হাতের বাহুতে পরার বাজু, গলায় হাঁসুলি, পুরো কানের সঙ্গে লেপ্টে থাকা পাশা পরতেন দাদি-নানিরা। এসব গয়না এখন ফ্যাশন সচেতন আধুনিকাদের কাছেও খুব প্রিয়। পুরোনো দিনের এসব গয়নাই দখল করে আছে এবারের ঈদের বাজার।

পুরোনো ধাঁচের গয়নার পাশাপাশি আদিবাসীরা যে ধরনের গয়না পরে, সেগুলোর আদলে তৈরি গয়নাগুলোও শোভা পাচ্ছে শহুরে তরুণীদের অঙ্গে। পায়েল, খোঁপার কাঁটা, আংটি—এগুলোও ঈদের সাজসজ্জার আবশ্যকীয় অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে।ঈদের বাকি আছে আর কয়েক দিন। পোশাক-আশাক কেনা প্রায় শেষ। কিন্তু পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গয়না না পরলে সাজগোজ পূর্ণতা পায় না। তাই কিশোরী-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সের নারীরা এখন গয়না কিনতে ব্যস্ত।

গতকাল শনিবার আসাদগেটের আড়ং, ধানমন্ডির বিবিয়ানা, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের বিভিন্ন গয়নার দোকানে বিক্রয়কর্মীরা দম ফেলার ফুসরত পাচ্ছিলেন না। ক্রেতারা তাঁদের ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছিল, ‘লাল পাথরেরটা দেখান; ওই যে ওপরের কালো মালাটা দেখান’ এমন ফরমায়েশে।প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যেও ক্রেতাদের তীক্ষ নজর। নতুন কেনা পোশাকের সঙ্গে গয়নার পাথরের রংটা মিলল কি না, নিজে তো যাচাই করছিলেনই, নিঃসন্দেহ হতে পাশের জনের কাছেও জানতে চাইছিলেন মতামত। কেউ কেউ আবার আরও এক ধাপ এগিয়ে গয়নাটি কানে, গলায় পরে দোকানে থাকা আয়নায় নিজেকে বারবার দেখে নিচ্ছিলেন।

একটা সময় ছিল, যখন বিকেলবেলায় নারীরা ‘লেইস-ফিতা-লেইস’ ফেরিওয়ালার হাঁক দেওয়ার অপেক্ষায় থাকতেন। ফেরিওয়ালা থরে থরে গয়নায় সাজানো বাক্সগুলো খুললে যে যাঁর পছন্দের জিনিসটি বাছতে মগ্ন হয়ে পড়ত। যুগ পাল্টেছে। এখন ফেরিওয়ালার অপেক্ষায় থাকার দরকার নেই। নগরের অলিগলিতে গড়ে ওঠা বিপণিবিতানের দোকানের কাচের আলমারির ভেতর থেকেই গয়নাগুলো ক্রেতাদের নজর কাড়ে। তবে বেইলি রোডে শাড়ির দোকানের সামনে বসে থাকা কাচের চুড়ির বিক্রেতা এক নারীর পসরা থেকে চোখ ফেরানো মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল ক্রেতাদের। সেই নারী যত্ন করে একেকজনের হাতে চুড়ি পরিয়ে দিচ্ছিলেন নতুন কেনা কাপড়ের সঙ্গে রং মিলিয়ে।

গয়নার শৌখিন ক্রেতারা একবার হলেও আড়ংয়ে ঢুঁ দেন। গতকাল আসাদ গেটের আড়ংয়ে ফারুক আহমেদ অনেকক্ষণ যাচাই-বাছাই করে দুই হাজার ৫৪১ টাকা দামের মুক্তার কয়েক স্তরের একটি মালা কিনলেন। স্কুলশিক্ষক ফারুকের ১২ বছরের দাম্পত্য। তিনি বললেন, ‘প্রায় এই ধরনেরই একটি মালা এক আত্মীয়াকে উপহার দিয়েছিলাম। আমার স্ত্রী তখন সেটি খুবই পছন্দ করেছিল। তাই ঈদে স্ত্রীর জন্য গয়নাটি কিনলাম।’

আড়ংয়ের বিক্রয়কর্মীরা জানালেন, রুপা ও স্বর্ণের গয়না—দুটোই সমানতালে বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণের ওপর রুবি, পান্না পাথর দিয়ে তৈরি সীতাহার এক লাখ থেকে দুই লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। স্বর্ণের ছোট কানের দুল বিক্রি হচ্ছে আট থেকে ২০ হাজার টাকায়। সাঁওতালি গয়না বিক্রি হচ্ছে ২৩ হাজার টাকায়। গলার হাঁসুলি বিক্রি হচ্ছে ১৪ হাজার টাকায়। ফুলের নকশা দিয়ে তৈরি রুপার গলা ও কানের গয়না বিক্রি হচ্ছে ৫৩ হাজার টাকায়। মুক্তা, প্রবাল, অ্যামেথিস্ট, পান্না—এসবের ওপর বিভিন্ন রঙের বিটস দিয়ে তৈরি গয়না পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ থেকে পাঁচ হাজার টাকায়। আড়ংয়ে বড় ঝুমকা, পাশা, রুপার বালা, চুড়িও ক্রেতাদের নজর কাড়ছে।

বিক্রয়কর্মী রিজভিয়া কুদ্দুস বলেন, ‘বাইরে এ ধরনের গয়না পাওয়া যায় না। তাই শৌখিন ক্রেতারা দাম বেশি হলেও এখানকার গয়না কিনবেনই।’ধানমন্ডির ফ্যাশন হাউস বিবিয়ানার বিক্রয়কর্মী আরেফিন জানালেন, হাতের বাজু ও গলার গয়না বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ টাকায়। এ ছাড়া এখানে পাঁচ ও ১০ পয়সা দিয়ে তৈরি মালা, গোলাপ ফুলের কারুকাজ করা বালা, বিভিন্ন বিটস দিয়ে তৈরি মালা ও বড় কানের দুল পাওয়া যাচ্ছে ৬০০ টাকার মধ্যে।তবে শুধু শাড়ি-গয়না দিয়ে সাজলেই হবে না। ঈদের বাজার ঘুরে রোদ-বৃষ্টিতে তো ত্বকের বারোটা বেজে গেছে। ঈদের দিন নিজেকে প্রিয়জনের চোখে সুন্দর করে তোলা এবং নিজের তৃপ্তির জন্য ক্রেতারা বিভিন্ন ভেষজ উপটানসহ অন্যান্য প্রসাধনীও কিনছে।

ঈদে মেহেদি দিয়ে হাত না রাঙালে তো আনন্দই বর্ণহীন। তাই প্যাকেটজাত মেহেদিরও চাহিদা বেড়ে গেছে। যাঁদের নিজে মেহেদি দেওয়া বা রূপচর্চার সময় নেই, তাঁরা ছুটছেন নগরের বিভিন্ন বিউটি পারলারে।

-prothom alo