গোলাম মস্তুফা ও গিয়াস উদ্দিন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পৃথক দুটি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে। তাঁদের দুজনের দল ও মত ভিন্ন। তবে এক জায়গায় তাঁদের বেশ মিল। দুজনেরই আটজন করে সন্তান আছে। মনোনয়নপত্রের ব্যক্তিগত তথ্যছকে তাঁরা এই তথ্য দিয়েছেন।

গোলাম মস্তুফা কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার রামদি এবং গিয়াস উদ্দিন ফরিদপুর ইউপি থেকে লড়ছেন। কয়েকজন ছাড়া বাকী প্রার্থীরাও সন্তান সংখ্যার দিক দিয়ে আছেন তাঁদের পিছু পিছু। তথ্যছকে সর্বোচ্চ সন্তান সংখ্যা আটজনের কথা উল্লেখ করলেও কারো কারো বেলায় এই সংখ্যা আরও বেশি। কারণ ওই ছকে আটজনের বেশি উল্লেখ করার সুযোগ নেই। তাই প্রার্থীরা আটে এসে থেমে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

কুলিয়ারচর নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে এই উপজেলা গঠিত। এখানে নির্বাচন ১৮ জুন। ৪৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর দুজনের আটটি করে, চারজনের সাতটি করে, চারজনের ছয়টি, ছয়জনের পাঁচটি, ১৩ জনের চারটি ও ১১ জন প্রার্থীর তিনটি করে সন্তান রয়েছে। ‘দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়’—এই স্লোগানের মধ্যে আছেন তিনজন। এর মধ্যে দুজন দুটি করে ও একজন একটি সন্তানের জনক। আর দুজন প্রার্থীর কোন সন্তান নেই। ইউপি সদস্য প্রার্থীদের বেলাতেও একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। এ অঞ্চলের প্রার্থীরা জন্মনিয়ন্ত্রণ তথা পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির ব্যাপারে উদাসীন।

সম্প্রতি কথা হয় আট সন্তানের জনক ফরিদপুর ইউপির প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে। নির্বাচিত হলে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম প্রসারে কোন ভূমিকা রাখবেন কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভুল হয়ে গেছে। বুঝি নাই। তবে এখনকার পোলাপাইন যেন আমার মতো ভুল না করে বিষয়টি বুঝাবো। পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম জোরদার করুম।’

এমন পরিসংখ্যানে বিব্রত কুলিয়ারচর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ। ওই বিভাগের সহকারী পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাবিবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘খেয়াল করে দেখবেন এখন যাঁরা নির্বাচন করছেন তাঁদের অনেকের বয়স ৪৫ থেকে ৫০। ওই সময় পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কে গ্রামের মানুষের ধারণা ছিল না। নানা কুসংস্কার ছিল। সামপ্রতিককালে চিত্র পাল্টেছে। বর্তমান প্রজন্ম একটি বা দুটি সন্তানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চায়।’

ইউপি সদস্য প্রার্থীদের মধ্যে সাতজন আছেন আট সন্তানের জনক। তাঁদের মধ্যে কথা হয় ছয়সূতি ইউপির ৪নং ওয়ার্ডের প্রার্থী ইলিয়াস খন্দকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার আল্লাহর মাল (সন্তান) তেরজন।’

এক সন্তান নিয়ে বেশ সুখে আছেন উছমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিনুল ইসলাম। নিজের তৃপ্তির কথা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলের আদিদের বয়স ছয়। একটি সন্তান হওয়ায় তাকে ভালোভাবে মানুষ করতে পারব।’

কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ আলম বলেন, সম্ভাব্য জনপ্রতিনিধিদের পরিবার পরিকল্পনা জ্ঞান না থাকাটা এই উপজেলার পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে সার্বিক মনোভাবের একটি খণ্ড চিত্র ফুটিয়ে তুলে। তবে পরিকল্পনা ও কাজের মাধ্যমে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।