আমার এলাকার একমাত্র হাইস্কুলের নাম- কাঞ্চণপুর হাওড় উচ্চ বিদ্যালয়, এটি মিঠামইন উপজেলার প্রত্যন্ত হাওড়ে অবস্থিত যা আশে পাশের ১০ কি.মি. দুরত্ব পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালাভের একমাত্র ভরসা। শিক্ষক সংখ্যা ও স্কুলের অবকাঠামো অত্যন্ত নাজুক। এলাকার বাইরের শিক্ষকেরা ওখানে গিয়ে চাকরি করতে উৎসাহী হন না, কারণ এলাকাটি যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অন্যান্য অবকাঠামোগত কারণে অনেক বেশি পিছিয়ে আছে। আধুনিকতার সবরকম দিক হতেই এর দুরত্ব মফস্বল শহর হতেই যোজন যোজন। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদেরকে হাওড়ের প্রাকৃতিক অবস্থার সাথে সবসময়েই যুদ্ধ করে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে হয়। বর্ষার শুরুতে হাওড় যখন পানিতে পূর্ণ হতে থাকে তখন অবধারিত ভাবেই গ্রামগুলোর মধ্যে যোগাযোগের তেমন কোন মাধ্যম থাকে না, না যাওয়া যায় পায়ে হেটে, না পারা যায় নৌকায়। ঐ সময় বাধ্য হয়েই স্কুল বন্ধ রাখতে হয় ১.৫ মাসের মতো। ঠিক এমনভাবেই আবারও বন্ধ রাখতে হয় পানি চলে যাওয়ার সময়। এছাড়া বৈশাখ মাসে ঐ অঞ্চলে ছোটবড় সবাইকেই কাজ করতে হয়, তখনও ১ মাসের মতো স্কুল বন্ধ থাকে।

বছরে মূল ক্যালেন্ডারের বাইরে ১.৫ + ১.৫ + ১ = ৪ মাসেরও অধিক সময় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকে। শিক্ষিতজনের সংখ্যা খুব হাতেগোনা হওয়ায় এবং বহিরাঞ্ঝলের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার জন্য এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট টিউশন কিংবা কোচিং করার কোন সুযোগ নেই। যা পড়তে হয় তা নিজে নিজে ও একমাত্র স্কুলের শিক্ষকদের শরণাপন্ন হয়েই। এমনকি অধিকাংশ বাড়িতেই পড়ার তদারকি করার মতো মানুষটা পর্যন্ত নেই। এছাড়া পড়াশোনার আরেক বাধা বিদ্যুৎ, ওখানে এখনও বিদ্যুতের আলো পৌছেনি। অধিকাংশ বাড়িতেই রাত আটটার মধ্যে সকল কাজ সেরে লোকজনদের ঘুমিয়ে পড়তে দেখা যায়। সন্ধ্যারাত ছাড়া কুপিবাতির তেল খরচ জোগানোর মতো সামর্থ্য অধিকাংশ অভিবাবকই রাখেন না। তারপরও বছর ৫ কি ১০ বছর পর পর একজন দুজন ভাগ্যবান মেধাবীর দেখা মেলে যারা কিনা এমনসব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে দেশসেরা বিশ্ববিদ্যায়, ইন্জিনিয়ারিং কলেজ, মেডিকেল প্রভৃতিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়।  লিখেছেনঃ জয়নাল আবেদীন