জেলার হাওরাঞ্চলে সারা বছরই চলাচল করে শত শত ইঞ্জিনচালিত নৌকা। বিশেষ করে বর্ষাকালে এর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। শুকনো মৌসুমে সেচের জন্য ব্যবহূত সেচযন্ত্রকেই বর্ষাকালে অনেকে নৌকায় সংযুক্ত করে ইঞ্জিনচালিত নৌকা হিসাবে ভাড়ায় খাটিয়ে থাকে। জেলার কয়েকটি উপজেলার হাওরাঞ্চলে লোক চলাচল ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারই একমাত্র ভরসা। এর বেশিরভাগই অবৈধভাবে চলাচল করলেও সংশিস্নষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে নির্বিকার।

জেলার ইটনা, নিকলী, মিটামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার পুরোটাই এবং তাড়াইল, করিমগঞ্জ, বাজিতপুর, কটিয়াদী, ভৈরব ও কুলিয়ারচর উপজেলার অংশবিশেষ হাওর এলাকায় অবস্থিত। হাওর এলাকায় এখনো একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াতের জন্য সুষ্ঠু সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। বিশেষ করে বর্ষাকালে হাওর এলাকা অথৈ সমুদ্রে পরিণত হওয়ায় চলাচলের জন্য নৌকার ওপরই নির্ভর করতে হয়। কম খরচে ইঞ্জিনচালিত নৌকাই হয়ে ওঠে যোগাযোগ রক্ষার একমাত্র ভরসা।

অফিস-আদালতের কাজে গমন, ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল-কলেজে আসা-যাওয়া, আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে বেড়ানো এবং এমন কি নিত্যদিনের হাট-বাজার করার জন্যও ইঞ্জিনচালিত নৌকার কোন বিকল্প নেই। তাছাড়া পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে তো ইঞ্জিনচালিত নৌকা হাওরাঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। হাওর সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রাম, নৌ-ঘাট, হাট-বাজার থেকে এসব নৌকা ছেড়ে যায়। দূরপালস্নার গন্তব্যে পৌঁছার জন্য ‘রিজার্ভ’ করেও এসব নৌকা ভাড়ায় নেয়া হয়।

হাওর এলাকার ‘গেইটওয়ে’ বলে খ্যাত করিমগঞ্জ উপজেলার চামটা বন্দর থেকে বিভিন্ন রুটে অর্থাৎ ইটনা, মিটামইন, খালিয়াজুরি ও তাড়াইল উপজেলা সদর ছাড়াও সামারচর, ছাতক, এলংজুরি, গোপদীঘি, বড়ইবাড়ি, সিংপুর, বরাটিয়া, আজমিরিগঞ্জ, জয়সিদ্ধি, সাচনা প্রভৃতি রুটে প্রতিদিন কয়েকশ’ ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল করে।

এগুলোর ব্রেক না থাকায় এবং অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের কারণে ট্রলারের যাত্রীরা সবসময় দুর্ঘটনার আতংকে থাকে। ঝড়-বৃষ্টির দিনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের যাত্রীরা চলাচল করে থাকে। নৌকাগুলোতে থাকে না কোন জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম। ফলে মাঝে-মধ্যেই ঘটছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।

প্রয়োজনের তাগিদে গড়ে ওঠা এই নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর সংশিস্নষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোন তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ নেই। এসব ইঞ্জিনচালিত নৌকার অধিকাংশেরই রুট পারমিট নেই। নেই কোন বৈধ কাগজপত্র। এদিকে ইঞ্জিনের বিকট শব্দে যাত্রী এবং নিকটবর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের কান ঝালাপালা হয় এবং স্কুল-মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসের পড়াশোনারও ব্যাঘাত ঘটে। ট্রলার চলাচলের ফলে সৃষ্ট ঢেউয়ের আঘাতে গ্রামে ভাঙ্গনের সৃষ্ট হয়।

পুলিশ টহলের তেমন কোন ব্যবস্থা না থাকায় প্রকাশ্য দিবালোকেই যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা প্রায়শই ডাকাতদের হামলার শিকার হয়। চামটা বন্দরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বড় ইঞ্জিনচালিত নৌকার মালিক তাদের নৌকার রুট পারমিট না থাকার কথা স্বীকার করে জানান, মাঝে-মধ্যে প্রশাসন কিংবা BIWTA এর কর্মকর্তারা পরিদর্শনে আসলে তাদেরকে ‘ম্যানেজ’ করা হয়।

-ইত্তেফাক