অগনিত কাল থেকে কিশোরগঞ্জ জেলায় অতি জনপ্রিয় বিষয় হচ্ছে –‘তেলপড়া’ ও তুলারাশির ব্যবহার। হরস্কোপ বা রাশিচক্র হচ্ছে জ্যোতিষ শাষ্ট্রীয় কাঁটা-কম্পাস। এ দিক নির্দশনের দ্বাদশ সংখক নাম পরিচয়। তাও আবার একটি জন্মগত আর দ্বিতীয় টি নিউমারোজিক্যাল।রাশি চক্র মতে গ্রহ নক্ষত্র তিথির ফেরে ফারে মানুষের সুখ দুঃখ,সমৃদ্ধি ব্যর্থটা নির্ধারিত অথবা অথবা রত্ন পাথরের পরিবর্তন প্রয়াস।রুবি,নীলা ক্যাটস আই, পোখরাজ নানা বাহারি নামের রত্ন পাথরে লোকের ভাগ্য পরিবর্তন আদৌ হয় কিনা-কিন্তু এক শ্রেনীর লোক তা বিশ্বাস করে।

তো হর স্কোপের সেই দ্বাদশ রাশি নির্দেশকেরই একটী তুলা। এ তুলা রাশির জাতক জাতিকার আবার হরেক রকম কেরামতি।এই তুলা রাশিদের সাথে আবার গ্রামীণ ঝাঁড়ফুকওলা কবিরাজদের অলিখিত গাটঁছাড়া ।এই দ্বৈত-অনুসঙ্গদের তুকতাক, ফু-ফায় তেল পড়ে তুলারাশির দুহাতে বৃদ্ধাঙ্গুলির নখে দেওয়া হয়। তুলারাশি তার বৃদ্ধাঙ্গুলের নখ প্রদত্ত তেল পড়া রোদের দিকে ধরে গভীর মনযোগের সাথে পরখ করে। এই পরখের কাজটি যদি বেশি গোপনীয় হয় কিংবা সম্ভাব্য দোষীর অগোচরে করতে হয়, তাহলে মন্দের ভাল হসেব রাতের বেলায়ও কয়রা যায়।তবে টিপবাতির দরকার পড়ে।কারো কোণ হারানো মাল কোথায় আছে তা বের করতে এ পক্রিয়া অবলম্বন কয়রা হয়।কাউ কে যাদু টোনা বান মারা হয়েছে কিনা করে থাকলে কে বা কারা করেছে, তাও সনাক্ত করার চেষ্টা করা হয়।বাড়ীর কোণো অল্প বয়সের বালক কারো সাথে অভিমান বশে নিরুদ্দেশ হয়ে গেলে তাদের খোঁজ পেতেও তুলা রাশিদের শরনাপন্ন হয়ে থাকে। কোণ পীর ফকিরের কাছ থেকে তাবিজ এনে উঁচু কোণ বৃক্ষ কিংবা উঁচু বাঁশের ডগায় তা বেধে দেওয়া হয়।বাতাসে তাবিজ বাঁধা ডাল বা বাঁশের নড়োলে বা দোলনি খেলে নাকি নিরুদ্দেশ ব্যাক্তির কল্‌বে ঝাঁকুনি লাগে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। অবশেষে দিশাবিশা না পেয়ে নাকি স্বস্তি পেতে বাড়ী ফিরে আসে।

তুলা রাশির দ্বারা বাটি চালান বা খাপ্‌পড়াও দেওয়া হয়। কোণ বাড়ীর কোন মেয়েকে মনে ধরলে মুখ ফুটে বলতে না পারলে ঐ মেয়ের বাড়িতে তাবিজ কবজ পুঁতে বিয়েতে বাধা দেওয়া হয়। অথবা কারো সম্পত্তি আত্নসাতের লক্ষ্যে ঐ ব্যক্তির ধংস করার জন্য তাবিজ করার কুপ্রথা এই অঞ্চলে প্রচলিত আছে। এ ধরনের অবস্থার হাত থেকে বাঁচতে কিংবা সনাক্ত করতে বাটি চালান দেওয়া হয়। বিয়ের উপযুক্ত মেয়েদের আকৃষ্ট করতে স্থানীয় ছেলে পেলে রা কেউ কেউ বিশেষ ধরনের তাবিজ কবজের আশ্র্য নেয়। পরিচিত কোণ প্রতিবেশী নারী বা ভিকারিনীদের লোভের টোপ দিয়ে উদ্দিষ্ট কিশোরী বা যুবতীর পরনের কাপড়ের কোন বা সুতা কিংবা মাথার চুল সংগ্রহ কয়রা হয়।পরে তাতে মন্ত্র ফুঁকে তাবিজ বানিয়ে ঐ মেয়ের বাড়ীর কোণ গুপ্ত স্থানে পুঁতে রাখা হয়।এতে নাকি ঐ মেয়ের অশান্তি জ্বালা পোড়া মাথা গরম খানিকটা পাগলামি ভাব ইত্যাদি দেখা দেয়। কখনো কখনো উদ্দিষ্ট নারীর বালিশের ভিতরে এসব তাবিজ কবজ পাওয়া যায়। একান্তই ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বস্তু হিসেবে সেলাই কৃত বালিশের ভেতরের তুলায় এসব তাবিজ কিভাবে প্রোথিত হয়, তা আল্লা মালুম। এসব সমস্যার মোকাবেলায় তুলা রাশির তেল পড়া বা বাটি চালান দেওয়া হয়।

তুলা রাশির বাটি চালানের জন্য প্রয়োজন পড়ে একটি পিতলের বাটি। কোনও কবিরাজ মন্ত্র পড়ে ঐসব বাটিতে ফুঁক দেওয়ার পর তর্জনী দিয়ে তাতে তিনটি টোকা দেওয়া হয়। অথবা ইঁদুরের গর্তের মাটি মন্ত্র পড়ে ঐ বাটিতে রাখা হয়। তারপর ঐ বাটিতে তুলা রাশির ডানহাত স্থাপন করে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর অমনি তুলারাশি তুমুল বেগে দিকবিদিক ছুঁটতে থাকে। কখনো ঝোপে ঝাড়ে কখনো বাড়ীর পিড়ার নিচে, কখনোবা রোগী বা রোগীনির শরীর বেয়ে মুখে উঠে। আবার কখনো কখনো পাত কুয়ার দিকে ছুটে যায়, তবে কুয়াতে পতিই হওয়ার আগেই কবিরাজ তাকে আটকে ফেলে এবং পিতলের বাটি থেকে হাত বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। বাটি চালানে আধি দৈব শক্তি ভর করে বলে এটি শেষ হওয়া মাত্রই মাটিতে ধপাস করে পড়ে ছটফটাতে থাকে। তাকে স্বাভাবিক পর্যায়ে  ফিরিয়ে আনতে কবিরাজ পানি পড়া ছিটিয়ে দেয়। এতে সে দু-এক মিনিটের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে যায়।

চুরির মাল অনুসন্ধানে তুলা রাশির মাধ্যমে ‘খাপপড়া’ আরেক ধরনের লোকজ পদ্ধতি।বাঁশের দুটো-শক্ত মসৃন ফালিতে কোণ কবিরাজ মন্ত্র বা দোয়া পড়ে ফুঁক দিয়ে তুলা রাশির বগলে চেপে দেয়। তারপর তুলা রাশির লোকটি বাঁশকাঠি দুটো ঠক্‌ ঠক্‌ শব্দ করতে করতে বিপুল বেগে অজ্ঞাত অভিযুক্তের দিকে ছুটে গিয়ে তাকে চেপে ধরে।

বানমারা ও কুপরি কালাম চর্চা:
‘বান’ বা ‘বেদমারা’ অন্য কথায় কুপরি কালামের মাধ্যমে অন্যের অনিষ্ট সাধন প্রয়াস এ অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত। কারো বিরুদ্ধেও কোণ বৈরীপক্ষ কুপরি কালামের মাধ্যমে অনিষ্ট কল্পে ‘বান’ বা ‘বেদ’ মারে। এ ধরনের চর্চা গুরু শিষ্য পরস্পরায় কালান্তরে টিকে থাকে। এ ধরনের নষ্টাচারী কেতাবী জ্ঞানও যে একেবারে বিফল, এমন নয়। এসব কুলষ প্রথা হাসিল বা উপায় উপকরন লাভের বিচিত্র সব কর্মকান্ড বা প্রয়াস লক্ষ কয়রা যায়। যেমন- অমাবস্যার অন্ধকার, নিশীথে সুনির্দিষ্ট মন্ত্র ফুঁকা মটর দানা নিয়ে শ্মশানে একা যেতে হয়। রাত্রি দ্বি-প্রহর হলে অশুভ কোন আত্না চোখা শিং ওয়ালা ষাড়ের রুপ ধরে ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে এগিয়ে আসতে থাকে। ষাঁড়টির মাথায় থাকে ব্বিরল একটি টুপি, যা উদ্দেশ্য সিদ্ধির মোক্ষম হাতিয়ার। ষাড়টিকে এগিয়ে আসতে দেখলে ভয় না পেয়ে অসম সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সাথে নিয়ে যাওয়া মটর দানা সামনে ছড়িয়ে দিতে হবে। ষাঁড়টি ওগুলি খেতে শুরু করলেই অতি সাবধানে দ্রুততার সাথে ওটার মাথায় রক্ষিত টুপিটি নিয়ে আসতে হবে। তাহলেই কেল্লা ফতে। এ অলৌকিক বস্তু দিয়ে যে কোণ উদ্দেশ্য অসাধন সহজতর হয়ে উঠে। এর মাঝে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, ওটা মাথায় চড়ালে লোকদের সন্মুখ থেকে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া যায়। এর বাস্তবতা বা এটা হাসিলের প্রক্রিয়া শ্মশান খলার নিশিথে নির্জনে কতটা সহজ-স্বাভাবিক তা চিন্তার বটে। আর এ কারনেই কেবল ত্বাত্তিক জ্ঞান হয়েই আছে।ব্যবহারিক বাস্তব হয়ে উঠেনি এখন তর।

বান বা বেদ মারার অগনিত প্রক্রিয়ার কথা জানা যায়।এ সবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘চিল্লোয়ারি’ বা শ্মশান খলার বা কবরস্থানের মাটি, মৃতের মাথার খুলি বা তার অংশ বিশেষে মন্ত্র ফুঁকে বান দেওয়া হয়। কলার থোড়ে অজস্র সুঁই ফুটিয়ে অথবা কচ্ছপের গলায় প্যারাসুট সুতা দিয়ে শক্ত করে তাবিজ বেধে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাবিজ বা কোন ‘ডিমপড়া’ রান্নার চুলার ভিতরে পুঁতে রাখা হয়। এতে নাকি উদ্দিষ্ট ব্যক্তির ভেতর টা জ্বল্ব পুড়ে যায়। কাউকে জ্বলাপুড়ার কষ্টদান বা হত্যাপ্রেচেষ্টার মাধ্যমে এসব খারাপ কাজ কয়রা হতো প্রায়ই। সন্দেহ জনক এসব হত্যার হাত পেতে তেল পড়া বা বাটি চালানের লোকায়িত ব্যবস্থার ব্যবহার ছিল নৈমিত্তিক। বর্তমানে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসার ঘটায় সংস্কার নির্ভর এসব কু-প্রথা ব্যাপক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। বিশেষত আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত তরুন শ্রেনীর লোকদের কাছে এধরনের সংস্কার সবর্স্ব প্রথা উল্লেখযোগ্য হারে বাজার পাচ্ছেনা।

নতুন প্রাপ্তির শোকরিয়া, বাড়ীবান্ধা ও অন্যান্য বোধঃ

বিচিত্র সব বোধ বিশ্বাসে আকীর্ণ এই জনপদে আরো নানা প্রথা চালু রয়েছে। রয়েছে কোণ প্রাপ্তি বা কোনও দৈব- নিরাময়ের  কৃতজ্ঞতা প্রকাশের বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়া।কারো অসুখ বিসুখ হলে বা মৃত্যু ঘটলে মসজিদের মুসুল্লিদের বাতাসা জিলাপির মত মানত দিয়ে ঐহিক পারত্রিক কল্যান কামনা করে দোওয়া চাওয়া হয়।পরীক্ষায় পাশ করলে বা বিদেশ গমন নিশ্চিত হলেও এভাবে আর্শীবাদ কামনা কয়রা হয়।কারো নতুন গাছে নতুন কোন ফল ধরলেও বিশেষত আম কাঁঠাল শ্রেনীর ফল, তাহলে তার পুরোটাই অথবা অংশ বিশেষ মসজিদের মুসুল্লিদের খাওনানো হয়, এবং তাদের কাছ থেকে বৃক্ষে আরো ফলনের দোওয়া চাওইয়া হয় । কারো নতুন গাভী প্রথম বিয়ালে তার দুধ দিয়ে ক্ষীর রেঁধেও এভাবে মসজিদে খাওয়ানো হয়।ক্ষীর অবশ্য অন্য কোন গোপন উদ্দেশ্য সাধনের জন্যও খাওয়ানো হয়। আর এ ক্ষীর পরিবেশনেরও একটা দৃষ্টিনন্দন প্রক্রিয়া রয়েছে। যা সম্ভবত এ এলাকার একান্তই নিজস্ব আঙ্গিকে ঋদ্ধ। যেমন-কয়েকটি কাদি(বড় ডেগ) ভরে ক্ষীর নিয়ে যাওয়া হয় মসজিদে। সাথে নেওয়া হয় কলার বরগ (কলাপাতার মাঝারি আকারের টুকরো) আর সেই বরগ জুমার নামাজের শেষে মসজিদের বাইরের চত্বরে মুসুল্লিদের সারি বেধে বসিয়ে সামনে বিছিয়ে দেওয়া হয়। সেই বরগ বা টুকরো কলা পাতার প্রাকৃতিক বাসনে চামচ দিয়ে বেড়ে দেওয়া হয়। আর সকলে এক যোগে তা খাওয়া হয়। এ ছোত খাট লোকউৎসবে শিশু মুসুল্লিরা বেশ আনন্দ পায়।

জ্বীন ভূতের ‘আচর’ বা চোর ছেঁচড়াদের উপদ্রব হতে বাড়ি য় বাড়ির লোকদের কে সুরক্ষা দিতে বাড়ি বান্ধার নিয়মও রয়েছে এই এলাকায় ।এসব কাজে দক্ষ কবিরাজ বা ওঝা চারটি পেরেক বা গজালে দোওয়া কালাম বা মন্ত্র ফুঁকে সেগুল বাড়ির চতুঃসীমায় লোকচক্ষুর আড়ালে প্রোথিত করে। এটাকে বাড়ি বান্ধা বলে। এই বাড়ি বান্ধায় নাকি বাড়ির লোকজন যাদু টোনা বা জ্বীন ভূতের উপদ্রব থেকে নিরাপদ থাকে।

প্রার্থনালয় বা তীর্থকেন্দ্রিক ধন্বন্তরীঃ

মসজিদকেন্দ্রিক ধন্বন্তরীর প্রচলন রয়েছে এই এলাকায়।এর একটা হচ্ছে কারো কোণ অসুখ হলে, তা ছোট ক্ষাট হোক বা গুরুতর রুপলাভ করুক  তা নিরাময়ে মুসুল্লিদের ফুঁক দেওয়া পানি খাওয়ানোর প্রথা।রোগীর কোণ বাড়ির লোক গ্লাস ভর্তি পানি নিয়ে জুমার নামাজের পর মসজিদ দাঁরে দাঁড়িয়ে পড়ে। আর একে একে মুসুল্লিরা বেড়িয়ে আসতে থাকলে যে যা দোওয়া কালাম জানে, তাই ঠোঁট নাড়িয়ে মনে মনে আওড়ে তাতে ফুঁক দেয়।পরে সে ফুঁক দেওয়া পানি রোগীকে খাওয়ানো হয়। এতে রোগী আদৌ ভাল হয় কিনা অথবা শ্বাস প্রয়োগে অন্য কোনয় দুরারোগ্য ব্যাধির সংক্রমন ঘটে কিনা এটা ভেবে দেখার মত অবকাশ বা দুরদর্শিতা কারো মধ্যেই উদয় হয়না।

গোপন উদ্দেশ্য সিদ্ধি বা বালা মসিবত দুরীকরন মানসে মসজিদ মন্দিরে মোমবাতি দান, আগর বাতি জ্বালানো, দেবালয়ে ধুপধুনো দেওয়ার প্রথাও এ অঞ্চলে যেমন দেখা যায়,তেমনি দেখা যায় কোন কোন উপাস্য মূর্তির শিরে পদে ফুল চন্দন বা ভেট বেগার তর্পন করতে।উদাহরন স্বরুপ বলা যায়-হোসেনপুরের ‘বংশীবলদের’ কথা। ভক্তরা সুপ্তবাসনা সাধনে  এটির মস্তকে মাঝে মধ্যেই  দুধ ঢেলে মনবাঞ্ছা পূরনে প্রয়াস চালায়।সনাতন জনগোষ্ঠীর ভক্তদের এ ধরনের চর্চা হয়ত কিছুটা ধর্ম বিশ্বাস, আর কিছুটা লোক বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল।

এই শুধু নয় হিন্দু মুসলিম্ম নির্বিশেষে অঞ্চল বিশেষে কিছু লোকের মাঝে আরো অদ্ভুত কান্ডও দেখা যায়। উদাহরনস্বরুপ বলা যায়-কটিয়াদী উপজেলার ফুলদি গ্রামের ‘চুনের দরগা’র কথা। গ্রাম্য রাস্তার পাশে এক শেঁওড়া গাছের গোঁড়ায় লোকে পোটলার পোটলা চুন নিবেদন করে রেখেছে।এর বিস্তৃতি এখন নির্দিষ্ট গাছটি ছাড়িয়ে আরো ক্লিছু গাছ অবধি ছড়িয়েছে। গোপন ইচ্ছার পরিপূরনে এ ধরনের চুন উৎর্সগীকরন বাংলার আরো কোথাও আছে কিনা বলা বাহুল্য।

এ অঞ্চলের বোধ বিশ্বাসে আরো রয়েছে ইদুঁদের গর্তে দাঁত ফেললে ইদুঁরের মতো শক্ত ও মসৃন দাঁত উঠে। এজন্য শিশুদের দুধ দাঁত পড়লে কোননা কোন ইদুঁদের মেটে গর্তে ফেলে।সনাতনধর্মীদের মাঝে বিশেষ ভাবে মহিলা অনেকের বিশ্বাস-শ্বেত চন্দন বেটে খাওয়ালে পোয়াতি মায়েদের পূর্নিমার চাঁদের মতো সুন্দর সন্তান ভুমিষ্ট হবে। এরা আরো বিশ্বাস করেন-গর্ভে সন্তান ধারন করে প্রতিমা দর্শন করলে প্রতিমার ম্মতো কোমলাঙ্গী ও ফুটফুটে সন্তান জন্ম নিবে। গ্রামীন ললনাদের বিশ্বাস আষাঢ় মাসে ‘হাছুনে’ বসে কিশোরী মেয়েদের চুল ছেঁটে দিলে বা বেঁছে দিলে ঘন কালো লম্বা চুল উঠবে। ছন বা উলু কিংবা নারকেল শাখার শলকা দিয়ে তৈরী ঝাড়ুর সাথে চুলের বাড়া কমার সম্পর্ক কি, লোকে তা নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নয়, যুক্তি বুদ্ধি ছাড়াই তারা তা বিশ্বাস করে।

পূর্ববর্তী পর্বঃ

কিশোরগঞ্জের লোকজপ্রথা, বোধ, বিশ্বাস
প্রেমাচর,বর-কনে দেখা এবং বিয়ে পর্ব
বদনজর, তুক তাক এবং অদ্ভূতুড়ে সব বিশ্বাস

গবেষনা ও পান্ডুলিপিঃ রফিকুল হক আখন্দ