আধুনিক জীবনে পারষ্পরিক তথ্য আদান-প্রদানে সম্ভবত সবচে বেশি ব্যবহৃত মাধ্যম হলো ইমেইল। সম্প্রতি মেকটেকইজিয়ার নামে এক টেকি সাইট প্রকাশ করেছে ইমেইল, বিশেষ করে ওয়েবভিত্তিক মেইল সার্ভিসের বেলায় বেশ কিছু সতর্কতার কথা, যা মেনে চললে আপনার ইমেইল থাকবে নিরাপদ।
বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে অনেকেই পপ মেইল ব্যবহার করলেও প্রায় সবাই ওয়েবভিত্তিক মেইলই  ব্যবহার করেন। পাশাপাশি, যে কোনো ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে রেজিস্ট্রেশন করতেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয় ওয়েবভিত্তিক ইমেইল ঠিকানা, যেমন জিমেইল, ইয়াহু বা হটমেইল। ফলে, এই ইমেইল অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক থাকা উচিৎ। সে জন্যই মেইল সতর্কতার টিপসগুলো দেয়া হলো এই ফিচার আর্টিকেলে।
নিচের পাঁচটি কৌশল অবলম্বন করলে মেইল ব্যবহারকারীরা ইমেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমাতে পারবেন।

অনেক ফিশিং সাইট (মূলত প্রতারক ওয়েবসাইট) রয়েছে যেগুলো দেখতে অবিকল বিশেষ কোনো মেইল সাইটের লগইন পেজের মতোই। এদের কর্মকাণ্ডের ধরন হলো- প্রথমে তৃতীয় কোনো সাইট আপনাকে আপনার মেইল অ্যাকাউন্টে লগইন করতে বলবে এবং লগইন করার জন্য একটি লিংক দেবে যেখানে আপনার পরিচিত কোনো মেইলের নাম (যেমন, জিমেইল ডটকম) লেখা থাকবে। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে বা অসতর্ক থাকলে হয়তো খেয়ালই করবেন না যে আপনি যে সাইটে লগইন করছেন তা আসলে ইমেইল সার্ভিসের নয়, বরং একই চেহারার অন্য ঠিকানার ওয়েবসাইট। এসব সাইট হ্যাকাররা তাদের সার্ভারে হোস্ট করে থাকে এবং কিছু স্ক্রিপ্ট ইনস্টলও করে থাকে। এতে করে আপনি যখনই লগইন করার চেষ্টা করবেন, আপনার ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড হ্যাকারদের হাতে চলে যাবে। তাই লগইন করার আগে সবসময় ঠিকানাটি সতর্কভাবে দেখে নিলে এই ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।

পাবলিক প্লেসে ইমেইল চেক করতে বাড়তি সতর্কতা
বিশেষ করে সাইবার ক্যাফে বা এ জাতীয় পাবলিক প্লেসে ইমেইল অ্যাকাউন্ট চেক করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এসব কম্পিউটারে যদি কি-লগার সেটআপ করা থাকে, তাহলে আপনি ওয়েবপেজে যা-ই টাইপ করুন না কেন, সব কম্পিউটারের নির্দিষ্ট একটি ফাইলে সেভ হতে থাকবে। এমনকি আপনার ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ডসহ। তাই পাবলিক প্লেসে ইমেইল চেক না করাই সবচে ভালো।
তবে যদি আপনাকে প্রায়ই পাবলিক প্লেস থেকে ইমেইল চেক করতে হয়, তাহলে আপনি সম্পূর্ণ আলাদা একটি জিমেইল অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। এবার আপনার আসল জিমেইল অ্যাকাউন্ট থেকে ‘সেটিংস > ফরওয়ার্ডিং’ ট্যাব থেকে নতুন জিমেইলের ঠিকানা দিয়ে দিন। এতে করে প্রতিটি ইমেইল একই সঙ্গে দু’টি অ্যাকাউন্টেই দেখা যাবে।
এবার পাবলিক প্লেসে ইমেইল চেক করার সময় দ্বিতীয় অ্যাকাউন্টটিই চেক করুন। এতে করে আপনি ইনবক্সও দেখে নিচ্ছেন, আপনার আসল অ্যাকাউন্টও থাকছে নিরাপদ। অবৈধ অ্যাক্সেস টের পাওয়া মাত্রই আপনি ফরওয়ার্ডিং বন্ধ করে দিতে পারবেন।

মনিটর করুন মেইলের অ্যাকাউন্ট অ্যাক্টিভিটি
এই সুবিধাটি কেবল জিমেইলেই পাওয়া সম্ভব। জিমেইলের এই বাড়তি সুবিধা থেকে আপনি সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে কবে, কখন এবং কোন আইপি থেকে লগইন করা হয়েছে এ বিষয়ক তথ্য দেখতে পাবেন। এ জন্য জিমেইলে লগইন থাকা অবস্থায় পৃষ্ঠার একেবারে নিচে ‘লাস্ট অ্যাকাউন্ট অ্যাক্টিভিটি’ লেখার পরে ডিটেইলস এ ক্লিক করুন। পপ-আপ উইন্ডো আসবে যেখানে সর্বশেষ কয়েকটি আইপি ঠিকানা থাকবে যেগুলো থেকে আপনার জিমেইলে ঢোকা হয়েছে। যদি আনকোরা নতুন কোনো আইপি থেকে লগইন করা হয়, তাহলে তা লাল রঙে মার্ক করা থাকবে। এছাড়াও একই সময় যদি অন্য কেউ আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করে থাকেন, তার আইপিও আপনি দেখতে পারবেন এবং তাকে সাইন আউট করাতে পারবেন।
অ্যাক্টিভিটিতে অন্য কারো অনুপ্রবেশ দেখতে পেলে অবিলম্বে পাসওয়ার্ড বদলে ফেলুন।

জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন
সহজ কোনো পাসওয়ার্ড, যেমন আপনার নাম, পরিবারের কারো নাম, জন্ম তারিখ, বাসার নাম্বার ইত্যাদি ইমেইলের পাসওয়ার্ড হিসেবে ভুলেও ব্যবহার করবেন না। এছাড়াও সহজে অনুমেয় কোনো শব্দও পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করা নিরাপদ না। কেননা, হ্যাকারদের সফটওয়্যারে এমন লক্ষ লক্ষ শব্দ আছে যেগুলো দিয়ে আপনার অ্যাকাউন্টে ঢোকার চেষ্টা করা হতে পারে। অতএব, অক্ষর ও সংখ্যার এলোমেলো সংমিশ্রণে কেবল আপনার মনে থাকবে এমন পাসওয়ার্ড দিন আর কিছুদিন পরপর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন। এতে করে পরিচিত কেউ কোনোভাবে আপনার পাসওয়ার্ড জেনে গেলেও বেশিদিন অনুপ্রবেশ করতে পারবে না।

সন্দেহজনক মেইল থেকে সাবধান
অনেক সময় হ্যাকাররা সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করে পাসওয়ার্ড হ্যাক করে ফেলে। হয়তো আপনার মেইলে আকর্ষণীয় কোনো অফারের ইমেইল আসবে যেটায় অংশ নিতে হলে আপনাকে তাদের দেয়া একটি লিংকে ক্লিক করতে হবে। লিংকে ক্লিক করা মাত্রই একটি বার্তা আপনাকে জিমেইলে পুনরায় লগইন করতে বলবে। এটিই ফিশিং সাইট এবং এখানে লগইন করলেই আপনার পাসওয়ার্ড চলে যাবে হ্যাকারের হাতে।
একইভাবে অ্যাকাউন্ট বিষয়ক সমস্যা দেখিয়ে ইমেইলেও পাসওয়ার্ড চেয়ে বসতে পারে হ্যাকাররা। মনে রাখবেন, ইয়াহু, জিমেইল বা হটমেইল কর্তৃপক্ষ কখনোই ইমেইলের মাধ্যমে আপনার পাসওয়ার্ড জানতে চাইবে না। অতএব, এসব ইমেইল থেকে সাবধান।
এতোকিছুর পরও হয়তোবা ইমেইল অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড হ্যাক হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড যেন পুনরুদ্ধার করতে পারেন তাই আগেভাগেই সিকিউরিটি প্রশ্ন ও উত্তর ঠিক করে রাখুন এবং বিকল্প ইমেইল ঠিকানাও দিয়ে রাখুন। এতে করে পাসওয়ার্ড পুনরুদ্ধার করে ইমেইল অ্যাকাউন্ট ফিরে পাবেন।