গৌরবময় ইতিহাসে জ্বলজ্বল মান ঐতিহ্যবাহী একটি প্রাচীণ ও সমৃদ্ধশালী জনপদের নাম কিশোরগঞ্জ ।  কিশোরগঞ্জ জেলার কৃষ্টি হচ্ছে কৃষি আর কালচার হচ্ছে এগ্রিকালচার । বহু এবং বৈচিত্রমায় কৃষিতে ভরপুর কিশোরগঞ্জ জেলা। কিশোরগঞ্জের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে কৃষি । আরো স্পষ্ট করে যদি বলা হয়, তার অর্থনীতি অনেকটাই  র্নিভরশীল হাওরের উপর  । কিশোরগঞ্জের ১৩টি জেলার মধ্যে ১২টিই হচ্ছে ‘বাংলাদেশ হাওর ও জলাশয় উন্নয়ন বিভাগ’ এর অন্তভুক্ত; মোট ৩৭৩ টি হাওরের মধ্যে কিশোরগঞ্জ জেলায় আছে ৯৭ টি হাওর । মানুষের আয়, উন্নতি, সমৃদ্ধি, চাল-চলন সবই কৃষির সাথে সম্পকৃত ।

 কিশোরগঞ্জ জেলার জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস পর্যালোচনা করলেই এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, কৃষিই হচ্ছে জীবীকার প্রধান ক্ষেত্র । কৃষিতে ৬০.১৮%, অকৃষি শ্রমিক ৪.২৭%, শিল্প ০.৮৭%, ব্যবসা ১৫.২৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.১২%, নির্মাণ ১.১৯%, ধর্মীয় সেবা ০.২৩%, চাকরি ৫.২৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৮৮% এবং অন্যান্য ৮.৭৩% লোক নির্ভর শীল ।শিক্ষার হার মাত্র ৪০.৯ % । এ জেলার হাওর বেষ্টিত উপজেলার অধিকাংশ অধিবাসি কোন না কোন সময় মাছ ধরা (সেটা নিজেদের জন্য) বা মৌসুমী জেলে হিসাবে ক্রয় বিক্রয়ের সাথে জড়িত ।  কিন্ত জলদাস হিসাবে সার্বক্ষণিক মতস্যজীবী হচ্ছে শতকরা মাত্র ২.৫৯ ভাগ । অর্থনীতির একটা বিশাল অংশ আসে মতস্য খাত হতে । কিশোরগঞ্জ জেলার কৃষি বিষয়ক সাধারণ পরিসংখ্যান এবং অন্য কিছু তথ্য টেবিল নং-১-১১ এ দেখা যেতে পারে ।

টেবিল নং-১ঃ এক নজরে কিশোরগঞ্জ জেলার কৃষি পরিসংখ্যান

ক্রঃনং              বিবরণ পরিমাণ/সংখ্যা
জেলার মোট আয়তন ২৬৮৮.৫৯ বর্গ কিলোমিটার
উপজেলার সংখ্যা ১৩ টি
পৌর সভার সংখ্যা টি
ইউনিয়নের সংখ্যা ১০৮ টি
গ্রামের সংখ্যা ,৭২৫ টি (২০১১ সনের আদম শুমারী অনুযায়ী)
মৌজার সংখ্যা ৯৪৬ টি
কৃষি ব্ল­কের সংখ্যা ৩৪১ টি
জন সংখ্যা (বিবিএস ২০১১) ৩০,২৮,৭০৬  জন (সমন্বয়কৃত, ২০১১ সনের আদম শুমারী অনুযায়ী)
  ) পুরুষ ১৪,৮৯,৭৩৯ জন (সমন্বয়কৃত)
  ) মহিলা ১৫,৩৮,৯৬৭ জন (সমন্বয়কৃত)
মোট কৃষক পরিবারের সংখ্যা ,৫৬,২০৩ টি
১০ কৃষক শ্রেণী (সংখ্যা)
  ) প্রান্তিক ২৬% ,১৭,২৩৩ টি
  ) ক্ষুদ্র ১৫% ৭০,৫৮৫ টি
  ) মাঝারী % ৩৯,৬১৬ টি
  ) বড় % ,৪৬৫ টি
     
১১ মোট জমি ,৭৩,১২১ হেক্টর
১২ স্থায়ী পতিত জমি ,৭৩৯ হেক্টর
১৩ অস্থায়ী পতিত জমি ১০,৫৫৭ হেক্টর
১৪ বনভূমি ৬২০ হেক্টর
১৫ নীট আবাদী জমি ,১৫,৬৮৮ হেক্টর

টেবিল নং-২ঃ  আবাদী জমির পরিমাণ

১৬ এক ফসলী জমি ৫৩%   ,১৫,৭৭১ হেক্টর
দোফসলী জমি ৩০% ৬৫,৯০৬ হেক্টর
তিন ফসলী জমি ১৫% ৩৩,০৬০ হেক্টর
চার ফসলী জমি % ,৮০৪ হেক্টর
১৭ মোট ফসলী জমি ,৬১,৯৭৯ হেক্টর
১৮ ফসলের নিবিড়তা ১৬৮.০০%
১৯ মধ্যম উঁচু ভূমি (২৮%)   ১৫,১২১ হেক্টর
২০ মধ্যম নিচু ভূমি (২৩%)  ৫৩,৪১২ হেক্টর
২১ নিচু ভূমি (৪১%) ৪৩,৯১৫ হেক্টর
২২  ৮২,৩৪১ হেক্টর
২৩ গড় বৃষ্টিপাত   ১৯৩৫ মিমি
২৪ বিসিআইসি সার ডিলারের সংখ্যা ১৭৮ জন
২৫ বিএডিস বীজ ডিলারের সংখ্যা ৩০৭ জন
২৬ বালাইনাশক ডিলার সংখ্যা ) পাইকারী ১৮ জন
    ) খুচরা ৫১১ জন
২৮ নার্সারী সংখ্যা ) সরকারী ১৫ টি
    ) বেসরকারী ১২০টি (নিবন্ধিত ২৪ টি)
২৯ কোল্ড স্টোরেজের সংখ্যা ) সরকারী বিএডিসি ১টি
    ) বেসরকারী টি

 

 

টেবিল নং-৩ ঃ  শস্য বিন্যাস এবং মাটির ধরণ

৩০ প্রধান টি শস্য বিন্যাশ ) বোরোপতিতপতিত
    বোরোপতিতরোপা আমন
    ) বোরোরোপা আউশরোপা আমন
৩১ মাটির বুনটের ধরণ
  ) বেলে মাটি %   ১১,৩০০ হেক্টর
  দোঁআশ মাটি ২২%   ৪৭,৭৫০ হেক্টর
  ) এঁটেল মাটি ৩৮%   ৮২,৫০০ হেক্টর
  ) পলি মাটি ১২%   ২৬৩৮৮ হেক্টর
  ) এটেল দোঁআশ মাটি ১২%   ২৫,২৫০ হেক্টর
  ) বেলে দোঁআশ মাটি ১১%   ২২,৫০০ হেক্টর
৩২ ইউনিয়ন কমপে­ক্স ঝঅঅঙ অফিসের সংখ্যা ২৬ টি
৩৩ কৃষি পরামর্শ কেন্দ্রের সংখ্যা ,৩৬৪ টি
৩৪ ফিয়াক কেন্দ্রের সংখ্যা ১২ টি

কিশোরগঞ্জ জেলায় তিনটি শস্য বিন্যাসে ক) বোরো-পতিত-পতিত, খ)  বোরো-পতিত-রোপা আমন, গ) বোরো-রোপা আউশ-রোপা আমন এ ফসল আবাদ হয় (টেবিল নং-৩)। মাটির ধরণও জানা যাবে এ টেবিল হতে । জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের পথ হচ্ছে শস্য বিন্যাস (cropping pattern)। উপযুক্ত শস্য বিন্যাস চিহ্নিত করে পতিত জমিতে দুই বা তিনটি  ফসল আবাদ করার জন্য শস্য ও জাত নির্বাচনের ব্যবস্থা নেয়া । প্রশিক্ষণ এবং পর্যপ্ত প্রদর্শণী প্লট স্থাপনের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জের জমিকে শস্য বিন্যাসের আওতায় আনতে হবে। শস্য নিবিরতা গড়ে ১.৭০ কিন্ত হাওর এলাকায় প্রায় ১.০ এবং উজান এলাকায় ২.৫০ । কিশোরগঞ্জ জেলায় কৃষির নিবিরতা বাড়াতে এক ফসলীকে দুই ফসলী, দুই ফসলীকে তিন ফসলী বা তিন ফসলের জমিতে চার ফসলের আবাদ বাড়নোর সুযোগ রয়েছে । সাত মাস ব্যাপী বর্ষার অলস সময়টাকে কর্মোদ্যোগী করতে হবে । জলজ কৃষি বা উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ চাষের টেকনিক্টা দিতে হবে । গো সম্পদ লালন পালনের সুগোগও সৃষ্টি করতে হবে । আমাদের জনসংখ্যা বাড়ার হার ১.৩ ভাগ । বিভিন্ন কারনে জমি কমছে । আমাদের আবাদী জমি বাড়ানোর সুযোগ খুব কম । শুধু ধান নয়, বহুমূখী, বৈচিত্রময়, লাভজনক ফসল আবাদের দিকে কৃষককে প্রশিক্ষিত করতে হবে । কৃষিকে এখন সমান্তরালের (Horizontal) সাথে উর্ধমূখী (Vertical), বহু স্তরে Multi-layers) সাজাতে হবে । মাটির ধরণ, অনুকূল পরিবেশ, মৌসুম এবং AEZ Zone (টেবিল নং-৪) অনুযায়ী ‘শস্য জোন’ চালু করতে হবে ।

ভূমির উপযুক্ততা চিহ্নিত করে সঠিক জায়গায় সঠিক শস্য জাত চাষ নির্বাচনের মাধ্যমে শস্য বিন্যাসের জন্য জিআইএস ম্যাপিং অ্যান্ড অ্যানালাইসিস টুলস ব্যবহার করা যেতে পারে । আর্থ-সামাজিক ও ভৌগলিক অবস্থা বিবেচনা করে কৃষকদের চাষের পরামর্শ দিতে হবে। জলবায়ু, ভূমির গঠন, শ্রেণী বিন্যাস করে ভূমির সকল প্রকার ব্যবহরের সম্ভাবতা যাচাই, জমির উর্বরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সম্পদ, আপদ, বাজার, যোগাযোগ সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে ডাটা বেইস করা ও  শস্য বিন্যাস করা উচিত । এতে ফসলের নিবিড়তা বাড়বে। সার্বিক উন্নয়নে হাওর মহা পরিকল্পণা বাস্থবায়ণ অতি দ্রুত জরুরী ।

টেবিল নং-৪ঃ কৃষি পরিবেশ অঞ্চল

৩৫ কৃষি পরিবেশ অঞ্চল
৩৬ AEZনং ,২০৭  হেক্টর
AEZনং ৪৮,৯৫৪  হেক্টর
AEZনং ৬০,৭৬৫  হেক্টর
AEZনং১৬ ২১.৩২৫  হেক্টর
AEZনং১৯ ৪০,৭৫০  হেক্টর
AEZনং২১ ৪৯,১৪৬  হেক্টর
AEZনং২৮ ৯৭৮  হেক্টর
মৌসুম ভিত্তিক জমি ব্যবহারের পরিমাণ
৩৭ ) খরিপ ৩৫,০০০ হেক্টর
) খরিপ ৮৩,০০০ হেক্টর
) রবি ,৯৫,০০০ হেক্টর

 

জেলার প্রধান প্রধান কৃষি ফসল হচ্ছে ধান, পাট, আলু, বিভিন্ন রকমের ফল, সব্জী, আখ, তৈল-ডাল-মসলা জাতীয় ফসল । সারা বছর ফসল পর্যায়ক্রমে কৃষক কোন না কোন কাযে নিয়োজিত থাকে ।বার মাসের কৃষি কর্মযজ্ঞের বিবরণ টেবিল নং-৫ দেখা যেতে পারে ।

 টেবিল নং- ৫ঃ  ১২ মাসের প্রধান প্রধান কৃষি বিষয়ক কার্যক্রম

মাসের নাম

কার্যক্রম

বৈশাখ বোরো কর্তন, পাট আবাদ, আউশ ফসলের আবাদ, গ্রীষ্মকালীন সবজী আবাদ
কজৈষ্ঠ পাট ও আউশ ফসলের পরিচর্যা
আষাঢ় পাট কর্তন, আউশ ফসলের পরিচর্যা
শ্রাবণ পাট কর্তন, আমন বীজতলা তৈরি, আউশ কর্তন ও আমন রোপন
ভাদ্র আমন রোপন ও পরিচর্যা, আগাম শীতকালীন সবজী আবাদ
আশ্বিন আমন পরিচর্যা, শীতকালীন সবজী আবাদ
কার্তিক রবিশস্য আবাদ, আমন কর্তন
অগ্রহায়ণ রবিশস্য আবাদ ও পরিচর্যা, আমন কর্তন, বোরো বীজতলা তৈরি
পৌষ রবিশস্য আবাদ ও পরিচর্যা, আমন কর্তন, বোরো রোপন
মাঘ বোরো রোপন ও পরিচর্যা, রবিশস্য কর্তন
ফাল্গুন রবিশস্য কর্তন, বোরো পরিচর্যা
চৈত্র রবিশস্য কর্তন, বোরো পরিচর্যা

 

টেবিল নং ৬: উপজেলাওয়ারী ২০১২১৩ সনের বোরো ফসলের শস্যের  চুড়ামত্ম প্রতিবেদন

 

উপজেলার নাম হেঃ প্রতি গড় ফলন
(মেঃ টন) (চাউলে)
প্রাপ্ত মোট উৎপাদন
(মেঃ টন) (চাউলে)
হাইব্রিড উফশী স্থানীয় হাইব্রিড উফশী স্থানীয় মোট
হোসেনপুর ৫.০৪ ৩.৮৩ ০.০০ ৭৫৬ ২৫৬১২ ২৬৩৬৮
কিঃ সদর ৪.৯৮ ৪.১০ ২.১৫ ১৪৪৪ ৩২০৬২ ৪৩ ৩৩৫৪৯
পাকুন্দিয়া ৫.১০ ৪.১০ ২.১২ ৭৪০ ৩২০৪২ ২১ ৩২৮০২
কটিয়াদী ৫.১২ ৪.১৫ ২.২২ ৪১৯৮ ৪৬১২৭ ৫৬ ৫০৩৮১
করিমগঞ্জ ৫.২৩ ৪.১৫ ২.২১ ২৯২৯ ৩৯৩০১ ৪৪ ৪২২৭৪
তাড়াইল ৫.৩০ ৪.১৪ ২.২৩ ৫০৩৫ ৩৬০৮০ ৩০১ ৪১৪১৬
ইটনা ৫.৪০ ৪.২৪ ২.১৯ ৩৩৫৮৮ ৯০২৭০ ১৯৭ ১২৪০৫৫
মিঠামইন ৫.২০ ৪.১৫ ২.১৫ ২৬৫২০ ৪৫৬৫০ ৬৫ ৭২২৩৫
নিকলী ৫.১৭ ৪.১৫ ২.১০ ৯৫৬৫ ৫৪৪৯০ ৮৪ ৬৪১৩৮
অষ্টগ্রাম ৫.৩৫ ৪.২০ ২.২৫ ৩২৪৪৮ ৭৯৭৩৭ ১১৩ ১১২২৯৭
বাজিতপুর ৫.১৫ ৪.১৭ ২.২০ ৯০১৩ ৪৩৭৪৩ ২২ ৫২৭৭৮
কুলিয়ারচর ৫.০৯ ৪.০৮ ২.১০ ১০১৮ ২৬২৭৫ ২১ ২৭৩১৪
ভৈরব ৫.১৮ ৪.২১ ২.২৫ ২৫৯ ২৪৯২৩ ৯০ ২৫২৭২
মোট ৫.২৮ ৪.১৫ ২.২০ ১২৭৫১২ ৫৭৬৩১১ ১০৫৬ ৭০৪৮৭৯

 

টেবিল নং-৭ ঃ রবি/২০১২২০১৩ মৌসুমে বোরো ব্যাতিত অন্যান্য ফসলের চূড়ামত্ম আবাদের প্রতিবেদন
নং উপজেলার নাম পেঁয়াজ রসুন ধনিয়া মশুর ছোলা খেসারী মাষকলাই মূগ মটর অড়হর
হোসেনপুর ২৮ ৩৭ ২৭ ৩৩ ১৪ ৬০ ২০
কিঃ সদর ৫০ ৫০ ২৫ ৮৪ ৬৮ ৮০ ১৫
পাকুন্দিয়া ১৪০ ৫০ ১২ ৩০ ৭০ ১১০
কটিয়াদী ৩০ ৭৪ ৩৮ ৩০ ৪০ ২৪
করিমগঞ্জ ৬০ ৯০ ৩০ ৪৭ ১২ ১১০
তাড়াইল ৩২ ৬৫ ১৫ ১০ ৮০
ইটনা ২০ ১০ ২৫ ২৫০
মিঠামইন ২২ ১৪ ১৪ ১২০
নিকলী ৩৫ ২৫ ২৫ ২৩০
১০ অষ্টগ্রাম ৪৫ ২০ ৫০ ৩০
১১ বাজিতপুর ২৫ ৩৫ ৩৫ ১৫ ৯০ ১০
১২ কুলিয়ারচর ২৫ ৩০ ২২ ১২ ১৫
১৩ ভৈরব ১১৮ ১২০ ৪৭ ৪০০
জেলার মোট= ৬৩০ ৬২০ ৩৬৫ ২৫৫ ১৩০ ১৫৭৫ ১৯০

টেবিল নং- ৮ ঃ রবি/২০১২২০১৩ মৌসুমে বোরো ব্যাতিত অন্যান্য ফসলের চূড়ামত্ম আবাদের প্রতিবেদন

উপজেলার নাম গম আলু মিষ্টি আলু
সেচ সহ সেচ ছাড়া মোট উফশী স্থানীয় মোট
হোসেনপুর ৩০ ৪০ ৭০ ২১৫ ৮৫ ৩০০ ২০
কিঃ সদর ৯০ ১১০ ২০০ ১১০ ৭০ ১৮০ ৩০
পাকুন্দিয়া ৪৫ ৩০ ৭৫ ১২০৫ ২৪৫ ১৪৫০ ৭৫
কটিয়াদী ৫০ ৩৫ ৮৫ ১৬০ ২৮০ ৪৪০ ১৮০
করিমগঞ্জ ৩৫৪ ৪৬৬ ৮২০ ১৫০ ১০০ ২৫০ ৩০
তাড়াইল ২৫ ৩০ ৫৫ ২০ ১০০ ১২০ ১৫
ইটনা ১২ ৬০ ২১০ ২৭০ ৪৭৫
মিঠামইন ১০ ৬৫ ১৫ ৮০ ২৯০
নিকলী ১০০ ৮০ ১৮০ ২০০
অষ্টগ্রাম ২০ ৩০ ৫০ ১৬০ ১৪০ ৩০০ ৩০০
বাজিতপুর ৩৫ ২৫ ৬০ ৯০ ১০০ ১৯০ ৭০

টেবিল নং-৯ ঃ ২০১২২০১৩ মৌসুমে স রিষা , চিনাবাদাম, শাক সব্জী , ভূট্রা, মরিচের চূড়ামত্ম আবাদের প্রতিবেদন

উপজেলার নাম সরিষা শীতকালীন সবজি চিনাবাদাম শীতকালীন সবজি চিনাবাদাম ভূট্টা মরিচ
উফশী স্থানীয় মোট
হোসেনপুর ২০ ৩৫ ৫৫ ৩০০ ৪০ ৬০ ২১০
কিঃ সদর ৪০ ২০ ৬০ ৬৪০ ৫০০ ১৮০
পাকুন্দিয়া ১০৫ ১১০ ১২৫০ ১৫ ৩২২ ২০০
কটিয়াদী ১৭৫ ৭৫ ২৫০ ৮৭০ ৩৫ ১১ ২৬৫
করিমগঞ্জ ৭৯০ ৩৬০ ১১৫০ ১২৫০ ১০ ৩০ ২৬০
তাড়াইল ১১০ ৫৫০ ৬৬০ ৪৫০ ৪৩০
ইটনা ২০০ ৫১০ ৭১০ ৬০০ ১৫০ ১৫ ৫৭০
মিঠামইন ২৫ ১০ ৩৫ ১২৫ ১১০ ১৫ ৯৫
নিকলী ৫০ ৫০০ ৫৫০ ১৭০ ১৩৫ ২৬৫ ২৫০
অষ্টগ্রাম ৬০ ৯০ ১৫০ ২৬০ ২৩৫ ৪০ ১২০
বাজিতপুর ২৫০ ২৯০ ৫৪০ ৭৭৫ ১৩৫ ৯১০ ১৯৫
কুলিয়ারচর ১৬০ ১৬৫ ৩২৫ ৪৬০ ৬০ ১১০
ভৈরব ৭৪৫ ১১৪০ ১৮৮৫ ৩৫০ ১৪৫ ৫৬৫
জেলার মোট= ২৭৩০ ৩৭৫০ ৬৪৮০ ৭৫০০ ১০৮০ ২১৭০ ৩৪৫০

 

টেবিল ন ং-১০ ঃ রবি/২০১২১৩ সনের ‘‘শীতকালীন সবজীর’’ জাতভিত্তিক চুড়ামত্ম আবাদ
আবাদঃ হেক্টরে।
নং উপজেলার নাম বেগুন টমেটো মুলা গাজর ফুলকপি বাঁধাকপি শাল গম লাউ মিষ্টি কুমড়া
হোসেনপুর ৫০ ৩৫ ৪৫ ১২ ১০ ২২ ১৬
কিঃ সদর ৫২ ৮০ ৭০ ৪৭ ৬৮ ৮০ ২০
পাকুন্দিয়া ৭০ ৮৫ ২১০ ৭০ ৫০ ৯০ ৪৫
কটিয়াদী ১৭০ ৭০ ১১০ ২০ ১০ ৭০ ৫০
করিমগঞ্জ ১৮০ ৪৬০ ৭৫ ৫০ ১২৫ ১০৫ ১৫ ৫০ ৩০
তাড়াইল ৪০ ৭০ ৬০ ১৫ ১৫ ২০ ৩৬
ইটনা ৫০ ১৮০ ১১০ ৩২ ২৮ ১৭ ৪৫
মিঠামইন ২০ ১৮ ১২
নিকলী ১৫ ২৫ ২০ ১০ ১০ ১৫ ১৫
১০ অষ্টগ্রাম ২৮ ৪০ ২০ ৩০ ২০ ১০ ৪১
১১ বাজিতপুর ১০৫ ১৩০ ৭৫ ১০ ৭৫ ৫৫ ৭০ ৩০
১২ কুলিয়ারচর ৪০ ৯০ ৩৫ ৩০ ১৫ ৫০ ৯০
১৩ ভৈরব ২৫ ৫৫ ৪৫ ১৪ ২১ ৩০ ২৫
জেলার মোট= ৮৪৫ ১৩৩৮ ৮৮০ ৭১ ৪৮৫ ৪১০ ১৯ ৫৩৬ ৪৫০

 

টেবিল নং-১১ ঃ কিশোরগঞ্জ জেলার বৎসরের খাদ্য পরিস্থিতি ।

বৎসর মোট জনসংখ্যা মোট খাদ্য চাহিদা (মেঃ টন) মোট খাদ্য উৎপাদন (মেঃ টন) উদ্বূত্ত/ঘাটতি (+/-) মন্তব্য
২০১০১১ ২৮,৭১,১৪১ ,১০,৩৬০ ,৫৪,০২৫ (+),৪৩,৬৬৫ ·জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার .৩৪

মাথাপিছু দৈনিক খাদ্য চাহিদা ৪৮৭ গ্রাম

২০১১১২ ২৯,১১,৯০৭ ,১৭,৬০৬ ,৬৪,৬২৬ (+),৪৭,০২০
২০১২১৩ ২৯,৫০,৯২৬ ,২৪,৫৪২ ,১৯,৫৩৭ (+),৯৪,৯৯৫

তথ্য সূত্র সমূহ ঃ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন, ঢাকা বিভাগ, কিশোরগঞ্জ জেলা, তারিখ-০১।০১।১৬ ।

স্বাধীনতার পর সারা দেশে খাদ্য উৎপদন বেড়েছে প্রায় তিন গুণ কিন্তু  কিশোরগঞ্জের ভাটি বাংলায় এলাকায় খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে আমাদের জাতীয় ধান উৎপাদন বৃদ্ধি হারের দুই গুণ অর্থাৎ প্রায় ছয় গুণ। কিশোরগঞ্জ একটি খাদ্য উদ্ধৃত জেলা (টেবিল নং-১১) । হেক্টর প্রতি গড় ফলন (মেঃটন, চাউলে)ঃ-হাইব্রিডঃ ৫.২৮, উফশীঃ ৪.১৫, স্থানীয়ঃ ২.২০ । নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত খাদ্য শস্য আশে পাশের জেলাগুলোতে সরবরাহ করা হয় । চাহিদার তুলনায় বেশী উতপাদন হলেও এ অতিরিক্ত খাদ্য সংরক্ষণের তেমন কোন ব্যবস্থা নাই । সংরক্ষণের অভাবে,  বহু কষ্টে উতপাদিত ফসলের গুণগত পুষ্টিমান কমে এবং ক্ষতির পরিমাণ বাড়ে । ফলে, বাধ্য হয়ে কৃষককে কম দামে ধান শস্য বিক্রি করে দিতে হয় । কিশোরগঞ্জ জেলায় তেমন কোন বড় রাইস মিলও স্থাপিত হয় নাই । আবার ফাগুণ-চৈত্র মাসে জেলা হতে বাহিরে চলে যাওয়া ধান দ্ধি-মূখী পরিবহণের খরচ সংযোজিত হয়ে চাল হিসাবে ফিরে আসে । কিশোরগঞ্জ বাসির শতকরা মাত্র ০.৮৭ ভাগ লোক শিল্প কারখানায় কাজ করে । বড় বড় খাদ্য গোদাম, সাইলো, অটু রাইস মিল এবং কৃষি ভিত্তিক শিল্প বা ইপিজেড (EPZ) স্থাপনের মাধ্যমে কৃষি ভিত্তিক সমাজকে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ দেয়া সম্ভব । গ্যাস সংযোগ দিয়ে কৃষি বা বিসিক শিল্প জোন করা যেতে পারে ।

কিশোরগঞ্জ জেলার কৃষির সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে এর কৃষি বান্ধব মানুষ; ভূমি এবং ফসল  বৈচিত্র । একদিকে হাওরের নীচু ভূমি, উজান এলাকার উঁচু ভূমি, এবং মধ্যম উঁচু ভূমি । হাওর বেষ্টিত কিশোরগঞ্জ জেলার জমির অধিকাংশই এক ফসলী । এগুলোতে রকমারী, বিভিন্ন জাতের ফসল চাষের প্রচুর সম্ভাবণার মাধ্যমে নিবিরতা বাড়ানোর অপার সুযোগ রয়েছে । আমাদের র্দুদিনে, জনসংখ্যা বিস্ফোরণে খাদ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তার উৎস ভূমি হবে আমাদের হাওর বেষ্টিত কিশোরগঞ্জ জেলা । কিশোরগঞ্জ জেলায় মাছ চাষ এবং গো সম্পদের উন্নত জাত সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব ।

কিশোরগঞ্জ জেলার অফুরন্ত সম্ভাবনা এখনো অব্যবহৃত রয়েছে বলে ওখানে কাজ করার সুযোগ অনেক বেশী। এ জন্যে  কৃষিকে সাজাতে হবে নতুন আঙ্গিকে, নতুন পরিকল্পণায়। কৃষি শুধু কৃষকের বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসাবে ভাব্লা যাবে না । একে একটি শিল্প বা বাণিজ্য হিসাবে ভাবতে হবে । কিশোরগঞ্জের বিশাল বড় হাওরের মাঠকে সমবায়ের মাধ্যমে সমন্বিত যান্ত্রিক কৃষিতে রুপান্তর করতে হবে । এতে খরচ ও ঝুঁকি কমবে, ফলন এবং গুণ-পুষ্টির মান বাড়বে । শুধু ধান চাষ নির্ভরতা কমিয়ে এনে কৃষি বহুমূখীকরণ, সমন্বিত কৃষি, ফসলের নিবিড়তা বাড়ালে মানুষের আয় বাড়বে, পাবে পুষ্টি। কৃষি বিন্যাস, ফার্মিং সিষ্টেম, সমন্বিত বালাই দমন ও শস্য ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করে সারা বছর ব্যাপী সক্ষম স্বাচ্চন্দময় জীবন পাবে।

‘প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি’ ছাড়া বর্তমানে আমাদের টিকে থাকা কঠিন । কৃষি প্রযুক্তি আমাদের শ্রমের লাঘব, কম উৎপাদন খরচ, অধিক ফলন, কম অপচয়, বেশি লাভ ও পুষ্ট শস্য দানা উপহার দেবে । কৃষির যান্ত্রিকীকরণ ছাড়া অন্য কোন বিকল্প । শ্রমিকের অভাব প্রকট ।  ধান রোপন ও কর্তনের সহজে চলা ও চালনা উপোযোগী যন্ত্র দিতে হবে। এতে আগাম বন্যা হতে আমাদের কৃষিকে রক্ষা করবে । কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে ‘বীজ উতপাদন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ’ কেন্দ্র স্থাপন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে ।

বিদ্যুত বা বিকল্প জ্বালানীর ব্যবস্থা করতে হবে। সৌর বিদ্যুত হতে পারে এ ক্ষেত্রে নিয়ামক । বহুমূখী ব্যবহারের জন্য উচুঁ ভিটা তৈরী, কাটা ধান আনা নেয়ার জন্য হাল্কা কিন্তু টেকসই পরিবহণ এবং বাজার ব্যবস্থাপণা গড়ে তুলতে হবে। দাদনের ছোবল থেকে রক্ষায় ‘হাওর উন্নয়ন ব্যাংক’ করা যেতে পারে ।দেশে কৃষি শিক্ষা, গবেষণা, সমপ্রসারণ ও উদ্বুদ্ধকরণে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার যে শুভযাত্রার সূচনা হয়েছিল, ‘হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তা পূর্ণতা পাবে বলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস।  মাৎস্য গবেষণ ইসস্টিটিউট স্থাপন বা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে হাওর নিয়ে অধ্যয়ন/ গবেষণার সুযোগ থাকতে পারে। প্রবাহিত নদী, নালা, খাল, বিল, প্রকুর গুলো খনন করে দেন, ৮০% সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিশোরগঞ্জের কৃষিতে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার এবং যোগাযোগ বৃদ্ধিতে নদী, নালা, পুকুর খনন করতে হবে । সেচ ব্যবস্থাপণায় ডিজেলের পরিবর্তে বিদ্যুত বা সৌর বিদ্যুতের উদ্যোগ নেয়া দরকার ।

একটি মাত্র ফসল-ধান চাষ হতে বের হতে কৃষক সাক্ষাৎকার ও তথ্য উপাত্ত নিয়ে কম্পিউটারের মাধ্যমে অন-ফার্ম (On farm), অফ-ফার্ম (Off farm) সমন্বিত ফার্মিং সিস্টেমে সম্পৃক্ত করতে হবে । পরিকল্পণা প্রণয়ন ও পরীক্ষণের জন্যে প্রায়োগিক গবেষণা (adaptice research) করতে হবে । শস্য, পশু সম্পদ, মৎস্য, এগ্রো-ফরেস্ট্রি এবং অফ-ফার্মিং এর উপাদান হবে। এতে মানুষের খাদ্যমান, কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধি পাবে। একটি কৃষক পরিবারের কেরোসিন আর লবণ ছাড়া বাকী সব উতপাদনের ব্যবস্থা থাকা উচিত ।

আগামী কৃষির পরিকল্পণায় সমন্বিত শস্য ব্যবস্থাপনায় অনবায়নযোগ্য সামগ্রীর ব্যবহার সীমিত করে, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি, অপচয় ও দুষণ কমিয়ে অধিক ফসল উৎপাদনই মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করা উচিত । শস্য আবর্তন, সঠিক জাত প্রযুক্তি, অকৃত্রিম বৃহত্তর ব্যবহার হ্রাস, ভূমির ঢালু ও বন্য প্রাণীর আচার অক্ষুন্ন রাখতে হবে । বহু স্তর বিশিষ্ট ফলের বাগান এবং জলাশয়ে মাছের চাষ করলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে । ধান চাষ নির্ভরতা কমিয়ে শস্য বিন্যাসে পাট চাষ সম্প্রসারণ করা যেতে পারে । সারা বছরব্যাপি বসতবাড়িতে সবজি, মাসরুম, ডাল, মশলা, ফলফলাদি চাষ বৃদ্ধির করে পুষ্টির যোগান এবং আয় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে এখানে ।

সারা দেশে ২৪৫ টি Agricultural Information and communication Centre (AICC) থাকলেও কিশোরগঞ্জে এক্টিও নাই । কমিউনিটি রেডিও নাই । কৃষকদের প্রশিক্ষণের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা এবং বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে । কোন কাজের সফলতার জন্য প্রয়োজন দক্ষ নেতৃত্ব, নিবেদিত সংগঠক/কর্মী বাহিনী, উজ্জিবিত কৃষক । কিন্ত কিশোরগঞ্জ জেলা বিশেষ করে হাওরেঞ্চলে কৃষি কর্মকর্তাদের ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থায়ী কোন অফিস নাই । যোগাযগ ভাল নয় । বিভিন্ন কারনে সে সব এলাকায় কর্মকর্তাগণ গর হাজির থাকেন । কর্মস্থলে আকর্ষণে তাঁদের জন্য পাহাড়ী ভাতার ন্যায় ‘হাওর ভাতা’ চালু করা যেতে পারে ।

কিশোরগঞ্জের জল, জলা ও চাষ ভূমি সুরক্ষায় হাওরে পরিকল্পিতভাবে সুবিধাজনক স্থানে ‘গ্রাম সৃজন’  করা যেতে পারে । নদী, বা পুকুর খননের মাটি দিয়ে তৈরী স্বপ্নের এ গ্রামে থাকবে আধুনিক সকল সুবিধাসহ বহু স্তর বিশিষ্ট বিল্ডিং । গ্রামের মধ্যে বা চারিপার্শ্বে থাকবে অনেক অনেক পুকুর। সারা বছর এ পুকুরে বিভিন্ন স্তরে মাছ, মুক্তা চাষ হবে, পাড়ে থাকবে বিভিন্ন জাতের ফল গাছ, শাক সব্জি, গরু-ছাগল, হাঁস মুরগী এবং পরিণত করা হবে পর্যটন বিনোদনের ’জলপুরী’; আয় ও খাদ্য উৎপাদন হবে অকল্পণীয় । কিশোরগঞ্জের কৃষিকে মানুষের আয় রোজগার আর কর্মক্ষেত্র-সম্ভাবণার স্বর্ণদ্বার এ রুপান্তরে ব্যাপক উদ্যোগ, বাজেট-পরিকল্পণা নিয়ে এগিয়ে আসবে, এ আশা আমরা করি । ##