এই জেলার প্রায় সব জায়গাতে প্রচলিত রয়েছে আরেক আজব বিশ্বাস – “ চোখ লাগা” অনেকেই বলে “বদনজর” লাগে, বিশেষত ভালো কিছুতে। যেমন কারো গাছের ভালো ফল, কারো জমির ভালো শস্য অথবা কারো গাভীর মোটাসোটা ওলান থাকলে বা বেশী পরিমান দুধ দিলে সেগুলোতে নজর লাগে। ক্ষেতের শস্য বা গাছের ফলে “বদনজরি” লোকের “চোখ লাগলে” তা ঝরে যায়, মরে যায় বা কুঁকড়ে যায় বলে লোকের বিশ্বাস। তাই “কুনজরে” লোকের নজর থেকে ফল-শস্য বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট ক্ষেতে বা গাছে আংশিক ভাংগা রান্নার কালিযুক্ত মেটে হাড়ি বেঁধে রাখা হয়। সে হাড়িতে সাদা চুন দিয়ে বড় বড় করে গোলাকৃতির অনেক গুলো চোখের আদল অংকিত থাকে। সাথে পুরনো “হাছুন” বা “পিছা” (ঘরের ভিতর পরিস্কারের জন্য উলু বা ছনের তৈরী ঝাড়ু ) এতে নাকি “নজর লাগা” ফিরে। আবার গাভীর উলান কে “বদনজর” থেকে ফেরাতে ছোট কাঁটাযুক্ত মান্দার গাছের টুকরো টুকরো ডালা দিয়ে মালা বানিয়ে গাভীর গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়। অথবা স্থানীয় “পরহেজগার” হুজুরের “পানিপড়া” অথবা ইসিম পড়ে ফুঁক দেওয়া অনেকগুলো গিটঠু যুক্ত দড়ির মালা পরানো হয় ।
এই ‘নজর লাগা’ নিয়ে অনেক গুলো মজার মজার কথাও প্রচলিত আছে , জেলার কোথাও কোথাও। উদাহারনে বলা যায়, পাকুন্দিয়ার পুটিয়া এলাকায় নাকি “মরুলা” নামে জৈনিক ব্যাক্তি ছিলো, যার নজর ছিলো সাংঘাতিক বিপজ্জনক । কোন এক গৃহস্তের “নাইল্লা” (পাট) ক্ষেতে না কি বেপরোয়া ‘ভেদাইল্যা (এক প্রকার আগাছা) ছিলো। কামলা দিয়ে পোষাবেনা ভেবে লোকটি “মরুলা” কে নিয়ে এলো, “বদনজর” দিয়ে ভাদাইল্যা মারতে। মরুলা এসে নাকি বলল, ‘ভেদাইল্যা কিছু বাইচ্ছা দেও – দেখবা, নাইল্লার চারা গুলান লকলকায়া বাইরা উঠছে’। এই কথা কয়টা বলে মরুলা যেই মাত্র ঐ ক্ষেতের আইল ত্যাগ করেছে, অমনি নাকি ভেদাইল্যা দূরে থাক, নাইল্লা গাছই সব ঝিমিয়ে পরতে শুরু করেছে । দিন পার হওয়ার আগেই সকল পাট গাছ মরে লুটিয়ে পড়েছে। গল্প আরো আছে। “মরুলা”র কোনো এক ভাবীর সুদৌল-উন্নত কুঁচযুগলো নাকি একবার তার “বদনজরে” পড়ে ফেটে গিয়েছিলো। বদপ্রকৃতির লোকের ‘বদনজর’ থেকে মাচার লাউ, সীম ইত্যাদি বাচাঁতে লোকে কোরবানীর গরুর পরিত্যাক্ত চোয়াল টানিয়ে রাখে। এতেও নাকি ‘চঊক-খাওরা’ মানুষের চোখ লাগা ফিরে।
অনেক বাড়ির ডাবগাছের ডাব অনেক সময় অহেতুক পড়ে যায়। কিংবা নতুন ফলন্ত কাঁঠালের গতর ও ফেটে যায়। ফলের এ ধরনের সৃষ্ট সমস্যার আশু সমাধানে কোন পীরের ‘পানিপড়া’ গাছের গোঁড়া ও ফলে ছিটিয়ে দেওয়া হয়। অথবা কোন ক্ষতি হওয়ার আগেই প্রথম ফলটি পীরকে অথবা মসজিদের মুসল্লিদের অথবা মাঝারে দান করার মানত করা হয় । নানা গোপন ইচ্ছা পূরন বা ইষ্ট সিদ্ধির জন্য কোন বিশেষ মাঝার বা মসজিদের দ্বারস্ত হওয়ার বা বহিরাঙ্গিক বস্তুগত ব্যবহারের প্রবণতাও এ এলাকায় লক্ষ্য করা যায়। এ প্রসঙ্গে কটিয়াদী উপজেলার কুড়িখাই শাহ শামসুদ্দিন বোখারির মাঝার অথবা কিশোরগঞ্জ শহরস্ত পাগলা মসজিদের কথা বলা যায়। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে অন্ধবিশ্বাসী লোকে এসব স্থানের চত্ত্বরে নিজ সন্তানদের গড়াগড়ি খাওয়ায় বা ইমারতের গায়ে লেগে থাকা ধূলীবালি নিয়ে নিজেদের বা শিশুদের গায়ে মেখে দেয়। এধরনের অভ্যাস বা বদভ্যাস জেলার আরো কোনো কোনো মাঝার, মসজিদ বা মন্ডপ-আখরার বেলায় ও লক্ষ করা যায়। এতে কোন উপকার সাধিত হয় কিনা তা ব্যবহারকারী লোকেরাই বলতে পারবে ভালো।
এতো গেলো ধর্মীয় স্থানের কথা। বৃষ্টি নিয়েও আছে আজব আজব বিশ্বাস। বৈশাখ বা শ্রাবণ মাসে বিকট আকারের শব্দ সহযোগে বজ্রবাত ঘটলে, পতিত স্থানে নাকি তামা, দস্তা, বা পাথরের টুকরা পাওয়া যায়। বছরের কোন কোন সময়ে নাকি “চন্দন মেঘ” (স্থানীয় লোকের বৃষ্টিকেই মেঘ বলে) হয়। আর সেই বৃষ্টির ফোঁটা থাকে খুবই দূর্লভ ও অদৃশ্য প্রায়। যে সৌভাগ্যবানের শরীরে এটি পড়ে , সে নাকি রাজা বাদশা হয়। অথবা নিদেন পক্ষে বিপুল বিত্তশালী, অপূর্ব দেহকান্তির অধিকারী অথবা কেঊকেটা গোছের হয়। প্রাণীর মধ্যে হরিণের দেহে পড়লে নাভী মূলে কস্তরী আর গরুর দেহে পড়লে তার নাভিতে গোচেনা হয়। চন্দন মেঘের ফোঁটা সাপের গতরে পড়লে তার মাথায় “মনি” হয়, আর ব্যাঙ্গের মাথায় পড়লে “লাল” হয়।
প্রবল বর্ষন মুখর রাতে মাঝে মধ্যেই “ব্যাঙের লাল” (অতি মূল্যবান বস্তু বলে কল্পিত, যা চন্দন মেঘ বর্ষিত ব্যাংঙের মধ্যে থাকে ) দেখা যায়। ওটা সরাসরি আনতে গেলে ঐ ব্যাঙ ঘতঘত করে তেড়ে আসে। ক্ষিপ্ত ব্যাঙ যদি কাঊকে কামড়ে বসে তাহলেই সর্বনাশ ! দংশিত ব্যাক্তি আর বাঁচে না , তৎক্ষনাৎ মারা যায়।
আর ব্যাঙ কে যদি দূর থেকে ঢিল মারে বা লম্বা কাঠি দিয়ে খুঁচা মারে মারে কেউ , তাহলে সে “লাল” গিলে ফেলে তখন আর সেটি খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই ব্যাঙের লাল সংগ্রহ করতে হলে , সে যখন উগরে রেখে কাছেই কোথাও খাবার খুঁজতে যায়, তখনি অতি দ্রুততার সাথে একগাদা ছাই বা কাঁচা গোবর লালের উপরে ফেলে দিতে হয়। ওটা এমন ভাবে ঢাকতে হয় যাতে ব্যাঙ ফিরে এসে তার লালের খুঁজে না পেয়ে পাগলের মত হয়রান হয়ে মারা যায়। পরদিন সকালে সেই “লাল” সংগ্রহ করে নিতে হয়।
এই “লাল” যে একবার পায়, সে অর্থ সম্পদের ফুলে ফেঁপে একে বারে লালে লাল হয়ে যায়। এ ধরনের মহা মূল্যবান বস্তু কেউ কোন কালে পেয়েছে কিনা , তা এখনো প্রমান সাপেক্ষ ব্যাপার বটে।
আরো আছে মজার কাহীনি –
অনেক পুড়া বাড়ি বা পুরনো ভিটেতে নাকি “টেহার ডেগ”(টাকার ডেকচি) পাওয়া যায় কখনো সখনো । একমাত্র ভাগ্যবানরাই পায় সেই ডেগের খুঁজ। এ ধরনের ডেগ জীবন্ত। হেঁটে বেড়ায় এখান থেকে সেখানে; অতি গোপনে। পাপী, অসৎ লোকেরা ধরতে পারেনা তা। একদল জ্বীনেরা এসব টাকার ডেগ স্থান থেকে স্থানান্তর করে থাকে । একেবারে গোপন স্থানে লুকিয়ে রাখা হয়। অনেকে নাকি সে ধরনের ডেগের কান্দিতে “ছেনী” দিয়া বাড়িও দিয়েছে, কিন্তু অল্পের জন্য ধরতে পারেনি। বরং বেয়াদবীর কারনে “পুরী-নিপুরী” (বংশ – নি:র্বংশ ) হয়ে গেছে । আর অনেক নিঃশ্ব পূন্যবানই এ ধরনের গুপ্ত ধনের খোঁজ পেয়ে চিরদিনের জন্য বড়লোক বনে গেছেন। কিন্তু কেউ বলে না সেই সব রহস্যের প্রকৃত কথা। এর সত্যতাও আজতক রহস্যাবৃত্তই থেকে গেছে। তবে লোকেদের কেউ কেউ এখনো এসব বিশ্বাস করে।
এবারের প্রসংগ গ্রহন, মানে চন্দ্র গ্রহন বা সূর্য গ্রহন – সুরুজ গন্না (সূর্য গ্রহন), চান গন্না (চন্দ্র গ্রহন)-র সময় গর্ভবতী মায়েদের কোন কিছু খেতে দেয়া হয়না। এতে নাকি গর্ভাস্থ সন্তানের ক্ষতি হয়। তাদের এই পোয়াতী সময়ে শাক সবজি কাটতে কিংবা মাছ কুটতে দেয়া হয়না। এ ধরনের কাটাকুটি করলে নাকি পেটের সন্তান বিকলাঙ্গ হতে পারে। বিশেষত নাক কাটা, ঠোঁট কাটা, বাইশ আঙ্গুইল্লা, তেইশ আঙ্গুইল্লা, বা কম আঙ্গুইল্লা হয়ে জন্ম নেবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। গ্রহনের মতো প্রাকৃতিক কার্যক্রমে সন্তান ভূমিষ্ঠের আদৌ কোন সম্পর্ক আছে কি নেই, তা চিকিৎসকরা অথবা জৌতির্বিদরাই বলতে পারবেন ভালো।
পাখি নিয়েও এ এলাকায় নানা লোক বিশ্বাস রয়েছে। কুটুম পাখি “ইষ্টিকুটুম” ইষ্টিকুটুম কুটুম করে ডাকলে নাকি বাড়িতে কুটুম বা আত্মীয় বা মেহমান আসে। অন্যদিকে “চৈতার বউ” পাখি নাকি ডাকে আর বলে –
“ চৈতার বউগো, টেহা দেঊগো, টেহা কেরে? অজ যাইতাম। অজ কেরে? অজ কামাইতাম”
এ চৈতার বৌ কারো বাড়িতে ডাকলে নাকি , সেই বাড়ির বড় কর্তা অনেক টাকা পয়সার মালিক হয়। অর্থবিত্ত হলে বাড়ির বয়োজেষ্ঠ্য লোক নাকি “অজ” মানে হজ্জ্বে যেতে পারে। এই হজ্জ সংক্রান্ত আরো একটি লোককথা বেশ মজাদার। পূর্বে কিছু এলাকার বা কিছু জেলার লোক জানত, শোলাকিয়া মাঠে পর পর তিন বার ঈদের জামাতে নামাজ পড়তে পারলে এক হজ্জ্বের সোয়াব হয়। যদিও এ ধারনার সাথে ধর্মীয় বিধি-বিধানের কোনও সম্পর্কই নেই।
পাখি নিয়ে এখানকার গ্রামীন এলাকায় আরো কিছু সংস্কার চালু আছে। কাউয়া (কাক) আর পেঁচাকে আশুভ প্রতীক মনে করা হয়। বাড়ির কোথাও, বিশেষ করে বাঁশ ঝাড়ে সন্ধ্যা বেলায় কাক বা পেঁচায় ডাকলে, বাড়ির মহিলারা অজানা আশংকায় শংকিত হয়ে উঠেন । কাকে ডাকলেই তারা বলে উঠেন “ কাউয়ারে রে কাওয়া আল্লার নাম ল” । আর পেঁচায় ডাকলে বাড়ির মাঝ বয়সী বা কিশোর ছেলেদের বলা হয় – “চাক্কা” (ঢিল) মেরে যেন ঐ “অলক্ষীডারে” তাড়ায়ে দিতে। এই সব গ্রামীন মহিলাদের দৃঢ় বিশ্বাস ঐ সকল পেঁচারা জাতের ডাক পাড়তে পারে। এসব “কুপক্ষীর” ডাকে যাতে আঁতুর ঘরের শিশুর কোন ক্ষতি করতে না পারে, সে জন্য “ধূপ সর্ষে জ্বালিয়ে রাখা হয়। ধূপ- সর্ষে পোড়াধোঁইয়া নাকি বাড়ির চতুর্পাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়লে পেঁচারুপী শয়তান নবজাতক শিশু বা প্রসূতি মায়ের কোন ক্ষতি করতে পারে না।
কোন কোন মায়ের পরপর এক বা একাধিক সন্তানের আঁতুর ঘরেই মৃত্যু হয়। যদি এরুপ মৃত্যুত্তর কোন সন্তান বিশেষত ছেলে সন্তান জমের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বেঁচে যায়, তাহলে তাকে “মল্লির ছেলে” বলা হয়ে থাকে। এ ধরনে ফাঁড়া সর্বস্ব সন্তান কে আসন্ন বিপদ থেকে বাঁচাতে সকল বালা মসিবত থেকে নিরাপদ রাখতে , বাড়ির প্রায় সকলেই চোখে চোখে রাখে। সচরাচর জলাশয় বা পুকুরের দিকে যেতে দেয়া হয়না। তাকে অধিকতর নিরাপদ রাখতে “মল্লির ছেলের” গলায় মল্লি গোটা (এক ধরনের হলুদাভ ফুল গাছের ধূসর রঙ্গা বিচি) ফুটো করে কয়তন বা কালো সুতো দিয়ে গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়। ইঞ্চি খানেক এই জড় বস্তুটি “মল্লির ছেলে” কে বিপদাপদ থেকে রক্ষার কী যোগ্যতা রাখে, এ প্রশ্ন অবান্তর । কারন, বিশ্বাসীরা এ যুক্তি মানতে খুব একটা উৎসাহিত নয়।
গাছের বিচি নিয়ে কৌতুকপ্রদ বিষয় প্রচলিত আছে। “কানাইডিঙ্গা” নামে এক প্রকার জংলী বনজ বৃক্ষের বিচি আছে যার মূল বিচির চাইতে তার বাহক আবরন টি বেশ শক্ত। প্রায় হাত দেড়েক লম্বা। মাঝে মধ্যেই গাছে শুকিয়ে পথে পড়ে থাকে। কেউ ভূলেও তা বাড়িতে আনেনা। কারন “কানাইডিঙ্গা” বাড়িতে আললে নাকি বাড়ির বৌ-ঝিয়েরা ভয়ানক ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। সহজেই তা থামানো দায় হয়ে পড়ে। এই বন্য বিচির কেন এত শত্রুতা বাড়ির বৌ ঝি দের প্রতি কিংবা তার গোপন শক্তির উৎসই বা কি তা বলা মুশকিল বৈ কি।
গাছের বিচি যে কেবল ঝগড়া-ঝাঁটিই বাধায় , তা নয়; অনেক ক্ষেত্র ঝুটি বাঁধতে ও ভূমিকা রাখে। বিচির নাম “ঘিলা গোটা” এটা অবশ্য যত্রতত্র পাওয়া যায়না, কেবল মাত্র পাওয়া যায় “বানিয়া” বানিয়াতির দোকানে।
চেপ্টা, গোলাকৃতির শুকনো ধূসর রঙ্গা এই বিচি বর-কনেকে বিয়ে পূর্ব গোসলের আগে হলুদ শর্ষে পেষার সাথে গায়ে মাখানো হয়। শুধু এ ধরনের বরযাত্রা বা কনে যাত্রাই নয়, জীবনের অন্তিম যাত্রায় ও এর সুকরুন ব্যবহার হয়। আবার সর্ষের বিচিরও ব্যপক ব্যবহার লক্ষ করা যায় – বিয়ের পূর্বে গোসল কিংবা খৎনা পূর্বক গোসলের সময় তাছাড়া ও বর-কনে বিংবা ছেলেদের খৎনা পূর্ব গোসলের সময় হাতের কব্জিতে “কাঙ্গেনা” বা “লগন” বেঁধে দেয়া হয়, এক চিমটি শর্ষে পুটুলি বেঁধে।
শুধু গাছ-জাত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নয়, আগাছা বা গুল্মের ও নানাবিধ ব্যবহার রয়েছে। গৃহপালিত গাভি যাতে বেশি দুধ দেয়, এজন্য “খুইরা কাঁটার” গাছ অর্ধকুটা করে খুদের (ভাংগা চাওলের) সাথে জাউ রেঁধে গাভিকে খেতে দেওয়া হয়। এতে নাকি গাইয়ের দুধ বাড়ে। চঞ্চল প্রকৃতির যেসব কোলের শিশুরা ঘুমুতে চায় না, তাদের “ভেদাইল্লা মুথা” ছেচে খাওয়ানো হয়। এতে নাকি লাইগ লাগে (নেশা জমে); পরে সে ঘুমিয়ে পড়ে। আবার দুই বছরের অধিক কিছু শিশুদের মাতৃদুগ্ধ খেতে মাকে বিরক্ত করে বারবার দুগ্ধ প্রদানের অত্যাচার থেকে মায়েরা রেহায় পেতে ও শিশুকে দুধ ছাড়াতে মাতৃস্তনের ডগায় ভালো করে তিতা মেন্দির রস মাখিয়ে দেয়া হয়। ওই তিক্তসিক্ত স্তনাগ্র আর শিশু মুখে নেয়না, মা ও সাময়িক স্বস্থি পান।
এবারে অন্য প্রসঙ্গ । এই এলাকায় প্রচলিত লোক কথায় রয়েছে, বাংলাদেশের উত্তর পূর্ব সীমান্তের বৃহত্তর সিলেট ও ওপারে আসাম অঞ্চলে নাকি উঁচা উঁচা পাহাড় থেকে “আবের দৈত্য” নেমে আসে। যেগুলো সিলেট সুনামগঞ্জের টিলা এলাকার গাছগাছালির সব পাতা নাকি খেয়ে ফেলে। ফারসি “আব” মানে পানি । আকাশে মেঘেও পানি জমাট বাঁধা থাকে । সীমান্ত সীমান্তবর্তী বৃষ্টি বহুল চেরাপুঞ্জি বা শিলং এলাকার অতি বর্ষণ ও ঝড় ঝঞ্ঝাট অবস্থার কারনেই সম্ববত “আবের পাতা খাওয়া” কল্প কথার প্রচলন আছে।
বর্ষাকালে কিশোরগঞ্জের ভাটি এলাকার হাওরময় বিপুল বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলমগ্ন থাকে। সেখানে কখনো কখনো “জল ঘূর্ণি” দেখা যায়। প্রাকৃতিক কোন দৈব- দূর্বিপাকে কখনো কখনো প্রচুর জলরাশি কালো বর্ণ ধারন করে পাকিয়ে পাকিয়ে আকাশের দিকে ধাবমান হয়। লোকেরা তাকে “জলঁআতি” (জলহস্তী) বলে।
পূর্ববর্তী পর্বঃ
কিশোরগঞ্জের লোকজপ্রথা, বোধ, বিশ্বাস
প্রেমাচর,বর-কনে দেখা এবং বিয়ে পর্ব
গবেষনা ও পান্ডুলিপিঃ রফিকুল হক আখন্দ