আশরাফুল ইসলাম: ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র, হাওর-নদী, সম্পদ এবং সম্ভাবনাময় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা কিশোরগঞ্জ। সামগ্রিকভাবে জেলা হিসাবে কিশোরগঞ্জের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক অবস্থান বরাবরই গুরত্বপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ। জেলা হিসাবে দারুন গৌরবে মাথা উঁচু করে থাকা এ কিশোরগঞ্জকে দ্বিখণ্ডিত করার প্রয়াস কিশোরগঞ্জের আপামর মানুষকে আহত করলেও এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষীদের প্ররোচনায় বাস্তবে তাই হতে যাচ্ছে। তাদের প্ররোচণা মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে পর্যন্ত বিভ্রান্ত করছে বলে খোদ ভৈরবের অনেক সাধারণ মানুষ মনে করছেন।

গত ২৪ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি আলহাজ মোঃ জিল্লুর রহমান রোববার শহর রক্ষাবাঁধের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করতে এসে এক সুধী সমাবেশে তাই বলতে বাধ্য হলেন, জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও ভৈরবকে দেশের ৬৫তম জেলায় উন্নীত করা হবে। জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা ভৈরবকে জেলা করার উদ্যোগ এবার শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছে কিশোরগঞ্জবাসীর আবেগ আর ভালবাসার ধারক কিশোরগঞ্জ জেলা সম্মিলিত ছাত্র-যুব ফোরাম। সোমবার দুপুরে শহরের একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা ছাত্র ও যুব ফোরাম শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে এ উদ্যোগ ঠেকানোর ঘোষনা দিয়েছে। রাষ্ট্রপতির ঘোষণার একদিন পর জেলা সম্মিলিত ছাত্র-যুব ফোরাম এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে এ উদ্যোগ ঠেকানোর কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে।

দুপুরে জেলা সম্মিলিত ছাত্র-যুব ফোরামের ব্যানারে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের আহ্বায়ক সরকারি গুরুদয়াল কলেজের ছাত্রলীগ দলীয় সাবেক জিএস এনায়েত করিম অমি। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা যুবদলের ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম সুমন, যুগ্ম আহ্বায়ক খসরুজ্জামান শরীফ, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পল্লব কর, শহর শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শামছুল ইসলাম খান মাসুম, গুরুদয়াল কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম পলাশ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সারোয়ার আহমেদ রাসেল, আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুল ইসলাম মামুন, এ কে এম ওয়ালীউল্লাহ রানা প্রমুখ।

সংগঠনের আহ্বায়ক এনায়েত করিম অমি তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘এক বছর আগে ২৪ অক্টোবর ঠিক এই দিনে কিশোরগঞ্জ জেলার অখণ্ডতা রক্ষার দাবিতে আমরা মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষনা করেছিলাম। বিক্ষোভ-সমাবেশ, কালো পতাকা উত্তোলন, গণস্বাক্ষর সম্বলিত এক কিলোমিটার দীর্ঘ স্মারকলিপি, হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছিলাম। এসব কর্মসূচিতে কিশোরগঞ্জবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়ে আমাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল। এ সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট এবং স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ কিশোরগঞ্জের প্রায় সব আসনের সাংসদগণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, কোনো অবস্থাতেই কিশোরগঞ্জের অখণ্ডতা বিনষ্ট করতে দেয়া হবে না। কিন্তু ২৪ অক্টোবর রোববার রাষ্ট্রপতি আলহাজ জিল্লুর রহমান ভৈরব শহর রক্ষাবাঁধের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করতে এসে এক সুধী সমাবেশে তাঁর শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও ভৈরবকে দেশের ৬৫তম জেলা করার ঘোষনা দিয়েছেন।

তাঁর এ বক্তব্য কিশোরগঞ্জবাসীকে আহত করেছে। কিশোরগঞ্জবাসী রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছে। আজকে কিশোরগঞ্জবাসী প্রশ্ন তুলেছে যুগ যুগ ধরে পশ্চাদপদ অবহেলিত এ জেলার মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মতো অনেক মৌলিক চাহিদাই এখনও পূরণ হয়নি। এ অবস্থায় ভৈরব কিংবা বাজিতপুরকে জেলা ঘোষনা করলে সার্বিকভাবে কিশোরগঞ্জ আরও শত বছর পিছিয়ে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত ও বঞ্চিত হবে এ জেলার সাধারণ মানুষ। ক্ষতিপয় স্বার্থন্বেষী গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতির নির্বাচীন এলাকা এ যোগ্যতার ভিত্তিতে একজন ব্যক্তিকে পুঁজিকে করে সমস্ত কিশোরগঞ্জবাসীকে ক্ষতিগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস আমরা মেনে নেব না।

প্রয়োজনে আমরা গত বছরের চেয়েও কঠোর আন্দোলন-লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে আমাদের শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে এ অপরিণামদর্শী উদ্যোগকে প্রতিহত করব। কিশোরগঞ্জের মানচিত্রের অখণ্ডতা রক্ষা করব। আর এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ অক্টোবর পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষনার লক্ষে বিকাল ৪টায় কিশোরগঞ্জের সকল উপজেলার সকল দল ও শ্রেণীপেশার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে’।