কমরেড মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা

একটি স্ফুলিঙ্গই দাবানল জ্বালতে পারে: মাওসেতুং

এক.সাতের দশকের নকশালী আন্দোলন থেকে শুরু করে এ দেশে যত গেরিলা যুদ্ধ গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে, চরম আত্নত্যাগ থাকা সত্বেও আদর্শগত বিভ্রান্তি, জনবিচ্ছিন্নতা, গোষ্ঠি বিপ্লবী মানসিকতাসহ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এর সব কয়টিই শেষ পর্যন্ত মারাত্নক ব্যর্থতায় পর্যবেসিত হয়েছে–একমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবেন্দ্র নারায়ন (এমএন) লারমার নেতৃত্বাধীন সাবেক গেরিলা গ্রুপ শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র সংগ্রামটি ছাড়া।

এর কারণ জনসংহতি সমিতির রাজনৈতিক শাখা শান্তিবাহিনী আদর্শের ভিত্তিতে সত্যিকার অর্থেই পাহাড়ি জনগণের ভেতর থেকে গড়ে ওঠা একটি সফল জনযুদ্ধ গড়ে তুলতে পেরেছিল। তাই সব ধরণের সামরিক- বেসমারিক নির্যাতন-নিপীড়ন, অসংখ্য গণহত্যা, পাহাড়ি গ্রামে অগ্নিসংযোগ, উচ্ছেদ, জনসংখ্যার ভারসাম্য নষ্ট করার অভিপ্রায়ে সমতল থেকে ছিন্নমূল বাঙালিদের পাহাড়ে অভিবাসন (সেটেলার) সত্বেও এবং উপদলীয় সংঘাতে এমএন লারমা মারা যাওয়ার পরেও গেরিলা গ্রুপ শান্তিবাহিনী দুই দশকের বেশী সময় ধরে সফলভাবে সশস্ত্র সংগ্রাম অব্যহত রাখে।

এনএন লারমার পরে তার অনুজ, সাবেক শান্তিবাহিনী প্রধান, বর্তমান আঞ্চলিক পরিষদ ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র সংগ্রামকে একটি যৌক্তিক পরিনতিতে এগিয়ে নিতে সক্ষম হন।

এরই ধারাবাহিকতায় এরশাদ, খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে ধারাবাহিক শান্তি-সংলাপের পর ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি। ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রূযারি প্রায় দুহাজার সদস্যর অস্ত্র সমর্পণের মধ্যে বিলুপ্ত ঘটে শান্তিবাহিনীর। একই সঙ্গে পাহাড়ে অবসান ঘটে সেনা বাহিনীর সঙ্গে শান্তিবাহিনীর প্রায় দুদশকের রক্তক্ষয়ী বন্দুক যুদ্ধের। শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের সুফল হিসেবে ভারতের ত্রিপুরায় এক যুগের গ্লানিময় জীবনের অবসান ঘটিয়ে দেশে ফেরেন প্রায় ৬০ হাজার পাহাড়ি শরণার্থী।

এর আগে সেই ১৯৬০ সালে কর্ণফুলি নদীতে বাধ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল রাঙামাটির কাপ্তাই জলবিদ্যুত কেন্দ্র। এতে পাহাড়ের প্রায় ৫৪ হাজার একর জমি পানিতে তলিয়ে যায়। প্রায় এক লাখ পাহাড়ি মানুষ বাস্তুভিটা ও চাষবাসের জমি হারিয়ে রাতারাতি পরিনত হন পাহাড়ের উদ্ধাস্তুতে। বহু পরিবার জীবিকার সন্ধানে পাড়ি জমান ভারতের ত্রিপুরা, অরুণাচল ও মিজোরামে। ক্ষতিগ্রস্থরা তেমন কোনো ক্ষতিপূরণও পাননি। সেটিই ছিল পাহাড়ি আদিবাসীদের ওপর রাষ্ট্রীয় বড় ধরণের আঘাত।

উন্নয়নের নামে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ণের এই নগ্ন হামলার এ ঘটনা সে সময়ের তরুণ এমএন লারমাকে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছিল। এ কারণে ১৯৭০ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর, স্বাধীনতার বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের কাছে পাহাড়ে ‘আঞ্চলিক স্বায়ত্ত্বশাসনের’ চার দফা দাবি তুলে ধরেন। সে সময় রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব ঘৃণাভরে তার এই দাবি উপেক্ষা করেছিলেন। ওই বছর ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশের সংবিধানে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভাষাগত সংখ্যালঘু পাহাড়িদের ‘বাঙালি’ হিসেবে আখ্যায়িত করার প্রতিবাদে তিনি গণপরিষদ অধিবেশন বর্জন করেন।

এ সময় এমএন লারমা তার সংসদ ভাষণে বলেছিলেন:

বাংলাদেশের কোটি কোটি জনগণের সঙ্গে আমরা জড়িত। সবদিক দিয়েই আমরা একসঙ্গে বাস করছি। কিন্তু আমি একজন চাকমা। আমার বাপ, দাদা, চৌদ্দ পুরুষ, কেউ বলেন নাই, আমি বাঙালি!…

অর্থাৎ, সংখ্যাগুরু বাংলা ভাষাভাষীর রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্মলগ্নেই তিনি বুঝেছিলেন যে, আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসন ছাড়া ভাষাগত সংখ্যালঘু পাহাড়ি আদিবাসীর মুক্তি নেই। তাই তিনি সেই ১৯৭৩ সালেই স্বতন্ত্র সাংসদ ও জনসংহতি সমিতির আহ্বায়ক হিসেবে সংসদ অধিবেশনে তুলে ধরেছিলেন পাঁচ দফা দাবি নামা। এগুলো হচ্ছে:

ক. আমরা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা সমেত পৃথক অঞ্চল হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পেতে চাই। খ. আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের অধিকার থাকবে, এ রকম শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন চাই। গ. আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষিত হবে, এমন শাসন ব্যবস্থা আমরা পেতে চাই। ঘ. আমাদের জমি স্বত্ব জুম চাষের জমি ও কর্ষণ যোগ্য সমতল জমির স্বত্ব সংরক্ষিত হয়, এমন শাস ব্যবস্থা আমরা পেতে চাই। ঙ. বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল হতে এসে পার্বত্য চট্টগ্রামে এসে যেনো কেহ বসতি স্থাপন করতে না পারে, তজ্জন্য শাসনতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থার প্রবর্তন চাই।…

এ সব দাবিনামার স্বপক্ষে এমএন লারমা সংসদের তার ভাষণে বলেছিলেন:

আমাদের দাবি ন্যায় সঙ্গত দাবি। বছরকে বছরকে ধরে ইহা একটি অবহেলিত শাসিত অঞ্চল ছিলো। এখন আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ পার্বত্য চট্টগ্রামকে পৃথক শাসিত অঞ্চল, অর্থাৎ আঞ্চলিক স্বায়ত্ব শাসিত অঞ্চলে বাস্তবে পেতে চাই।…

কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, সে সময় মুজিব সরকারের ‘বাঙালি’ জাত্যাভিমানের প্রবল জোয়ারে তার এই দাবি নামা ভেসে গিয়েছিল।

দুই.এমএন লারমাই প্রথম পার্বত্য চট্টগ্রামের ১১টি ভিন্ন ভাষাভাষী পাহাড়ি জনগোষ্ঠিকে সংগঠিত করে সশস্ত্র পন্থায় তাদের মুক্তির পথ দেখান। তিনিই প্রথম গেরিলা যুদ্ধকে সঠিকভাবে এ দেশের প্রেক্ষাপটে সূত্রায়ন, নেতৃত্বদান ও পরিচালিত করতে সক্ষম হন। অন্যদিকে, নানা সীমাবদ্ধতা ও বিভ্রান্তির চোরাবালিতে অন্যান্য মাওবাদীরা চরমপন্থীরা এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিলেন, যা আগেই বলা হয়েছে।

লক্ষ্যনীয়,সংসদ অধিবেশনে উত্থাপিত এমএন লারমার ওই পাঁচ দফাই আরো পরে সংশোধিত আকারে জনসংহতি সমিতির পাঁচ দফায় পরিনত হয়। এই পাঁচ দফার ভিত্তিতেই এমএন লারমার মৃত্যূর (১০ নভেম্বর, ১৯৮৩) পরও অনুজ গেরিলা নেতা সন্তু লারমা শান্তিবাহিনী সশস্ত্র সংগ্রাম অব্যহত রাখেন।

একই সঙ্গে শান্তিবাহিনীর মূল দল জনসংহতি সমিতি সরকারের সঙ্গে আলোচনার পথও খোলা রেখেছিল; এর সূত্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল এমএন লারমার জীবন দশাতেই।

শান্তিবাহিনীর চলমান জনযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অসংখ্য পাহাড়ি–বাঙালির রক্তের বিনিময়ে অবশেষে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তি। এই শান্তিচুক্তিরও মূল কথা, পাহাড়ে সীমিত আকারে আঞ্চলিক শাসত্বশাসন প্রতিষ্ঠা। তবে ভূমি সমস্যার সমাধানসহ শান্তিচুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো এখনো বাস্তয়ন না হওয়ায় পাহাড়ি আদিবাসীদের ভাগ্যের তেমন কোন পরিবর্তনই হয়নি।… সেটি অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ।

তিন. যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে বৃহত্তর বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রবল জোয়ারের বিপরীতে এমএন লারমাই প্রথম জুম্ম (পাহাড়ি) জাতীয়বাদী চেতনায় পাহাড়ের ১১টি ক্ষুদ্র জাতীস্বত্বাকে সংগঠিত করেছিলেন; যাদের ব্রিটিশ ও পাকিস্তান সরকার তো মানুষই মনে করেনি, ‘উপজাতি’ বানিয়ে রেখেছিলো। আর স্বাধীন বাংলাদেশে মুজিব সরকার তো তাদের বাঙালিই হয়ে যেতে বলেছিলেন! এ কারণে পাহাড়ি নেতা এমএন লারমাকে বলা হয়, জুম্ম (পাহাড়ি) জাতীয়তাবাদের অগ্রদূত।

দৃশ্যতঃ ক্ষমতাসীন একই আওয়ামী লীগ সরকার সম্প্রতি আদিবাসী> উপজাতি> ক্ষুদ্র নৃ জাতিগোষ্ঠি> বাঙালিরাই আদিবাসী> উপজাতিরা বহিরাগত> এবং ক্রমশ… একই উগ্র জাত্যাভিমানের বিষ উস্কে দিয়েছে,এই বিষফোঁড়ার জরুরি অস্ত্রপচার ছাড়া পাহাড় ও সমতলের প্রায় ৭০টি ভাষাগত সংখ্যালঘু প্রায় ২৫ লাখ জনজাতির মুক্তি নেই। এমএন লারমার আদর্শটি তাই এখনো প্রাসঙ্গিক।

এই মহান পাহাড়ি নেতার ২৮ তম মৃত্যু বার্ষিকীতে তাকে জানাই অগাধ শ্রদ্ধা, লাল সেলাম।

পরিশিষ্ট: সংবাদপত্রের খবরে এমএন লারমার জীবন,
সংগ্রাম ও মৃত্যূ সংবাদ: ‘শান্তিবাহিনী’ প্রধান মানবেন্দ্র লারমা নিহত’


বাংলাদেশ জাতীয় পরিষদের প্রাক্তন সদস্য, তথাকথিত শান্তিবাহিনীর প্রধান এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যান মি: মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা নিহত হইয়াছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়া গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাত্রে আমাদের রাঙ্গামাটি সংবাদদাতা জানান, মি: লারমা গত ১০ই নভেম্বর সীমান্তের অপর পারে ভারতে ইমারা গ্রামে বাগমারা নামক স্থানে শান্তিবাহিনীর কল্যানপুর ক্যাম্পে প্রতিদ্বন্দ্বী শান্তিবাহিনীর ‘প্রীতি’ গ্রুপের সদস্যদের হামলায় নিহত হইয়াছেন।

 বিভক্ত শান্তিবাহিনীর মধ্যে মি: মানবেন্দ্র চীনপন্থী ও ঘাতক প্রীতদলের নেতা প্রীতি চাকমা ভারতপন্থী বলিয়া পরিচিত। মানবেন্দ্র লারমার সহিত তাঁহার বড় ভাইয়ের শ্যালক মনি চাকমা, খাগড়াছড়ি হাই স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক অপর্ণা চরম চাকমা, কল্যানময় চাকমা ও লেফটেনেন্ট রিপনসহ শান্তিবাহিনীর আটজন সদস্য ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। শান্তিবাহিনীর ছয়-সাতজন কেন্দ্রীয় নেতাও এ হামলায় আহত হয়।

ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত এই ক্যাম্পে শান্তিবাহিনীর কেন্দ্রীয় নেতা সন্তু লারমা, রূপায়ন দেওয়ান, ঊষাতন তালুকদারসহ অন্যান্য নেতার ভাগ্যে কি ঘটিয়াছে, তাহা এখনো জানা যায় নাই। সন্তু লারমাকেই মানবেন্দ্র লারমার পর শীর্ষ নেতা বলিয়া মনে করা হইত।

কল্যাণপুর ক্যাম্প অপারেশনের ঘটনা সম্পর্কে জানা গিয়াছে যে, ক্যাপ্টেন এলিনের নেতৃত্বে প্রীতিগ্রুপের আট-দশজনের একটি সুইসাইডাল স্কোয়াড লারমা গ্রুপের শিবিরে সশস্ত্র অভিযান চালায়। প্রীতি কুমার চাকমা বর্তমানে তাহার দলবল লইয়া পানছড়ি এলাকায় লারমা গ্রুপের সদস্যদের খুঁজিয়া বেড়াইতেছে।

উল্লেখ্য,গত ১০ই নভেম্বর মতিবান পুলিশ ক্যাম্পের এক মাইল পূর্বে প্রীতি গ্রুপ লারমার মামার বাড়িতে অবস্থানরত শান্তিবাহিনীর সদস্যদের উপর আক্রম চালায়। উক্ত আক্রমনে অবশ্য কেহ হতাহত হয় নাই।

মি:মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয়দের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি নামে একটি সংগঠন গড়িয়া তোলেন। সাবেক সংসদ সদস্য মি: রোয়াজা ছিলেন উক্ত সংগঠনের সভাপতি এবং মি: লারমা ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। ইতিপূর্বে পাহাড়ি ছাত্র সমিতির মাধ্যমে মানবেন্দ্র লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষত তরুণদের সংগঠিত করেন।

১৯৭০ এর নির্বাচনে মি:লারমা স্বতন্ত্র প্রার্থী রূপে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিত পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনেও মি:লারমা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। গণপরিষদে তিনি একটি খসড়া সংবিধান উপস্থাপন করিয়াছিলেন। লারমা সংসদ সদস্য হিসাবে নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিচালনাকালে পাহাড়ি ছাত্র সমিতিসহ তরুণদের সহিত তাহার ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।

১৯৭৪ সালে মি:লারমা জনসংহতি সমিতির একটি সশস্ত্র গ্রুপ গঠন করেন,পরে উহা শান্তিবাহিনী রূপে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৭৬ সালে শান্তিবাহিনীর মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। মি: লারমা চীনাপন্থী ও প্রীতি কুমার চাকমা ভারতপন্থী নীতি গ্রহণ করেন। ১৯৮১ সালে শান্তিবাহিনী সম্পূর্ণ রূপে দ্বিধা-বিভক্ত হয়। এই সময় আত্নকলহে শান্তিবাহিনীর শতাধিক সদস্য নিহত হয়। ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বরে, ১৯৮২ সালের আগস্টে এবং ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে দুই গ্রুপের মধ্যে বড় ধরণের সংঘর্ষ হয়।

মি:মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা ছাত্রাবস্থা হইতেই বামপন্থী রাজনীতির সহিত জড়িত ছিলেন। তাঁহার পিতার নাম চিত্তকিশোর লারমা। তাঁহাদের আদিবাড়ি ছিলো কোতয়ালী থানার মহাপুরম গ্রামে। কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের ফলে ওই এলাকা প্লাবিত হওয়ায় তাহারা পানছড়ি এলাকায় চলিয়া যান। মি: লারমার স্ত্রীর নাম পঙ্কজিনী লারমা। তাহার দুই পুত্র রহিয়াছে। কিন্তু তাহাদের নাম জানা যায় নাই।

মি:লারমা ১৯৫৮ সালে মেট্রিক পাস করেনএবং ১৯৬০ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ হইতে আইএ এবং ১৯৬৩ সালে বিএ পাস করেন। এ সময় সরকার বিরোধী কার্যকলাপের দায়ে তাহাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু নবীন অপরাধী হিসাবে তাহার দণ্ড হ্রাস করিয়া নির্দিষ্ট সময়ে থানায় হাজিরা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এ সময় তিনি দীঘিনালা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন এবং পরে বিএড ও এলএলবি পাস করেন।

 

দৈনিক ইত্তেফাক, ১৮ নভেম্বর, ১৯৮৩, প্রথম পৃষ্ঠা, দুই কলাম  
ছবি: এমএন লারমা, আন্তর্জাল।

আমার ব্লগ এর বিপ্লব রহমান  থেকে সংকলিতঃ-