প্রত্যেকেই। তাদের মিডফিল্ডার ফেলিপ মেলোর কথায়, ‘আসলে উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে আমাদের তেমন ধারণা নেই। তাদের খেলার একটা ভিডিওচিত্র দেখানোর চেষ্টা করছে আমাদের কোচিং স্টাফ।’
সাবধানী ডুঙ্গা প্রস্তুত থাকেন যে কোনো পরিস্থিতির জন্যই। অচেনা শক্তি হলেই বড় কিছু ঘটিয়ে ফেলবে, এ ধারণার ঘোর বিরোধী তিনি। ‘বিশ্বকাপ জিততে হলে প্রয়োজন ব্রাজিলিয়ান প্রতিভা অথবা ইউরোপিয়ান টেকনিক-ট্যাকটিস। এখানে হঠাৎ করে এসে কিছু করা যায় না’_ ডুঙ্গা মনে করেন না উত্তর কোরিয়া কিছু করে বসবে তাদের বিপক্ষে। গড়পড়তা ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের মতো আবেগে ভাসেন না সাবেক এই ব্রাজিলিয়ান অধিনায়ক। তার ফুটবল ক্যারিয়ারে ব্যর্থতা নামের কোনো শব্দ নেই। তার নেতৃত্বে ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতেছে ১৯৯৪ সালে। তার কোচিংয়ে সর্বশেষ বড় ট্রফি জিতেছে ব্রাজিল। কোপা আমেরিকার পর গত বছর এই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেই কনফেডারেশন কাপ শিরোপা জিতেছে ডুঙ্গা বাহিনী। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে লাতিন আমেরিকা জোন থেকে শীর্ষস্থান নিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকায় এসেছে তারা। তাই ডুঙ্গার দলের বিপক্ষে আপসেট ঘটানোটা বেশ কঠিন। ডুঙ্গার ভেতরে যে কাঠিন্য আছে, তা সংক্রমিত হয়েছে দলের সবার মধ্যেই। প্রথম ম্যাচের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে ব্রাজিল লেফট ব্যাক মাইকেল বাস্তোস বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার সামর্থ্য আছে আমাদের।’ যে কোনো পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা যে এই ডুঙ্গা বাহিনীর আছে, তার প্রমাণ গত বছরের কনফেডারেশন কাপ ফাইনাল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ওই ফাইনালে একটা পর্যায়ে ০-২ গোলে পিছিয়েও পড়ে ব্রাজিল। কিন্তু তারপরও শেষ রক্ষা করতে পারেনি মার্কিনিরা। লুইস ফ্যাবিয়ানোর জোড়া গোলে ৩-২ গোলে ম্যাচ জিতে শিরোপা নিজেদের করে নেয় ডুঙ্গা বাহিনী।
ডুঙ্গার সবচেয়ে কট্টর সমালোচক সাবেক ব্রাজিল অধিনায়ক সক্রেটিস। এই ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি বলেছেন, ‘আমাদের ফুটবল ঐতিহ্য ও কৃষ্টিকে ধ্বংস করছে ডুঙ্গা। আর মুখে যতই জয়ের কথা বলুক না কেন, প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিতে পারে ডুঙ্গার এই ব্রাজিল।’ বিশ্বকাপের ঠিক আগে এ নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হননি ব্রাজিলিয়ান কোচ। তবে তার হয়ে জবাব দিয়েছেন তার শিষ্যরা। সক্রেটিসের এমন কড়া ভাষায় সমালোচনার পর কনফেডারেশন কাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা ফ্যাবিয়ানো বলেছেন, ‘সবাই মন থেকে উদ্বেগ মুছে ফেলুন। আমাদের ওপর আস্থা রাখুন, প্রস্তুতি নিন উৎসবের।’
পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের ছেড়ে কথা বলবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে উত্তর কোরিয়াও। আজকের ম্যাচে ব্রাজিলকে হারানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এশিয়ান রুনি নামে খ্যাত তাদের সেরা স্ট্রাইকার জং তায়ে সে। ‘সবাই বলছে, এ ম্যাচে আমরা হারব। কিন্তু আমরা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। আমরা সিংহ হৃদয়ের অধিকারী। আমরা জার্মানদের মতো। আমাদের আদর্শ জার্মান স্পিরিট। আমাদের বিশ্বাস, আমরা ব্রাজিলকে হারাতে পারব’_ জং তায়ের এমন মন্তব্যে পরিষ্কার, দীর্ঘদিন পর বিশ্বকাপ খেলতে নেমে নিজেদের সেভাবেই তুলে ধরার চেষ্টা করবে উত্তর কোরিয়ানরা।