দুই মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরো চার দিনের পুলিশ হেফাজতে (রিমান্ড) নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত। মামলা দুটি হচ্ছে- হুমায়ুন আজাদ হত্যা চেষ্টা মামলা ও রাজধানীর কদমতলী থানার সন্ত্রাস বিরোধী মামলা। হুমায়ুন আজাদ হত্যা চেষ্টা মামলায় দুদফায় পাঁচদিন রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে সাঈদীকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের পদির্শক (সিআইডি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান গত ২৬ জুলাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরো পাঁচদিনের হেফাজতের আবেদন করেন। শুনানি শেষে সাঈদীর রিমান্ড বাতিল ও জামিন আবেদন নাকচ করে মহানগর হাকিম এস কে তোফায়েল হাসান একদিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। কদমতলী থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গত ২৩ জুলাই সাঈদীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানান মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক শেখ মাহবুবুর রহমান।

দুপুরে মহানগর হাকিম রোখসানা হেপী আবেদনের শুনানি শেষে তিন দিন মঞ্জুর করেন। সাঈদীকে গত ১৯ জুলাই হুমায়ুন আজাদ হত্যা চেষ্টা মামলায় তিন দিন এবং তারপর আরো দুদিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয় আদালত। সেদিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, “২০০৩ সালের ২০ নভেম্বর দৈনিক ইত্তেফাকের ঈদ সংখ্যায় ড. হুমায়ুন আজাদের লেখা উপন্যাস ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ প্রকাশিত হয়। এরপর থেকেই সাঈদী তার বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে, জাতীয় সংসদ এবং অন্যান্য জায়গায় হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক নানা বক্তব্য রাখেন এবং তাকে কটাক্ষ করে ব্লাসফেমি আইন করার মতামত দেন।”

সাঈদী এসব বক্তব্য দেওয়ার কিছুদিন পর অমর একুশে গ্রন্থমেলা চলাকালে ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্র”য়ারি রাতে মেলা থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাংলা একাডেমীর উল্টো দিকের রাস্তায় হুমায়ুন আজাদকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে আক্রমণের পেছনে মৌলবাদি জঙ্গি সংগঠন এবং দেলোয়ার হোসেন সাঈদী জড়িত আছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন হুমায়ুন আজাদ। তদন্তকারী কর্মকর্তা এ ঘটনার সঙ্গে জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমানসহ ওই সংগঠনের শূরা সদস্যরা জড়িত ছিলেন বলে জানতে পারেন।

লেখক ও অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ ২০০৪ সালের ১১ আগষ্ট জার্মানির মিউনিখ শহরে মারা যান। গত বছরের ২০ অক্টোবর হুমায়ুন আজাদের ভাই এ মামলার বাদি মঞ্জুুর কবির মামলায় প্রকৃত আসামিদের অর্ন্তভূক্ত করা হয়নি দাবি করে আদালতে মামলার অধিকতর তদন্তের আবেদন করেন। জোট সরকার আমলে ২০০৭ সালের ১৪ নভেম্বর জেএমবি নেতা শায়খ আবদুর রহমান, আতাউর রহমান সানি, মিজানুর রহমান মিনহাজ, আনোয়ার আলম ওরফে আনোয়ার হোসেন খোকাকে আসামি করে হত্যা চেষ্টা ও বিষ্ফোরক দ্রব্যের আলাদা দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

পরে হত্যা চেষ্টা মামলাটি ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বিচারের জন্য নিয়ে আসা হয়। এর আগে অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যা চেষ্টা মামলায় জেএমবি সদস্য হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাকিব হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের সিআইডি হেফাজতের অনুমতি দেয় আদালত।
এ মামলায় জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা সালাহউদ্দীনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের হেফাজতে নেওয়া হয়। আর অপর জেএমবি সদস্য মিনহাজুর রহমান শাওনকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি।

কদমতলী থানার মামলায় এর আগে গত ২৬ জুলাই জামায়াতে ইসলামীর অপর দুই শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে তিনদিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয় আদালত। সেদিন অন্য মামলায় হেফাজতে থাকায় সাঈদীকে আদালতে হাজির করা যায়নি।
রিমান্ড আবেদনে ওইদিন বলা হয়, গত ২৩ মে রাজধানীর দক্ষিণ দনিয়ার একটি বাড়িতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ ও র‌্যাব অভিযান চালায়। এসময় জেএমবি সদস্যরা পুলিশকে লক্ষ করে বোমা ছুঁড়ে মারে। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। এ সময় নিজেদের তৈরি বোমা বিষ্ফোরণে জেএমবির কয়েকজন সদস্যও আহত হয়। “ঘটনাস্থল থেকে জেএমবি সদস্য আবু বকর সিদ্দিককে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি মতে ধরা হয় সাইদুরকে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, জেএমবির সঙ্গে জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশের সম্পর্ক রয়েছে।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম