দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের মাঝে নববর্ষ হিসেবে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে পালিত হয়। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতির সার্বজনীন উৎসবগুলোর মধ্যে প্রধান। এ দিনে বাঙালি জাতি পুরোনো দিনের সব জরাজীর্ণতা দূর করে নতুনকে বরণ করে নেওয়ার অন্যরকম এক আনন্দে মেতে ওঠে। নতুন বছর উপলক্ষে নতুন নতুন হালখাতা খোলেন ব্যবসায়ীরা।

সম্রাট আকবরের সময় কৃষকদের কাছ থেকে কর আদায় করা হতো হিজরি সন অনুযায়ী। কিন্তু চন্দ্র বছর অনুসারে হিজরি সনের প্রথম দিন একেক বছর একেক সময়ে আসতো। এ কারণে অনেক সময় কৃষকদের ফসলহীন মৌসুমেও কর দিতে হতো, যা তাদের জন্য বেশ কষ্টকর হয়ে পড়তো। সম্রাট আকবর এ সমস্যার সমাধান করার জন্য সে সময়ের বিশিষ্ট পণ্ডিত ফতেউল্লাহ সিরাজীকে একটা নতুন ক্যালেন্ডার তৈরির আদেশ দেন। ফতেউল্লাহ সিরাজী হিজরি ক্যালেন্ডার এবং চন্দ্র বছরের মধ্যে মিল রেখে ‘বাংলা বছর’ নামে এক নতুন ধরনের ক্যালেন্ডার তৈরি করেন। এই ‘বাংলা বছর’টি ‘ফসলি সন’ নামে ১৫৮৪ সালের মার্চ মাস থেকে চালু হয়।

সে সময়, মানে সম্রাট আকবরের আমল থেকেই বাংলা নতুন বছরের শুরুর দিনটি অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ উৎসবের আমেজে পালিত হয়ে আসছে। আর বছরের শেষ দিনটি অর্থাৎ চৈত্র মাসের মাসের শেষ দিনটি পালন করা হচ্ছে চৈত্রসংক্রান্তি হিসেবে। চৈত্রসংক্রান্তির দিনে হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা বিশেষ পূজাও পালন করে থাকেন। চৈত্রের শেষ দিনে সূর্য ডুবে যাবার আগেই পুরোনো বছরের সব হিসাব ও লেনদেন চুকিয়ে ফেলতে হয়। আর বছরের প্রথম দিন মহাজন ও ব্যবসায়ীরা তাদের ক্রেতাদের নিমন্ত্রণ করে মিষ্টিমুখ করানোর মাধ্যমে নতুন ব্যবসায়িক লেনদেন শুরু করতেন। এরই নাম ‘হালখাতা’।

পুরোনো এই ‘হালখাতা’র ঐতিহ্য এখন খুব কমই দেখা যায়। তবে পান্তা-ইলিশ খেতে ভুল করেন না অনেকেই। বাংলাদেশের সবচে বড় বর্ষবরণ উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর রমনার বটমূলে। এটি প্রায় ৫০ বছর ধরে আয়োজন করে আসছে দেশের একটি সেরা সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠান ছায়ানট।