বানরের জন্য পরিচিত একটি গ্রামের নাম রামপুর। পাকুন্দিয়া ও মনোহরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে এই গ্রামটি অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এই গ্রামটিতে দীর্ঘকাল থেকেই বানরের সাথে মানুষ মিলেমিশে বসবাস করে আসছে। রামপুরে বানরের বংশবিস্তার সম্পর্কে প্রবীণদের মুখে শোনা যায়, প্রায় দেড়শ’ বছর পূর্বে রামপুর ভূমি অফিসের জনৈক তহসিলদার শখের বশে একটি পুরুষ বানর পুষতেন। তিনি বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাবার সময় বানরটি রেখে যান। পরে অপর এক তহসিলদার আরও একটি মাদি বানর কিনে আনেন। বছর খানেক পর তিনি বদলি হলে বানর দুটিকে গ্রামের একটি গহিন জঙ্গলে অবমুক্ত করে যান। পর্যায়ক্রমে বানরের বংশ বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে এই গ্রামে আড়াই থেকে তিন হাজার বানর রয়েছে বলে জানা গেছে। গ্রামটিতে গেলে মনে হয় এ যেন বানরের রাজ্য। রামপুর গ্রামের বৃদ্ধ কৃষ্টদাস ও হরিপদ বণিক জানান, বানরগুলো জমির ধান, গাছের কলা, পেঁপে, শশা, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন ফল খেয়ে ফেলে এবং বাড়ি ঘরে তাণ্ডব চালিয়ে শাক-সবজি নিয়ে যায়। বর্তমানে পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবে বেকায়দায় পড়েছে বানরগুলো। অনেক বানর রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় মানুষ বানরের অনেক অত্যাচার সহ্য করেও গ্রামের ঐতিহ্য মনে করে বানরগুলোকে নিধন করে না।

প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থী বানর দেখতে আসেন। সারা পথের ক্লান্তি যেন অনেকটাই দূর হয়ে যায় এসব বিচিত্র বানর দেখে। দর্শনার্থীরা মুড়ি, পাউরুটি, বিস্কুট ও কলাসহ অন্যান্য শুকনা খাবার নিয়ে আসলে পরম আত্মীয়ের মতো তাদের কাছে ছুটে যায় বানররা, যেন কত চেনা ও পরিচিত মুখ। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার মাধ্যমে বানর আর প্রকৃতির সমন্বয়ে রামপুর হতে পারে এক অপূর্ব দর্শনীয় প্রাণী বৈচিত্র্যের অভয়ারণ্য।