কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যার আধুনিক সদর হাসপাতালে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালালচক্রের দৌরাত্ম্য, হাসপাতালের সমাজসেবা কার্যালয়ের নিষ্ক্রিয়তা, অপরিচ্ছন্নতা ও চিকিৎসকদের আন্তরিকতার অভাব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সেবাগ্রহীতারা।আর সেবাগ্রহীতাদের ক্ষোভের জবাবে কর্তৃপক্ষ দায়ী করল প্রশাসনিক জটিলতাকে। আশ্বাস দিল খুব শিগগির এসব সমস্যা সমাধানের।

হাসপাতালের বিদ্যমান নানাবিধ সমস্যা নিরসনে কর্তৃপক্ষ ও সেবাগ্রহীতাদের অংশগ্রহণে হাসপাতালের মিলনায়তনে ব্যতিক্রমী এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)। কমিটির স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটির আহ্বায়ক এম এ কাইয়ূমের সভাপতিত্বে গতকাল মঙ্গলবার আয়োজিত এ সভায় অংশ নেন শহরের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। দুপুর একটায় শুরু হয়ে এ মতবিনিময় সভা চলে বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত।

সভায় সংস্কৃতিকর্মী ম ম জুয়েল বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা-যন্ত্রপাতি সীমিত। রোগীদের সেবা দিতে চিকিৎসকদের আন্তরিকতার অভাব লক্ষণীয়। শতভাগ আন্তরিকতা থাকলে যন্ত্রপাতির সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।জেলার আইনজীবী নাসিরুদ্দীন ফারুকী অভিযোগ করেন, জরুরি বিভাগে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রাতের বেলায় চিকিৎসকেরা অনুপস্থিত থাকেন।

সমাজকর্মী বাদল রহমান বলেন, প্রতিবছর হাসপাতালে গরিব রোগীদের জন্য জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ থেকে এক লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়। এ অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় হয় কি না সন্দেহ।কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, এই হাসপাতালে চিকিৎসার পর্যাপ্ত সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কোনো কোনো রোগীকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়। দায়িত্ব এড়াতে চিকিৎসকদের এ রকম কাজ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

সভায় সনাকের পক্ষ থেকে হাসপাতালের সার্বিক বিষয়ের ওপর প্রকাশিত একটি তথ্যপত্র অনুযায়ী, নামে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালের বর্তমান শয্যাসংখ্যা ১০০। বর্তমানে ভর্তি আছে ৩১৩ জন রোগী। তাই শয্যা না পেয়ে ২১৩ জন রোগী মেঝে ও বারান্দায় অবস্থান করতে বাধ্য হয়েছে। চিকিৎসকের ৯৯টি পদের মধ্যে ৫২টিই শূন্য। সেবিকার ৮১টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৪৩টি। প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর ৪৪টি পদের মধ্যে শূন্য ১৭টি। পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ২৮ জনের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ১৪ জন। এ ছাড়া ৫০টি পদে জনবল নেই।

বক্তাদের সঙ্গে একমত হয়ে সিভিল সার্জন ও হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক হোসাইন সারোয়ার খান প্রশাসনিক জটিলতাকেই সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন। সিভিল সার্জন বলেন, তিন বছর ধরে হাসপাতালের তিনটি ইসিজি যন্ত্র বিকল রয়েছে। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের আগে দুজন সিভিল সার্জন এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর একাধিকবার পত্র দিয়েছেন। তিনি নিজেও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিলেও যন্ত্রগুলো মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় কাজ করা কঠিন। হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে শক্তিশালী দালালচক্রের দৌরাত্ম্য, ওষুধ বিক্রয়কর্মীদের উৎপাত এবং কিছু চিকিৎসকের আন্তরিকতার অভাবের বিষয়গুলো স্বীকার করে তিনি আগামী দুই মাসের মধ্যে এসব সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেন।

সভায় আরও বক্তব্য দেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক শওকত আলী, আবাসিক চিকিৎসক খায়রুল আলম, সনাকের আহ্বায়ক মায়া ভৌমিক প্রমুখ।
এরপর হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সনাকের পক্ষ থেকে সাত দফা সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—নির্দিষ্ট সময়ে চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে ওষুধ বিক্রয়কর্মীদের হাসপাতালে প্রবেশে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ, দালালচক্র প্রতিরোধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ প্রভৃতি।

-prothom alo