কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে তিন গুণেরও বেশি হাজতি-কয়েদি রয়েছেন। সেখানে কারাবন্দীরা যাপন করছেন মানবেতর জীবন। তাঁরা দিন-রাত পালা করে ঘুমান। সমস্যার অন্ত নেই। অনেক আসামির নেই কোনো আইনজীবী। জেলা ও দায়রা জজ এম এ সাইদ গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে কারাগারটি পরিদর্শনে যান। এ সময় জেলা প্রশাসক মো. সিদ্দিকুর রহমান তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা প্রায় দেড় ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করে কারাবন্দীদের সমস্যার খোঁজ-খবর নেন।

যেসব কারাবন্দীর আইনজীবী নেই, তাঁদের তালিকা তৈরি করে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ। কারা তত্ত্বাবধায়ক এ কে এম জহির উদ্দিন প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে নির্মাণ করা এ কারাগারটিকে ১৯৮৮ সালে জেলা কারাগারে উন্নীত করা হয়। কিন্তু অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হয়নি। এ কারাগারের ধারণক্ষমতা ২৪৫ জন। বৃহস্পতিবার সেখানে ছিলেন ৭৯২ জন কারাবন্দী। কারাগারের ভেতরে দুজন নারী বন্দীর জন্য দুটি কক্ষ আছে। গতকাল সেখানে ছিলেন ৩৩ জন। কারাগারটিতে মোট আটটি কক্ষ আছে। প্রতিটি কক্ষ প্রস্থে প্রায় ১৫ ফুট এবং দৈর্ঘে ৩০-৪০ ফুট। পাঁচটি পাম্প আছে। এর দুটি নষ্ট। কারা হাসপাতালে ৩০ থেকে ৪০ জন বন্দী চিকিৎসাধীন। কিন্তু হাসপাতালে শয্যা নেই, সেবার জন্য নেই কোনো সেবিকা। চিকিৎসক আছেন একজন। তিনি মাঝেমধ্যে কারাগারে এসে চিকিৎসাসেবা দেন।

কারাগারের ভেতর শৌচাগার আছে মাত্র ২০টি। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গরবাড়িয়া গ্রামের সজীব মিয়া ২০ দিন কারাগারে থেকে জামিনে গত সোমবার ছাড়া পেয়েছেন। কারাগারের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘জেলখানা তো না, মনে হয় দোজখখানা থেকে বের হয়ে এলাম। এ এক দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা। ঘুমানোর জন্য মেঝেতে কোনো জায়গা নেই। একজনের ওপর আরেকজন উপুড় হয়ে পড়ে থাকে।’ ওই দিনই জামিনে মুক্তি পাওয়া পাকুন্দিয়া উপজেলার চরটেকি গ্রামের রবিউল আউয়াল (৩০) জানান, জেলখানার দিন-রাতের বর্ণনা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। যে যাবে সে হাড়ে হাড়ে টের পাবে, কারাগার কেমন জায়গা।

কারাধ্যক্ষ মো. শফিকুল ইসলাম জানান, কারাবন্দীর সংখ্যা তিন গুণের চেয়ে বেশি হওয়ায় নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। বিগত সরকারের আমলে আধুনিক জেলা কারাগার নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হলেও বর্তমানে কাজ বন্ধ আছে। নতুন কারাগার নির্মাণ করা হলে এসব সমস্যা আর থাকবে না।

লিখছেনঃ সাইফুল হক মোল্লা