তিন মালিক সমিতির দ্বন্দ্বে কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন সড়ক পথে সরাসরি চলাচলকারী দুই শতাধিক যাত্রীবাহী বাস গত ১০ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
পরিবহন মালিক সমিতি ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নতুন একটি বাস সেবাকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও ভৈরব এই তিন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মধ্যে দ্বন্দ্ব ও কলহ দেখা দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিন সমিতি নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকায় ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচলকারী দুই শতাধিক যাত্রীবাহী বাস ১ জুন থেকে বন্ধ রয়েছে।
কিশোরগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ ও ভৈরবের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ‘সিটিং সার্ভিস’ নামে একটি বাস সেবা চালু ছিল। এ সেবায় ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও ভৈরব সমিতির আটটি করে মোট ২৪টি বাস ছিল। কিন্তু গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে কিশোরগঞ্জ পরিরহন মালিক সমিতিকে বাদ দিয়ে ময়মনসিংহ ও ভৈরব মালিক সমিতি ২৪টি বাস দিয়ে ‘শ্যামল ছায়া’ নামে নতুন একটি বাস সেবা চালু করে। এ সেবায় কিশোরগঞ্জ মালিক সমিতির কোন বাস নেই। ফলে আগে চলাচলকারী ‘সিটিং সার্ভিস’ বন্ধ হয়ে পড়ে। প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে ফেটে পড়ে কিশোরগঞ্জ মালিক সমিতির বাস মালিকেরা। তাদের দাবি, জেলা সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (আরটিএ) অনুমোদন ছাড়া কিশোরগঞ্জের মালিকেদের বঞ্চিত করে দুই সমিতি নতুন বাস সেবা চালু করেছে।
কিশোরগঞ্জ পরিবহন নেতারা ভৈরব ও ময়মনসিংহ মালিক সমিতির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। পরে কিশোরগঞ্জের মালিক ও শ্রমিকেরা কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহের মধ্যে চলচলকারী ‘গেইটলক সার্ভিস’ বন্ধ করে দেন। ময়মনসিংহ মালিক সমিতিও কিশোরগঞ্জ থেকে উত্তরাঞ্চলসহ অন্যান্য স্থানে চলাচলকারী বাসগুলো বন্ধ করে দেয়। ভৈরব মালিক সমিতি ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামের মধ্যে চলাচলকারী দূর পাল্লার বাসগুলো বন্ধ করে দেয়।
বর্তমানে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী অন্যান্য সুপার, যাতায়াত ও গেইটলক বাসগুলো বিকল্প পথে মনোহরদী দিয়ে চলাচল করছে। তা ছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট ও অন্যান্য স্থানে চলাচলকারী বাসগুলো গত ১০ দিন ধরে বন্ধ আছে।
কিশোরগঞ্জ পরিবহন মালিক সমিতি ৬ জুন জেলা প্রশাসক, আরটিএ সভাপতি কিশোরগঞ্জ এবং পুলিশ সুপারকে পৃথক স্মারকলিপি দেয়। স্মারকলিপিতে অবৈধ যাত্রী সেবা ‘শ্যামল ছায়া’ বন্ধের দাবি জানানো হয়।
কিশোরগঞ্জ পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি শাহজাহান লস্কর জানান, কিশোরগঞ্জ সমিতিকে না জানিয়ে অনৈতিকভাবে ‘শ্যামল ছায়া’ চালু করায় সমিতির সবার মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ময়মনসিংহ পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব রবিউল হোসেন যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, কিশোরগঞ্জ সমিতির দাবি অযৌক্তিক। তবে আলাপ-আলোচনা চলছে।
ভৈরব সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ সমিতি ঢাকার সঙ্গে সমঝোতা করে বিভিন্ন বাস সেবা চালু করেছে। আমরা বাধা দিইনি। তাদের প্রথম বাধার কারণেই বিভিন্ন সড়কপথে চলাচলকারী অসংখ্য বাস বন্ধ আছে।’ কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও আরটিএর সভাপতি মো. ছিদ্দিকুর রহমান জানান, সাধারণ জনগণ কারও কাছে জিম্মি হতে পারে না। এ ব্যাপারে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।