আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন। ওয়ার্ডের সীমানা পুননির্ধারণে আইনে সংশোধনী আনতে মন্ত্রিসভার নীতিগত অনুমোদনের পর নির্বাচন কমিশনের এ পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

পৌরসভা আইন অনুযায়ী পৌরসভার ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাসের সময় যতদূর সম্ভব ভৌগলিক সম্পৃক্ততা সংরক্ষণ করতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যাতে একটি ওয়ার্ডের লোকসংখ্যা অন্য একটি ওয়ার্ডের লোকসংখ্যার ১০ শতাংশের কম বা বেশি না হয়।

আইন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় পৌরসভা আইনের ওই উপধারাটির অংশ বিশেষ (জনসংখ্যার তারতম্য) বিলুপ্ত করতে সম্মত হয়েছে বলে গত ৩০ অগাস্ট স্থানীয় সরকার সচিব মনজুর হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানানো হয়। মন্ত্রিসভা ৬ সেপ্টেম্বর পৌরসভা আইনের সংশোধনী আনার বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছে।

ছহুল হোসাইন  বলেন, “পৌরসভা আইনে যখন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, আশা করি ইউনিয়ন পরিষদ আইনেও একইভাবে করা হবে। আশা করছি, ২০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া সংসদ অধিবেশনে সংশোধনী পাস হবে।” ইসি কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানে সীমানা জটিলতাই ছিল একটা বড় বাধা। আইন অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ করতে গেলে ইউনিয়ন পৌরসভা- সিটি করপোরেশনের সীমানায় বেশ ভাংচুর হতো। যা নিয়ে ক্ষুব্ধরা একের পর এক আদালতে যেতো।

দীর্ঘদিন মেয়াদোত্তীর্ণ থাকার পর নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হলে এসব নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে বড় ধরনের শঙ্কা দেখা দিতো।অবশ্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ইতোমধ্যে এসব স্থানীয় সরকারের নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে করার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছিলেন।

নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন  বলেন, “ইউনিয়ন-পৌরসভা নির্বাচন করার জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে এসব নির্বাচন করা না গেলে বর্তমান কমিশনের মেয়াদে (ফেব্র”য়ারি ২০১২) আর করা যাবে কিনা শঙ্কা থাকবে।”

গত ২ আগস্ট ইসি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রের তালিকা তৈরি সম্পন্ন করতে হবে। সাখাওয়াত হোসেন জানান, ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার জন্য নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালা জারি হয়েছে। মূল আইনে সংশোধনী আনলে বিধিতে সংশোধনী আনার প্রয়োজন পড়বে না।

কখন-কীভাবে হবেঃ                

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এটিএম শামসুল হুদা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, একদিনে সব পৌরসভার ও ছয় দিনে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। গত বছর ২২ অক্টোবর সিইসি ফেনীতে এক অনুষ্ঠানে একথা জানান। পরবর্তীতে ১১ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন ভবনে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ ফোরামের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালেও তিনি একথা বলেন।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত  বলেন, “এসব নির্বাচন কত দিনে করা হবে- সে ব্যাপারে তফসিল ঘোষণার আগে কমিশনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে ঝামেলা এড়াতে ভেঙ্গে ভেঙ্গে নির্বাচন করার কথা আমরা ভাবছি।” স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইসিকে জানায়, দেশের ৩০৮টি পৌরসভার মধ্যে ২৭২টি ইতোমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। এছাড়া ২০১০ সালে সাতটি, ২০১১ সালে ২০টি, ২০১২ সালে একটি ও ২০১৩ সালে আটটি পৌরসভার মেয়াদ শেষ হবে।

দেশের ৪ হাজার ৫০৪ টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ৪ হাজার ২২৮টির মেয়াদ ইতোমধ্যে উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এরমধ্যে অন্তত অর্ধশত ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে যেখানে নানা আইনি জটিলতায় দেড়যুগ ধরে নির্বাচন করা যায় নি। সর্বশেষ ২০০৩ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে চার হাজারের বেশি ইউনিয়নে নির্বাচন হয়।