বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান কথিত বহুদলীয় গণতন্ত্রের সূচনা করে বলেছিলেন আই উইল মেইক পলিটিকস ডিফিকাল্ট। আজকের বাংলাদেশের রাজনীতির দিকে তাকালে বোঝা যায় তার সংকল্প বৃথা যায়নি।যুদ্ধাপরাধীদের শীর্ষ রাজনীতিতে এনে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে খাল কেটে কুমীর ছেড়ে দিয়েছিলেন জিয়া।জিয়া যে বিষবৃক্ষের চারা রোপণ করেছিলেন আজ তা মহীরুহ।

জামায়াতে ইসলাম সংশ্লিষ্টরা বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ফিরে পেতে শুধু রাজনীতি করেনি, খুব মনোযোগ দিয়ে ব্যবসা করেছে।সৌদি আরবের বিপুল অর্থ সহযোগিতায় শিবিরের সাথীদের জন্য স্কলারশীপ আর জামায়াতের রোকন শ্রেণীর জন্য ব্যবসার পুঁজি নিশ্চিত করেছে এই রাজনৈতিক দলটি। বাংলাদেশে ২১ বছর (৯৬ পর্যন্ত) ইসলামী প্রজাতন্ত্র গড়ার কাজটি জোরেশোরে করেছে বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি।বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেতারে আজান প্রচারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ধর্ম জানান দেয়ার চর্চার মধ্যে যে প্রজন্মটি বড় হয়েছে তারাও ভ্রান্তির মধ্যে পড়েছে রাষ্ট্রের ইতিহাস ও দর্শন নিয়ে।ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির জনকের সম্মান প্রশ্নে আমজনতা সংশয়ের মধ্যে বসবাস করেছে।ইসলাম ব্যবসায়ীরা জিয়াউর রহমানকে দাঁড় করাতে চেষ্টা করেছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিপক্ষ হিসেবে।১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে প্রথম বাংলাদেশের মৌলবাদ যাত্রাকে প্রতিহত করতে চেষ্টা করে। কিন্তু ততদিনে জামাত আশ্রয়ী ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা দাঁড় করিয়ে ফেলেছে।বর্তমানে তাদের বার্ষিক মুনাফা দেড় হাজার কোটি টাকা। ফলে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে লবিস্ট নিয়োগে এক হাজার কোটি টাকা খরচ করতেও কারো কাছে হাত পাততে হয়নি।

শেয়ার বাজারে বিএনপি-জামাত ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গ্রুপটির যথেষ্ট প্রভাব আছে। প্রভাব আছে বাজার সিন্ডিকেটেও।আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ট যে ব্যবসায়ীর শেয়ার বাজারে প্রভাব আছে,তার কাছের আত্মীয় যুদ্ধাপরাধী।ফলে আওয়ামী লীগকে চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে ইসলাম ব্যবসায়ীরা নানা ভাবে।

শিবিরের যে সাথীরা ইসলাম ব্যবসায়ীদের স্কলারশীপে পড়াশোনা করেছে তাদের লক্ষ্য ছিল বিসিএস দিয়ে আমলাতন্ত্রে ঢুকে পড়া। তারা এখন বিদ্যুত,পানি,সড়ক দেখাশোনা করে।আমলাতন্ত্রের নিরপেক্ষ অংশটি বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের অত্যাচারে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে কাজের উতসাহ হারিয়ে ফেলেছেন।অন্যদিকে শিবির থেকে আসা কর্মকর্তারা সংগঠিত।

অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত ব্যাপারটাকে দেখছেন রাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্র,সরকারের মধ্যে সরকার হিসেবে। আজ আমরা বাংলাদেশে যা দেখছি তা হচ্ছে জিয়াউর রহমানের পলিটিক্স ডিফিকাল্ট করে দেয়ার ডমিনো এফেক্ট।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি অদক্ষ মন্ত্রীসভা নিয়ে লড়ছেন ধূর্ত ইসলাম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে।নিরংকুশ আনুগত্যের প্রমাণ দিয়ে বা দাসখত দিয়ে যারা মন্ত্রী থাকতে চান সেরকম দুর্বল ব্যক্তিরা কাজে কর্মেও দুর্বল তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি।দুর্বলতার গ্লানিতে তারা এখন মিডিয়া এবং বুদ্ধিজীবীদের ওপর চড়াও হয়েছেন। এই মিডিয়া এবং বুদ্ধিজীবীরাই মৌলবাদ বিরোধী লড়াইয়ে সহগামী হয়েছিল।ফলে আওয়ামী লীগ তার চিরচেনা শত্রু বিএনপি জামাতের বাইরে আরেকটি নতুন শত্রুপক্ষ তৈরী করছে। মিডিয়া ও সুশীল সমাজ।শেখ হাসিনা গোঁ ধরেছেন,মিডিয়া যে মন্ত্রীর পদত্যাগ চাইবে তিনি তাকে আশ্রয় দেবেন।আওয়ামী লীগের অর্ধ শিক্ষিত দুএকজন মন্ত্রী বুদ্ধিজীবিদের জ্ঞানপাপী বলে গালাগাল করছেন।ফলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে তিক্ততা তৈরী হচ্ছে আওয়ামী লীগের।আওয়ামী লীগ সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে এখন দৃশ্যত মিডিয়া যুদ্ধে লিপ্ত।এতে ইসলাম ব্যবসায়ীরা বেশ খুশী। যা কিছু আওয়ামী লীগের বিপক্ষে যায় তাতেই ওদের লাভ।

জিয়াউর রহমানের বিসমিল্লাহ আর এরশাদের রাষ্ট্রধর্মের ডমিনো এফেক্ট আজকের সংবিধান।সংবিধানকে যে বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে পুরোপুরি ধর্ম নিরপেক্ষ করা গেলোনা সেটি ইসলাম ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা।সেই বাস্তবতায় মৌলবাদ এখন সময় ও সুযোগের অপেক্ষায়।

বুদ্ধিজীবীদের শহীদ মিনারে ঈদ করায় মৌলবাদীরা খুশী হবে।আর এই ঈদ করাকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ একটি অহিনকূল সম্পর্কের দিকে এগুচ্ছে।

উন্নয়ন বিষয়টি অর্থমন্ত্রী জিডিপি প্রবৃদ্ধি দিয়ে মাপলেও আমজনতা উন্নয়নকে চোখে দেখতে চায়। বাজার বিপর্যয় ,সড়ক বিপর্যয়,ঈদে বাড়ীফেরা আমজনতার জীবন বিপর্যয়ের কুরুক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে যখন কতিপয় অদক্ষ মন্ত্রী কান্ডজ্ঞানহীন কথাবার্তা বলেন তখন সেটা জনরোষ বাড়িয়ে দেয়।কাজের কাজ নেই মুখে কথার খই এরকম লোকদের আমজনতা তাদের কাজে রাখবে কেন? প্রধানমন্ত্রী আমজনতার পক্ষে এই মন্ত্রীদের চাকরী দিয়েছেন। বানিজ্যমন্ত্রী,যোগাযোগমন্ত্রী,নৌমন্ত্রী পাবলিক ইন্টারেস্ট দেখতে ব্যর্থ হয়েছেন।এদের সাইড লাইনে পাঠিয়ে ভালো খেলোয়াড় না আনলে ইসলাম ব্যবসায়ীরা ম্যাচটা জিতে যাবে। তখন আজকের সামগ্রিক ভোগান্তির সঙ্গে যুক্ত হবে নতুন উপসর্গ গ্রেণেড হামলা। হাওয়া ভবন আর বাংলা ভাই নাটকের মঞ্চায়ন আবার কে দেখতে চায়।

প্রধানমন্ত্রীর এই জেদাজেদিতে অযোগ্য মন্ত্রীরা আরো দুবছর নিজেদের ইন্টারেস্ট দেখতে পারবেন।নাগরিক সমাজ,মিডিয়াকে অগ্রাহ্য করলে সত্য জেনে দেখেও না দেখার ভান করছেন প্রধানমন্ত্রী এমনটাই মনে হবে।উনার জেদ জিতে গেলেও হেরে যাবে বাংলাদেশ।এমন কেউ কী নেই যে প্রধানমন্ত্রীকে নিরপেক্ষভাবে বাস্তব পরিস্থিতি বোঝাতে সক্ষম হবে।শহীদ মিনারে শোডাউন না করে নাগরিক সমাজ ঈদের দিন গণভবনে যেতে পারে প্রধানমন্ত্রীকে বোঝাতে।মুক্তিযুদ্ধের ভাবনার মানুষদের মধ্যে বিভাজন ইসলাম ব্যবসায়ীদের লাভবান করবে। সব জেনে বুঝে সে সুযোগ আমরা কেন তাদের দেব।

লিখেছেনঃ মাসকাওয়াথ আহসান
আমার ব্লগে প্রকাশিত
(তারিখঃ রবিবার, ০৮/২৮/২০১১ – ০০:৫৩)