নতুন অর্থবছরের বাজেটে সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি ধরা হবে ৩৪ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। আর এ ঘাটতি পূরণের জন্য অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ২৩ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে। বাকি ১০ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ থেকে সংস্থান করা হবে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে যে ঋণ নেওয়া হবে, এর মধ্যে ১৫ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা নেওয়া হবে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে (ট্রেজারি বিল ও বন্ড) এবং ব্যাংকবহির্ভূত উৎস (জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্পগুলো) থেকে ধার নেওয়া হবে আট হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আগামী ১০ জুন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ২ জুন জাতীয় সংসদে শুরু হবে বাজেট অধিবেশন। ২০১০-১১ অর্থবছরের এ বাজেট প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন শেষ মুহূর্তের ঘষামাজার কাজ চলছে। দু-তিন দিনের মধ্যে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা লেখার কাজও শেষ হয়ে যাবে। এরপর তা পাঠানো হবে ছাপাখানায়।
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী কালের কণ্ঠকে বলেন, নতুন বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ কতো হবে, তা এখন বলা যাবে না। তবে এটা বলতে পারি, এবার বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৪ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে থাকবে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটেও বাজেট ঘাটতি ৪ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।

চলতি ২০০৯-১০ অর্থবছরে সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা (জিডিপির ৫ শতাংশ)। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ২৭ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা করা হয়েছে। মূল বাজেটে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৬ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৮ হাজার ৬১১ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। চলতি বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তিন হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। কিন্তু আট মাসে অর্থাৎ জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে এ খাত থেকে আট হাজার ৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশি সুদ হওয়া সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরে সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ না নিয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি পরিমাণ ঋণ নিয়েছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে একদিকে যেমন বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতো, অন্যদিকে বাজারে টাকার প্রবাহ বাড়ায় মূল্যস্ফীতির চাপ আরো বাড়ত। এ কারণেই জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্পগুলো থেকে সরকার বেশি ঋণ নিয়েছে। এ ধারাবাহিতায় আগামী অর্থবছরেও সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার আট হাজার ৭০ কোটি সাত লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় তিনগুণ। কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছে, তার থেকে বেশি টাকা পরিশোধ করেছে। গত অর্থবছরে একই সময়ে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার ছয় হাজার ৫১৬ কোটি ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিল।

সঞ্চয়পত্র থেকে ধার বেড়ে যাওয়ায় সরকারের ভবিষ্যৎ ঋণের বোঝা বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ব্যাংকের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বেশ বেশি। এ কারণে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে সুদ-আসলসহ সরকারের ঋণের বোঝা বেড়ে যায়।
গত ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সব মিলিয়ে এ খাত থেকে সরকার চার হাজার ৪০৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে নিয়েছিল চার হজার আট কোটি টাকা।

সরকারের রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেটে খরচ কম হওয়ায় এবার ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি বলে জানান মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। এ প্রসঙ্গে গত ১৬ মার্চ অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে চলতি অর্থবছরের ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) বাজেট বাস্তবায়ন অগ্রগতিসংক্রান্ত যে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন তাতে বলা হয়, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন স্কেলসহ রাজস্ব বাজেটের অন্যান্য কার্যক্রম পূর্ণমাত্রায় শুরু না হওয়া এবং বৈদেশিক সূত্রে সাহায্য (প্রকল্প সাহায্যসহ অন্যান্য সহায়তা) বেশি পাওয়ার কারণে এবার ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ ঋণাত্দক হয়েছে। তবে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ এবার বেশ বেড়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।

এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, নতুন বাজেটের মোট আকার হবে এক লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। ইতিমধ্যে ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হবে ৯২ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। বাকিটা পূরণের (ঘাটতি) জন্যই অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হবে।