কিশোরগঞ্জ শহরের তারাপাশা ছোট সেতু এলাকায় নরসুন্দার জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাট, কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা নদীর আরও প্রায় পাঁচ একর জমি ভরাট ও বেদখল হয়ে গেছে গত এক মাসে। জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী নরসুন্দা হোসেনপুর উপজেলার কাউনা এলাকা থেকে শুরু হয়ে কিশোরগঞ্জের মধ্য দিয়ে জেলার পূর্ব দিকে ইটনার চৌগঙ্গায় ধনু নদীতে গিয়ে মিশেছে। নদীর ৩০ একর জমি আগেই দখল হয়ে গেছে। এর বেশির ভাগই সদর উপজেলায় পড়েছে। গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, তারাপাশা মানপুরি ঘাট এলাকায় আরজত আতরজান উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে এবং আবদুল কুদ্দুছ হোমিওপ্যাথিক কলেজের সামনে নরসুন্দা নদীর পুরো অংশ মাটি ভরাট করা হয়েছে। নদীর প্রায় ১৫০ শতাংশ এলাকা কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। রাস্তার পাশেই নদীর জায়গায় একটি ঘর তোলা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে এই মাটি ভরাট ও কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছেন স্থানীয় ইয়াহিয়া মিয়া ও আফজাল।

শহরের প্রাণকেন্দ্র গৌরাঙ্গ বাজারে জ্ঞানদা সুন্দরী ব্রিজ, স্টেশন সড়ক, ঈশা খাঁ সড়ক, বড় বাজার, বত্রিশ, একরামপুর, বয়লা, পাগলা মসজিদ, গুরুদয়াল কলেজ ও আখড়া বাজার এলাকায় দুই পারের বাসিন্দারা নদীর আরও প্রায় তিন একর জমি ভরাট করেছেন। এসব জায়গায় তোলা হয়েছে দোকানপাট ও ঘরবাড়ি। পৌর এলাকার পূর্ব দিকে নদীতে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে দুটি পুকুর। এ কারণে শহরের বড়বাজার কাটাখাল, মণিপুরি ঘাট, হারুয়ার পাগলা মসজিদ, পুরান থানা, একরামপুর, বয়লাসহ বিভিন্ন স্থানে নদীর চিহ্ন মুছে গেছে।

নরসুন্দা নদী রক্ষার দাবিতে ২০০৭ সালে কিশোরগঞ্জের তৎকালীন পৌর চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে দলমতনির্বিশেষে একাধিক মতবিনিময় সভা হয়। পরে সর্বসম্মতিক্রমে পৌর চেয়ারম্যান আবু তাহের মিয়াকে সমন্বয়ক করে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট ‘নরসুন্দা বাঁচাও কমিটি’ গঠন করা হয়। কমিটি বিভিন্ন সময় আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করে। পরে কমিটির কর্মকর্তা পরিবর্তন হয় ও আন্দোলন থেমে যায়।

পরিবেশ রক্ষা মঞ্চের (পরম) আহ্বায়ক শরীফ সাদী বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় একশ্রেণীর প্রভাবশালী নদীর জায়গা দখল করছে। এক মাসে শহর এলাকায় নদীর প্রায় পাঁচ কোটি টাকার কয়েক একর ভূমি দখল হয়ে গেছে। স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছে। নরসুন্দাকে নিয়ে এক দশক ধরে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়ার পরও প্রভাবশালীরা দাপটের সঙ্গে দখল করে যাচ্ছে।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘নরসুন্দা নদীর বেশির ভাগ অংশ দখল হয়ে গেছে। তবে নতুন করে নদীর ভূমি দখলের বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শহরের অংশসহ নরসুন্দা নদীর অবৈধ দখল ঠেকাতে সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। ভূমি অফিসের একার পক্ষে প্রভাবশালী দখলদারদের উচ্ছেদ করা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে একটি নাগরিক সভা ডেকে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নরসুন্দাকে বাঁচানো সম্ভব।’

সুত্রঃ প্রথম আলো