অষ্টগ্রাম লঞ্চ ঘাটের গা ঘেঁষে অবস্হিত জেলা পরিষদ ডাক বাংলো। দেখতে অনেক টা সরকারি প্রাইমারি স্কুলের মতো…। লঞ্চে পরিচিত হাসান ভাইয়ের কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে কল দিলাম বাংলোর কেয়ারটেকার রন্জন ভাইকে। তিনি একজনকে পাঠিয়ে আমাদের একটা রুমের চাবি দিয়ে দিলেন আর বললেন তিনি বিকেলে এসে আর একটা রুম দিবেন। আমরা রুমে উঠে বাক্স পেটরা রাখতে রাখতেই হাসান ভাই নিয়ে এলেন স্হানীয় এক সাংবাদিক ভাইকে। উনার নাম ফরিদ রায়হান। রায়হান ভাইয়ের সাথে আলাপ করে অনেক কিছু জানতে পারলাম। অষ্টগ্রামে শিক্ষার প্রসার কম বলে সেখানে কুসংস্কার অনেক বেশী। পুরো অষ্টগ্রাম জুড়ে নাকি ৮০০-১০০০ মাজার আছে।

মাজার কেন্দ্রীক পূজার ব্যাপারটা আমাকে ভাবিয়ে তুলল। কিন্তু রায়হান ভাই আমাদের সতর্ক করে দিলেন মানুষকে যাতে মাজার বিষয়ক কোনো কটুক্তি না করি। এরা নাকি মাজারের ব্যাপারে যথেষ্ঠই ফ্যানাটিক। তিনি দাবি করলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তাজিয়া (১০ই মহররম) মিছিল নাকি হয় এই অষ্টগ্রামে। পুরান ঢাকাও নাকি ফেল মারবে। হাজার হাজার মানুষ দা-বটি-ছুরি নিয়ে বের হয়ে পরে রাস্তায়। গত বছর থানার পক্ষ থেকে অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে মিছিল না করতে নিষেধ করায় তারা কাঠের দা-ছুরি বানিয়ে মিছিল করে। এই এলাকার মানুষজন শিয়া কিনা জানতে চাইলে রায়হান ভাই বললেন মানুষ এসব ব্যাপারকে সামাজিক রীতিনীতি মনে করে, তারা বুঝেনা শিয়া-সুন্নি কি জিনিস!!!

রায়হান ভাই চলে যাওয়ার পর আমরা বেরিয়ে পরলাম অষ্টগ্রামের ভিতর টা ঘুরে দেখার জন্যে। প্রথমেই আমরা গেলাম ৪০০ বছরের পুরোনো কুতুব শাহী মসজিদ দেখার জন্য। এই মসজিদের পাশেই আছে কুতুব শাহ নামক এক সূফীর কবর, আরো ৪ টি বাধানো কবর দেখলাম মসজিদের গা ঘেঁষে। কবর গুলোও মসজিদের সমবয়সী হবে–মসজিদ সম্পর্কে বিস্তারিত দেখুন

এরপর আমরা গেলাম এলাকার কয়েকটি তথাকথিত বড় মাজারে। এক মাজারের পাশে দেখলাম পিলার সাইজের একটি পাথর, আমাদের রিক্সাওয়ালা মামা বললেন, এইটা নাকি জনৈক দুই পীর সাহেবের ডাংগুলি খেলার গুলি। তাদের একজন থাকতেন কারবালার মাঠে আরেকজন থাকতেন এখানে।

এই সেই ডাংগুলি

পুরো অষ্টগ্রাম জুড়ে শুধু পানি আর পানি। পানির উপর ভেসে থাকা একটি দ্বীপ যেন এই অষ্টগ্রাম। আর রয়েছে অসংখ্য রাজহাস। পুরাতন একটা জমিদার বাড়ি রয়েছে বাংলোর পাশেই।ঘুরতে ঘুরতে টিমের নায়কেরা এক জলদেবীর সন্ধান লাভ করে ধন্য হয় খুব ভাল মানের খাবার হোটেল নেই অষ্টগ্রামে, তবে সবকিছু তরতাজা পাওয়া যায় বলে হোটেলের খাবার খুব একটা খারাপ মনে হয়নি। নদীর তাজা মাছ খেয়ে তৃপ্ত হয়ে আবার হাটা ধরি পানিবেষ্টিত উচুনীচু পথে।
সন্ধ্যা লগনে আমরা ফিরে আসি বাংলোয়। এসে দেখি বাজিতপুর থেকে আরেকটা পিকনিক টিম এসেছে এবং তারা বিরাট আয়োজনে রাননা বান্না শুরু করেছে। রন্জন ভাই আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছিল, তিনি বাংলোর সবচেয়ে ভাল দুইটা রুম আমাদের দিয়ে দিলেন (সাধারনত স্পিকার আ:হামিদ সাহেব আসলে যেই রুমে রেষ্ট করেন)। উনাকে ভাড়ার টাকা দিয়ে আর আগামীকাল সকালে অষ্টগ্রাম থেকে মিঠামইনের ট্রলার ছাড়ার সময় জেনে নিয়ে আমরা রেষ্ট নেয়ার জন্যে স্পীকারের রুমে অবস্হান নিই রাতে নাজির হোটেলে অর্ডার দেয়ে খাবার খেয়ে অসম্ভব তৃপ্ত হয়ে বাংলোর সামনে নদীর ঘাটে আড্ডায় নিমগ্ন হই। নদীর মাতাল ঢেউ মুহুর্মুহু আঘাত করছে পাড়ে, প্রবল বাতাসে হৃদয়-মনে যে দোলা লেগেছিল তার রেশ কাটাতে কাটাতে বেজে গেল রাত ৩ টা।
চলবে….
পরের পর্বে থাকছে মিঠামইন অভিযান